রাফিকুর রহমান লালু, রাজশাহী
আইন করেও যখন বন্ধ করা যাচ্ছে না নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার। আর এই পলিথিন ব্যবহারের কারণে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। এমন পরিস্থিতিতে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ভুট্টার স্টার্চ থেকে রাজশাহীতে তৈরি হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব পলিব্যাগ। রাজশাহীর তরুণ উদ্যোক্তা ইফতেখারুল হক পচনশীল এই পলিব্যাগ তৈরি করে দেশ-বিদেশে রপ্তানি সহ বাজার জাত শুরু করেছেন।
জৈব উপাদানে তৈরি এই পলিব্যাগ গুলো সাড়া ফেলতে শুরু করেছে স্থানীয় বাজারে। রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। তবে আইন ভঙ্গ করে পলিথিন ব্যাগের সহজলভ্যতা এবং অবাধ ব্যবহারে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে কি এই শিল্পটি এ নিয়ে রয়েছে বেশ শঙ্কা।
এসব বিষয়ে কথা হয় তরুণ উদ্যোক্তা ইফতেখারুল হকের সাথে। তিনি জানিয়েছেন, ব্যবসার পাশাপাশি দীর্ঘদিন পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে কাজ করায়-ক্ষতিকর পলিথিনের বিকল্প কী হতে পারে তা নিয়ে কাজ শুরু করি। খুঁজে পাই জৈব উপাদানের তৈরি কাঁচামাল ব্যবহারে পলিথিন ব্যাগের বিকল্প পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ তৈরির কৌশল।
তিনি আরও জানান, ২০২২ সালের দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাপাল এলাকায় গড়ে তোলেন ক্রিস্টাল বায়োটেক নামের, পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ তৈরির প্রতিষ্ঠান।
ইফতেখারুল হকের কারখানায় পলিথিনের বিকল্প যে ব্যাগ গুলো তৈরি হয়, তার কাঁচামাল তৈরি হয় ভুট্টা থেকে। পলিথিন ব্যাগের চেয়ে বেশি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং টেকসই। আর ব্যাগ গুলোর কাঁচামাল জৈব পদার্থ হওয়ায় দ্রুত মাটিতে মিশে যায়, ফলে পরিবেশ দূষণ হওয়ার কোন উপায় নেই।
বিভিন্ন সাইজের প্রতি পিস ব্যাগ সাড়ে ৪ টাকা থেকে শুরু করে ১০ টাকা মূল্যের ব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। রাজশাহীতে প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ডোর টু ডোর গিয়ে এই পলিথিন সম্পর্কে অবগত করা হচ্ছে। যারা পরিবেশ নিয়ে চিন্তা করে এবং সচেতন তারা সহজেই বিষয়টি বুঝে এই পণ্য সম্পর্কে পজিটিভ ধারণা নিয়ে ব্যাগ গুলো নিচ্ছে এবং ব্যবহার করছে। এই ব্যাগ গুলো ব্যাপকভাবে বাজার দখল না করতে পারলেও প্রাথমিকভাবে রাজশাহীতে প্রায় ১০-১২ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত সরবরাহ করা হচ্ছে।
বড় বাজার ধরতে করণীয় সম্পর্কে উদ্যোক্তা ইফতেখারুল হক বলেন, স্থানীয় বাজারে পরিবেশ বান্ধব এই ব্যাগ গুলোর চাহিদা বাড়ছে। জনগণ অতি সুলভ মূল্যে বা ফ্রিতে বাজারে পলিথিন পাচ্ছে। আবার ভোক্তা পর্যায়ের যারা ব্যবসায়ী যেমন- মুদি দোকানদার, সবজি বাজার, মাছের বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সর্ব শ্রেণির ব্যবসায়ীরা যদি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং আইনে নিষিদ্ধ বাজারে প্রচলিত পলিথিন সম্পর্কে সচেতন হয়ে সেগুলো পরিহার করে পরিবেশ বান্ধন পলিথিনে নজর দেয় তাহলে বড় বাজার ধরা সম্ভব এবং ভবিষ্যতে এই শিল্পের বিকাশ অনেক বড় হবে।
আবার সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিনের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পরিবেশ বান্ধব পলিথিনের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে উদ্যোগ গ্রহণ করে তবেই এর বড় বাজার পাওয়া সম্ভব হবে। ফলে অর্থনৈতিক ভাবে এই শিল্পের ব্যাপক বিকাশ হবে। এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারী সহায়তা চান এই উদ্যোক্তা।
তিনি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও শুরু হয়েছে রপ্তানি। তবে দেশে এর কাঁচামাল তৈরির ব্যবস্থা না থাকায় তা আমদানি করায় বাড়ছে এর উৎপাদন ব্যয়।
এই বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, পরিবেশ বান্ধব এই পলিথিনের বাজারজাত করণ বা প্রচার প্রচারণার জন্য যে পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন সেটা জেলা প্রশাসন করবে। অবৈধ পলিথিনের বাজারজাত যাতে না হতে পারে সেটি লক্ষ্য রাখবো। পাশাপাশি অফিসিয়াল কাজে যত ধরনের পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো পরিহার করে এই পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করবো। এক কথায় এই তরুণ উদ্যোক্তার যে উদ্যোগ রয়েছে এর পৃষ্ঠপোষকতা রাজশাহী জেলা প্রশাসন করবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড