শাশুড়ির নির্যাতনে অবুঝ সন্তানকে নিয়ে প্রাণ দিলেন গৃহবধূ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের শম্ভুপুরে শাশুড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। নিহত গৃহবধূর নাম জোনাকি আক্তার (৩৫) ও তার সাড়ে তিন বছর বয়সী শিশু সন্তানের নাম আলিফ।

উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর পাক্কার মাথা এলাকায় (১৫ মে) সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত জোনাকি আক্তার ইতালি প্রবাসী ফরহাদ মিয়া স্ত্রী ও আলিফ তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান ছিল।

অবুঝ শিশু সন্তানসহ মায়ের এমন মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এছাড়াও ঘটনার পর শাশুড়ি ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।

জানা গেছে, প্রায় ৬ বছর আগে পারিবারিক সম্মতিতে উপজেলার কালিকাপ্রসাদ গ্রামের রইছ বাবুর্চির মেয়ে জোনাকি আক্তারকে শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর পাক্কার মাথা এলাকার ইতালি প্রবাসী ফারুক মিয়া ছেলে ফরহাদ মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই সংসারে অশান্তি শুরু হয়।

নিহত জোনাকি আক্তারের স্বজনদের দাবি, শাশুড়ি বেবী বেগম বিভিন্ন সময় জোনাকি আক্তারকে গরিব পরিবারের মেয়ে বলে উপহাস করতো। এছাড়াও প্রথম দিকে স্বামী ফরহাদ মিয়া স্ত্রী জোনাকি আক্তারের কথা শুনলেও পরে মায়ের কথায় বেশি সায় দেন।

এমনকি বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক আনতে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করে আসছে তারা। ফলে দুশ্চিন্তায় ও যন্ত্রণায় ভুগছিল জোনাকি। এছাড়াও ফরহাদ নিহত জোনাকির বিয়ের আগেও আরেকটি বিয়ে করে বলে নিহত জোনাকির পরিবারের লোকজন জানতে পারেন। শাশুড়ির অত্যাচারে সেই স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যায়।

নিহতের স্বজনরা আরও জানায়, গতকাল রাতেও মুঠোফোনে শাশুড়ির নির্যাতনের বিষয়টি জানিয়েছিল জোনাকি। এমনকি সন্তানসহ তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় বলেও জানায় সে। তাদের ধারণা শাশুড়ি ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে মেরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আজ সকালে ঘরের দরজা না খোলায় সন্দেহ হওয়ায় দরজা ভেঙে দেখেন এক রশিতে শিশু সন্তান ও অন্য রশিতে মা ঝুলছে। পরে স্বজনরা তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মা ও সন্তানকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে পুলিশ দু’জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম মোল্লা বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি আত্মহত্যা ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, ঘটনার পর থেকে শাশুড়ি ও তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছেন।

উল্লেখ্য, লিখিত অভিযোগে ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।