• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

খাসজমি দখল করে যুবলীগ নেতার অবৈধ কারবার, ঝুঁকিতে সংযোগ সেতু

  কাজী শাহরিয়ার রুবেল, আমতলী (বরগুনা)

১৫ মে ২০২৩, ১৪:৩৬
খাসজমি দখল করে যুবলীগ নেতার অবৈধ কারবার, ঝুঁকিতে সংযোগ সেতু

বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের ডাক্তারবাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে সরকারি খাসজমি ও সড়কের দুই পাশ দখল করে বালু ও ইটের খোয়া বিক্রির ব্যবসা করছে এক যুবলীগ নেতা ও স্থানীয় একটি অসাধু চক্র।

এতে খেকুয়ানী বাজার থেকে ডাক্তারবাড়ি পর্যন্ত সড়কটিতে বড়-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলে সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ও ঝুঁকিতে পড়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুই ইউনিয়নের সংযোগকারী খেকুয়ানী বাজার সংলগ্ন লোহার সেতুটি।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন- খেকুয়ানী বাজার সংলগ্ন চাওড়া নদীর উপর নির্মিত লোহার সেতুর পূর্বাংশের সংযোগ সড়কের দুই পাশ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চাওড়া নদীর চরের কয়েক শত ফুট জায়গা দখল করে সেখানে বালু ও ইটের খোয়া স্তূপ করে রাখায় প্রায়ই ওইখানে দুর্ঘটনা ঘটছে।

অন্য দিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে, অবৈধভাবে সরকারি খাসজমি ও সড়কের দুই পাশ দখল মুক্ত করতে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আমতলী উপজেলা গুলিশাখালী ইউনিয়নের খেকুয়ানী বাজার ও চাওড়া ইউনিয়নের ডাক্তারবাড়ি এলাকাকে সংযোগ স্থাপনের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে হালকা যান চলাচল প্রকল্পের আওতায় ২০০০-২০২১ অর্থ বছরে কোটি টাকা ব্যয়ে একটি লোহার সেতু নির্মাণ করেন।

ওই সেতুর দুই পারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও নারী (আলিম) মাদরাসা ও দুটি বাজার রয়েছে। ওই সেতুটি পার হয়ে দুই ইউনিয়নের মানুষজন ও শিক্ষার্থীরা যেমন চলাচল করে ও তেমনি তারা সড়কপথে যানবাহনে করে উপজেলা শহরে যাতায়াত করে থাকেন।

দীর্ঘ ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ওই সেতু সংলগ্ন এলাকায় পাউবো নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাহিরে চাওড়া নদীর চর (সরকারী খাসজমি) দখল করে বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে জমি ইজারা নেয়। কৌশলে ওই জমির সামনে থাকা চাওড়া নদীর চরের সরকারি খাসজমি অবৈধভাবে দখল করে সেখানে বালু ও ইটের খোয়া স্তূপ করে রেখে পরে তা বিক্রি করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন- আমতলী উপজেলা যুব লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তালেব গাজীর ছত্রছায়ায় স্থানীয় গোলাম মস্তফা হাওলাদার, নূর উদ্দিন, ইকবালসহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে অবৈধভাবে খেকুয়ানী বাজার লোহার সেতু সংলগ্ন চাওড়া নদীর চরের সরকারী খাসজমি ও সংযোগ সড়কের দুই পাশের দখল করে অবৈধভাবে বালু ও ইটের খোয়া স্তূপ করে রেখে বছরের পর বছর ব্যবসা করে আসছে।

তাড়া আরও বলেন, এতে খেকুয়ানী বাজার থেকে ডাক্তারবাড়ি পর্যন্ত পাকা সড়কটির দুই পাশ ভেঙ্গে সরু হয়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত ওইখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কটিতে বড়-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে বর্তমানে চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া খেকুয়ানী বাজার সংলগ্ন সেতু দিয়ে খোয়া ও বালু বোঝাই করে ট্রাক, পিকআপ ও ট্রলি চলাচল করার কারণে ওই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে একদিকে কাত হয়ে পড়েছে।

ওই বিষয়ে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক কবির শিকদার বলেন, সড়কে বালু রাখার কারণে বাইক চলাচলে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। যখন একটি গাড়ি আরেকটি গাড়িকে ওভারটেক করে, তখন আমাদের বালুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালাতে হয়। এতে প্রায়ই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। আমি নিজেও কয়েক দিন আগে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি।

পথচারী মো. সোহাগ মিয়া ও আমিন উদ্দিন বালিকা আলিম মাদরাসার শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসি বলেন, প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে আমাদের ওই সড়ক দিয়ে ও সেতু পার হয়ে চলাচল করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে ওই সড়কের খানাখন্দের মধ্যে পানি জমে থাকায় কোনভাবেই ওই সড়ক দিয়ে আমরা চলাচল করতে পারি না।

খেকুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শামিম জানান, খেকুয়ানী বাজার থেকে ডাক্তারবাড়ি পর্যন্ত সড়কটিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। ওই বালু ও খোয়ার স্তূপ এবং ভাঙ্গাচোরা সড়কই দুর্ঘটনা ঘটার একটি বড় কারণ। তিনি দ্রুত সড়কের দুই পাশ থেকে বালু অপসারণ ও ভাঙ্গা সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

ওই বালু মহালের বেশ কয়েকজন ট্রাক ও ট্রলি চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পায়রা (বুড়িশ্বর) নদী থেকে ড্রেজারে লোকাল বালু কেটে ও বিভিন্ন স্থান থেকে জাহাজে করে সিলিকা বালু ও খোয়া এনে এখানে স্তূপ করে। পরে মালিকরা তা অন্যত্র বিক্রি করলে আমরা ওই সড়ক দিয়ে ও সেতু পার হয়ে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেই।

অবৈধ খাসজমি দখলকারী বালু ব্যবসায়ী, গাজী ট্রেডার্সের মালিক ও যুবলীগ নেতা আবু তালেব গাজী মুঠোফোনে বলেন, আমি স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে কয়েক বছর ধরে ওইখানে বালু ও খোয়ার ব্যবসা করে আসছি।

খেকুয়ানী বাজার থেকে ডাক্তারবাড়ি পর্যন্ত সড়কটি যান চলাচলে অনুপযোগী ও সংযোগ সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, আমি ওইখানে এখন আর ব্যবসা করি না। সড়কের পাশের সরকারী খাসজমি দখল করে ব্যবসার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

গুলিশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, বিষয়টি একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এমনকি ওই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন (ট্রাক, পিকআপ, ট্রলি) চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলেও কোন কাজ হচ্ছে না। বালু ও ইট বিক্রির ব্যবসায়ীরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাদের মালামাল বোঝাই ভারী যানবাহনগুলো ওই সেতু দিয়ে পারাপার করছেন। এতে যেমন সড়কের অবস্থা বারোটা বাজানো হচ্ছে তেমনি যে কোন মুহূর্তে ওই ঝুঁকিপূর্ণ লোহার সেতুটি ভেঙ্গে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ওই বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, সড়কের দুই পাশে রাখা বালু ও ইটের খোয়ার স্তূপ অপসারণ, সড়ক সংস্কার ও সরকারি খাসজমি উদ্ধারে দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়া হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড