• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঘূর্ণিঝড় মোখার ঝুঁকিতে বাউফলের ৩০ হাজার মানুষ

  মো. আবুবকর মিল্টন, বাউফল (পটুয়াখালী)

১৪ মে ২০২৩, ১৬:৫৪
ঘূর্ণিঝড় মোখার ঝুঁকিতে বাউফলের ৩০ হাজার মানুষ

ঘূর্ণিঝড় সিডর, মহাসেন, সিত্রাং ও বুলবুলের আঘাতের ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বিচ্ছিন্ন ১৮টি চরাঞ্চলের মানুষ। বিগত ঘূর্ণিঝড়গুলোতে নদী বেষ্টিত এসব চরাঞ্চলের প্রাণহানিসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী ১৪ মে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এমন পূর্বাভাসে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এসব এলাকার মানুষের। এসব চরে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধ না থাকায় মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।

উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন নদী বেষ্টিত ইউনিয়ন চন্দ্রদ্বীপ। ছোট বড় ১১টি চর নিয়ে এ ইউনিয়ন গঠিত। যার একটির নাম চরব্যারেট। এ চরে প্রায় তিন হাজার মানুষ বসবাস করে।

ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসে এখনকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো আশ্রয় কেন্দ্র। শুধু চরব্যারেট নয়, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের, চর রায়হাসেব, চর উত্তর মিয়াজান, চরকিসমত, চর নিমদী, উত্তর দিয়ারা কচুয়া, চরওয়াডেলে নেই কোনো আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলা করেন এখানকার মানুষ। এতে প্রায়ই ঘটে হতাহতের ঘটনা।

চরব্যারেটের বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকে বলেছেন, চরব্যারেটে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। আর চরের চারপাশে নদী থাকায় আমরা দুরের কোনো আশ্রয় কেন্দ্র যেতেও পারি না। আবার ট্রলারের ব্যবস্থা থাকলে ঘরবাড়ি, গরু-মহিষ রেখে কেউ যেতে চায় না।

সাবেক ইউপি সদস্য মো. নাগর আলী হাওলাদার বলেন, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। আর চরব্যারেট চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চন্দ্রদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক আলকাছ বলেন, চন্দ্রদ্বীপে ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করে। সাইক্লোন সেল্টার আছে মাত্র৫টি। ঝুঁকিপূর্ণ ৬টি এলাকায় নেই কোনো আশ্রয় কেন্দ্র। আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার লিখিত আবেদন করেছি। কোনো কাজ হচ্ছে না।

এ দিকে উপজেলা ধুলিয়া ইউনিয়নের নদী বেষ্টিত বিচ্ছিন্ন এলাকা চর বাসুদেব পাশা। এ এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক মানুষ বসবাস করেন। এখানেও কোনো আশ্রয় কেন্দ্র। ঘূর্ণিঝড়ের সময় অনেকে ঘর বাড়ি ফেলে রেখে ধুলিয়া স্কুল এন্ড কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করেন। তবে অনেকে ঘর বাড়ি গরু মহিষ এসবের ঝুঁকি নিয়ে ওই চরেই অবস্থান করে।

ঘূর্ণিঝড়ে আরেক ঝুঁকিপূর্ণ চর ফেডারেশন। যেটি চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নেরই অংশ। এখানে অর্ধশত মানুষ বসবাস করে। এখানেও নেই আশ্রয় কেন্দ্র। ২০০৭ সালের সিডরে ৪৫ জন নারী, পুরুষের প্রাণহানি ঘটে। তারপর থেকে অনেকেই ফেডারেশন ত্যাগ করেছেন। এখনো কয়েকটি পরিবার বসবাস করে।

এছাড়াও নদী তীরবর্তী কালাইয়া ইউনিয়নের, চরকালাইয়া, বগী, শৌলা, নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী, ধানদী, তাঁতের কাঠি, তালতলী, কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা, বাজেমহল, চর মমিনপুর, ধুলিয়া ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া, ধুলিয়া এলাকার মানুষও ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। মানুষ এসব আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিলেও বিপাকে পড়ে গবাদি পশু গরু, ছাগল ভেড়া ও মহিষ।

তথ্য মতে, সিডরসহ বিগত ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার চন্দ্রদ্বীপের চরফেডারেশনে ৫২ জন, কেশবপুর, কালিশুরী ও কনকদিয়ায় পাঁচজন নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছেন। এসব চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ না থাকায় বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে ফসল। বিশেষ করে বোরোধানসহ রবিশস্য। বিভিন্ন সময় নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় ও জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে বেড়িবাঁধের দাবি করে আসছে এলাকাবাসী।

ধুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির বলেন, ধুলিয়ার চর বাসুদেব পাশায় কোনো আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় ওখানে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে থাকেন। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ঝড়ের পূর্বাভাস পেলে ট্রলারে করে বাসুদেব পাশার লোকজনকে ধুলিয়ার আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে আসি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল আমিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের জান মালের নিরাপত্তার জন্য ১৫৭টি সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে বিচ্ছিন্ন জনপদ চন্দ্রদ্বীপে তুলনামূলক কম সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে। ওখানে বেশ কয়েকটি সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবো।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড