• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সুযোগ-সুবিধার অভাবে বড় ক্ষতির মুখে তাঁতশিল্প

  রিয়াজুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

১৪ মে ২০২৩, ১৫:৪৪
সুযোগ-সুবিধার অভাবে বড় ক্ষতির মুখে তাঁতশিল্প

কুষ্টিয়া কুমারখালীর তাঁতশিল্পই ছিল এক সময় জেলার সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ব্যবসা। তাঁতের ছন্দে দোলায়িত হতো এসব গ্রামের মানুষ। কিন্তু কালের বিবর্তনে এটা হারিয়ে যাওয়ার পথে। দিন দিন জনপ্রিয় এই তাঁত বস্ত্র শিল্প হারাচ্ছে তার ঐতিহ্য।

এসবের মূল কারণ এই সব শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের সঠিক মূল্যায়ন না করা। সরকারের যথেষ্ট সুযোগ সুবিধার অভাব। আবার যতটুকু আছে তাও প্রান্তিক কারিগরদের কাছে না পৌঁছানো।

বিভিন্ন ধরনের তাঁত সম্পর্কিত সমিতি ও সংগঠনের বেড়াজালে আটকে রয়েছে তারা। এছাড়াও দফায় দফায় সূতার দাম বৃদ্ধি, সেই তুলনায় তাঁত বস্ত্রের দাম না বাড়া, বিদ্যুৎ সরবরাহ সংকট ও করোনা মহামারির প্রভাবসহ নানা ধরনের প্রতিকূলতায় ধ্বংসের মুখে এসব ইউনিয়নের তাঁত শিল্প। তার ফলে প্রতি বছরই কমছে তাঁতীর সংখ্যা।

এলেঙ্গা বাগান এলাকার তাঁতী ফিরোজ হোসেন বলেন, এই কাজ আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছি। আমি সরকারের কাছ থেকে কোন সুবিধা পাইনি। আমি অধিক সুদে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছি না।

লোন নিতে গেলে তারা বলে সমিতি অথবা ১০-১২ জনার একটি টিম নিয়ে আসতে। তাঁত শিল্পের সমিতি রয়েছে এই সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারি নাম মাত্র শুধু চেয়ারেই বসে আসেন। আমাদের জন্য কিছুই করছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার কুমারখালী, খোকসা, যদুবয়রা, পান্টি, বাঁশগ্রাম লাঙ্গলবাঁধ, এলেঙ্গা বাগানসহ কয়েকটি ইউনিয়ন জুড়েই ছিল তাঁতী ও তাঁত শিল্প। সাধারণত এখানে বিভিন্ন সাইজের চাদর, বেড শিট, বেড কভার, লুঙ্গি, গামছা, জায়নামাজ, হাতের রুমাল ইত্যাদি তাঁতপণ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে।

তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বন্ডের মাধ্যমে বিদেশি সুতা ও কাপড় আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এবং বিপরীত পক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে তাঁত শিল্পকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন না করতে পারায় খুব একটা আগের মতো পোষাতে পারছেন না তাঁত ব্যবসায়ীরা। করোনার আগে সুতার বান্ডিল ছিল ২০০০ টাকা কিন্তু বাড়তে বাড়তে এখন ৩১০০ টাকা হয়ে গেছে।

তারা আরও বলেন, এ খাতকে বাঁচাতে হলে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা দিতে হবে, তাঁতীদের অত্যাধুনিক মেশিনারিজের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাদের ব্যাংক লোন রয়েছে তাদের কিস্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস পিছিয়ে দিতে হবে।

এছাড়াও বন্ড লাইসেন্স বাতিল এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতায়ন ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে আধুনিকায়নের দাবি জানান তারা।

কুষ্টিয়া জেলা বিসিকের উপ মহাব্যবস্থাপক মো. আশানুজ্জামান বলেন, এককভাবে দেওয়ার থেকে দলীয়ভাবে দেওয়ার কথা বলা হয় এ জন্য যে আমাদের লোকবলের সংকট থাকে, এ জন্যে গ্রুপ করে দিলে গ্রুপের লিডাররা থাকে তারা সবার কাছ থেকে টাকা কালেকশন করে নিয়ে আসে। এই সব সুযোগ সুবিধার্থে এগুলো করা হয়।

কুষ্টিয়া কুমারখালী তাঁত বোর্ডের তথ্য মতে, জেলায় এক সময় ৫০ হাজারেরও বেশি তাঁতী ছিল। সর্বশেষ করোনার আগ পর্যন্ত জরিপে তাঁতী পরিবার কমতে কমতে ৭ হাজারে নেমে এসেছে। কুমারখালী থেকে তাঁত দ্রব্য সারা বাংলাদেশের ৭০ ভাগ চাহিদা পূরণ হতো যা এখন ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। আর মোটা লুঙ্গি এখনো বাংলাদেশের সম্পূর্ণ চাহিদায় কুমারখালী থেকেই মিটে থাকে।

কুষ্টিয়া কুমারখালী তাঁত বোর্ডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মেহেদী হাসানকে সমিতির আন্ডারে অথবা দলবদ্ধ ভাবে এসে প্রণোদনা লোন নিতে হবে এমন অভিযোগ অনেকেই করেছেন একথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এটা গভমেন্টের সিস্টেম। লোন দেওয়ার একটি পদ্ধতি আছে একটা সমিতি গঠন করে সভাপতি ও সেক্রেটারি ছাড়া সবাই লোন পাবে এই সিস্টেমটাই আপাতত চালু আছে।

অনেকেই অভিযোগ করেছে এই সমিতিতে তাদেরকে নেয় না এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ যারা করে তারা হঠাৎ করেই তাঁতী হয়ে গেছে আগে এদের তাঁতের ব্যবসা ছিল না। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় সমিতির সভাপতিও তো তাঁতী নন কিংবা তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত নয় এমন প্রশ্নের তিনি কোনো সদ উত্তর দিতে পারেন নাই।

তবে তিনি বলেন, সমিতির দ্বারা কোনো হেনস্থা হচ্ছে এমন অভিযোগ দিলে আমি তাদেরকে আলাদাভাবে দেখব। আর অনেক তাঁতী তাঁত বোর্ড বলে যে কিছু আছে তারা তা জানেই না।

তিনি আরও বলেন, এবার ২০০ তাঁতীদেরকে নিয়ে আমরা ট্রেনিং দিয়েছি সামনে আরও দিব।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড