• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ইজিয়াম হয়ে গেল মাদক

অনেক নাটকীয়তার পর শ্রীঘরে পল্লী চিকিৎসক

  নেহাল আহম্মেদ প্রান্ত, আদমদীঘি (বগুড়া)

১২ মে ২০২৩, ১৬:১৫
অনেক নাটকীয়তার পর গ্রেফতার-মামলা, ইজিয়াম হয়ে গেল মাদক

অনেক নাটকীয়তার পর মকছেদ খান ওরফে বিষু (৫৩) নামে এক পল্লী চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে বগুড়ার সান্তাহার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের খ সার্কেলের সদস্যরা। গত সোমবার (৯ মে) দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের নিজ বসতবাড়ির নিচে ববি ফার্মেসি থেকে তাকে গ্রেফতার করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম।

অভিযানে ইজিয়াম ৩০০ পিস ও অ্যামারিন ৩৫০ পিস জব্দ করা হয়।

অবশ্য ওই রাতেই শুধু ইজিয়াম ৩০০ পিস এ্যাম্পুল উল্লেখ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বিষুর বিরুদ্ধে আদমদীঘি থানায় মামলা করা হয়েছে। এর আগে একই দিনে ৫ মাদক গ্রহণকারীকে গ্রেফতার করে তারা।

গ্রেফতারের পর তাদের দেওয়া তথ্য মতে- বিষুর ওই ববি ফার্মেসিতে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরা সুলতানা।

জানা যায়, গত সোমবার সান্তাহার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের খ সার্কেলের সদস্যরা পাঁচজন মাদক গ্রহণকারীকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে- পৌর শহরের নতুন বাজার এলাকার মৃত মাসুদ খানের ছেলে পল্লী চিকিৎসক মকছেদ খান ওরফে বিষুর বাড়ির নিচে ববি ফার্মেসীতে অভিযান চালায় পরিদর্শক রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে মাদকদ্রব্যের সদস্যরা।

সেখান থেকে উদ্ধার করেন ইজিয়াম ৩০০ পিস এ্যাম্পুল ও অ্যামারিন ৩৫০ পিস যেগুলো দুই ব্যাগে রাখা ছিল। অভিযানের সময় বিষুকে এর আগেও সতর্ক করা হয়েছে বলে পরিদর্শক রফিকুল ইসলামকে অভিযোগ করে বলতে শোনা যায়। এছাড়া সে সময় বিষু একটি ইজিয়াম এ্যাম্পুল অতিরিক্ত ৩০ টাকা দামে বিক্রির কথা স্বীকারও করেন।

এ দিকে গ্রেফতার মাদক গ্রহণকারীরা জানালেন- তারা ৮০ টাকা করে কিনেছিলেন। স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে কমিশনার নজরুলকে ডাকা হয়। পরিদর্শক রফিকুল বিষুকে গাড়িতে উঠানোর জন্য জামা কাপড় আনার জন্য বলতে শোনা যায়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।

এমন সময় উৎসুক জনতা ও গনমাধ্যমকর্মী এতোগুলো এ্যাম্পুল পাওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া যাবে না বলে জানালে পরিদর্শক উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, আমরা এখানে কি পেয়েছি?

ঘুমের ইনজেকশন ইজিয়াম পেয়েছেন জানালে তিনি বলেন, এটা আমার মধ্যে পড়ে না।

অভিযান চলাকালীন তিনি জোর দিয়ে বলছিলেন- এখানে যদি একটা এ্যাম্পুল পাইতাম, তাহলে আপনারা আমাকে এখানে এতক্ষণ দেখতে পাইতেন না। যেহেতু ইজিয়াম আমার মধ্যে পড়ে না, তাই আমি কিছু করতে পারছি না।

এ দিকে অভিযান চলাকালীন সময় স্থানীয় মিঠু ও বেলালকে ক্ষোভের সহিত বলতে শোনা যায়, এর আগে বিষুকে অনেকবার নিষেধ করা হয়েছে। সর্বশেষ নিষেধ করার সময় সে বলেছিল ভাই আমি আর তিন মাস ব্যবসা করবো, আমার ঋণ আছে শোধ হওয়া মাত্রই ছেড়ে দিব। তারা আরও বলেন, ভাইয়েরা যদি আজ ওকে ছেড়ে দিয়ে যায়, তাহলে আমার কাছে বিষুর স্বীকারোক্তির যে ভিডিয়ো আছে সেটা ছেড়ে দিব। আর বলবো ভাইয়েরা টাকা খেয়ে ছেড়ে দিয়ে গেছে। অবশেষে অনেক তর্ক ও জনতার রোষানলে পড়ে একসময় বিষুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে বাধ্য হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা।

এতে প্রায় দুই ঘণ্টার অভিযানে সৃষ্টি হয় অনেক নাটকীয়তা। এতে করে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য উপস্থিত থাকা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানাকে। অপরদিকে মামলায় ইজিয়াম ৩০০ পিস এ্যাম্পুলের কথা উল্লেখ থাকলেও অ্যামারিন ৩৫০ পিসের কথা কোথাও উল্লেখ না থাকায় দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। বিষয়টি জানা যায় গত বুধবার রাতে। যদিও ৩৫০ পিস অ্যামারিন ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

অভিযান পরিচালনা করার সময় গণমাধ্যমকর্মী ও জনগণকে বলেছিলেন ইজিয়াম ও অ্যামারিন ঘুমের ঔষধ, এটা অবৈধ নয়, তাহলে বিষুকে কিভাবে গ্রেফতার ও মামলা করলেন? এবিষয়ে জানতে চাইলে- সান্তাহার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের খ সার্কেলের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমার পক্ষে ইজিয়াম ও অ্যামারিন এ্যাম্পুল আগে কখনো জব্দ করে মামলা দেওয়া হয়নি।

এছাড়া ইজিয়াম ৩০০ পিস এ্যাম্পুলকে অবৈধ উল্লেখ করে মাদক আইনে কিভাবে মামলা করলেন অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনি এজাহার দেখেন, এজাহারে সব উল্লেখ আছে। এসময় তিনি বিরক্ত নিয়ে বলেন, আমি বুজতে পারছি না, সেদিনের একটা বিষয় নিয়ে আমাকে কল দেওয়ার মানে কি? আমারতো আরও কাজ আছে বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানাকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, ৩০০ পিস ইজিয়াম এ্যাম্পুলসহ মকছেদ খান ওরফে বিষুকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদমদীঘি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম রেজা।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড