• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সুপারি পাতার খোলে তাক লাগানো তৈজসপত্র তৈরি!

  খলিল উদ্দিন ফরিদ, ভোলা

১১ মে ২০২৩, ১৩:১২
সুপারি পাতার খোলে তাক লাগানো তৈজসপত্র তৈরি!
সুপারি পাতার খোলে তৈরি তৈজসপত্র (ছবি : অধিকার)

সুপারি গাছের ঝরে পড়া শুকনো পাতাকে আমরা সাধারণত খোল বলে থাকি। বিভিন্ন গ্রামে এটা খুবই সহজলভ্য ভাষা। শুকনো এই ঝরে পড়া খোল গ্রামগঞ্জে জ্বালানি হিসেবেই ব্যবহার করে থাকি। এই খোল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অন-টাইম তৈজসপত্র তৈরি হয় তা আমরা অনেকেই জানি না।

আর এই খোল দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিলেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার তিন যুবক উদ্যোক্তা।

তারা হলেন- উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সেনা সদস্য সোয়েব মিয়া ও সদর পৌরসভা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিঙ্গাপুর প্রবাসী নূরে আরাফাত এবং ইঞ্জিনিয়ার রিফাত ভূঁইয়া।

জানা যায়, তিন যুবক ইউটিউবে ভিডিয়ো দেখে জানতে পারেন সুপারি গাছের ঝরে পড়া শুকনো খোল দিয়েও নানা জিনিসপত্র তৈরি করা যায়। এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে উপজেলার জনতা বাজার মেইন সড়কের পাশে গড়ে তোলেন ইকো ড্রিম বিডি নামে ছোট একটি কারখানা।

সেখানে আটজন কর্মচারীসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বসিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে তাদের কর্মীর মাধ্যমে ঝরে পড়া শুকনো সুপারি পাতা ক্রয় করে নিয়ে আসেন কারখানায়। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি করেন বাসন-কোসন।

যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- থালা, বাটি, নাস্তার ট্রেসহ ১৪ ধরনের নানা রকমের আইটেম। এসব পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন তারা। ভবিষ্যতে বিদেশেও রপ্তানি করার পরিকল্পনা রয়েছে এই তিন যুবকের।

স্থানীয়রা জানায়, তাদের এলাকায় এ ধরনের কারখানায় প্লাস্টিকের তুলনায় সুপারি পাতার তৈরি এসব তৈজসপত্র সহজে পচনশীল। শুকনো সুপারি পাতায় ওয়ান টাইম প্লেটসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরি করায় খুশি এলাকাবাসী। পরিবেশের জন্য সহায়ক হওয়ায় উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান তারা।

এ দিকে তিন উদ্যোগতাকে স্বাগত জানিয়ে পরিবেশবিদ ও সচেতন মহলের কয়েকজন বলেন, ঝরে পড়া সুপারি গাছের পাতা থেকে তৈরি এসব তৈজসপত্র এক সময় পরিবেশ রক্ষায় বিশ্ব বাজার দখল করবে এমন প্রত্যাশা তাদের।

তৈজসপত্র তৈরির বিষয়ে তিন যুবক উদ্যোগতা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তখন পরিবেশ সুরক্ষায়, জীবন বাঁচবে পরিবেশ সাজবে এমন স্লোগানে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো রকম রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়াই ঝরে পড়া সুপারি পাতার খোল থেকে এসব তৈজসপত্র তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা তিন বন্ধু।

এছাড়া ঝরে পড়া সুপারি গাছের খোলে শতভাগ পরিবেশ বান্ধব পণ্য তৈরিতে শুধু আয়ের উৎসই হবে না পরিবেশ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এক সময় প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে মানুষ এই পণ্য ব্যাপক হারে ব্যবহার করবে এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই তিন উদ্যোক্তা।

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান বলেন, মানুষের মুখে শুনে বুধবার সরজমিনে গিয়ে তৈজসপত্র তৈরির কারখানাটি পরিদর্শন করেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা লাগলে তার আশ্বাস দেওয়া হয় ওই তিন যুবককে।

তিনি আরও বলেন, এ উপজেলায় ব্যাপক আকারে সুপারি উৎপাদিত হয়, সঠিক ব্যবহারের অভাবে এর পাতা (খোল) বিনষ্ট বা সাধারণত জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত করেন গ্রামের মানুষ। কিন্তু সুপারির খোল দিয়ে এসব তৈজসপত্র পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করে আয়ের নতুন পথে হাঁটছেন উপজেলার তিন যুবক উদ্যোগতা। তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উৎপাদিত পণ্য পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সর্বসাধারণকে ব্যবহার করার আহ্বানও জানান তিনি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড