• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ইউটিউব দেখে মরুর ফল রকমেলন চাষে মুন্নাফের সাফল্য 

  মাজেদুল ইসলাম হৃদয়, ঠাকুরগাঁও

০৯ মে ২০২৩, ১৬:২১
ইউটিউব দেখে মরুর ফল রকমেলন চাষে মুন্নাফের সাফল্য 

রেল লাইনের পাশে সবুজ গাছের লতাপাতায় দোল খাচ্ছে হলুদ ফুল আর গাছের নিচে ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের রকমেলন ফল। ঠাকুরগাঁওয়ের যুবক কৃষি উদ্যোক্তা মুন্নাফ আলী মণ্ডল প্রথম বারের মতো মরুর ফল রকমেলন মালচিং পদ্ধতিতে মাটিতে চাষ করে সফল হয়েছেন।

জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলতলা এলাকায় রেল লাইনের পাশে সুগার মিলের জমি লিজ নিয়ে চাষ করেছেন এই ফল। এতে ভালো ফলন ও দামে লাভবান হচ্ছেন তিনি।

রকমেলন ফলটি স্থানীয়দের কাছে তেমন পরিচিত না হওয়ায় ও স্থানীয় পর্যায়ের এর বাজার না থাকায় প্রথম দিকে ফল বিক্রয়ে তাকে ঝামেলা পোহাতে হয়। তবে এখন ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকেই তার এই ফল ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে।

জানা যায়, ‘রক মেলন’ ফলটিকে অনেকেই আবার ‘সাম্মাম’ নামে জানেন। ‘রক মেলন বা সাম্মাম’ মূলত সৌদি আরবের মরু অঞ্চলের ব্যাপক চাষ হলেও বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলায় এর চাষ হচ্ছে।

পীরগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাড়ি গ্রামের কৃষক মুন্নাফ আলী মণ্ডল। তেঁতুলতলা এলাকায় ভাতারমারি ফার্মের পশ্চিম পাশে ৭৫ শতাংশ জমিতে ‘রক মেলন’ চাষ শুরু করেছেন। তিনি একজন ভালো ও অভিজ্ঞ তরমুজ চাষি হলেও তরমুজের পাশাপাশি এবার এই মরুর ফল চাষ করেছেন।

ইউটিউব দেখে মালচিং পলিথিন ছিদ্র করে এর ফাকে ফাকে বীজ বপন করেন তিনি। বপনের মাত্র ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ‘রক মেলন বা সাম্মাম’ ফল কর্তন (হারভেস্ট) করে বাজার জাতকরণ করছেন। ফলে তিনি যেমন লাভবান হচ্ছেন। তেমনি এখানে কাজ করে ৮-১০ জন নারী পুরুষ পেয়েছেন আয়ের উৎস।

মাত্র ৬০-৭০ দিনের মধ্যে এই ফলন ও দাম ভালো পেয়ে খুশি এই কৃষি উদ্যোক্তা। ৭৫ শতাংশ জমিতে রকমেলন চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যেই আড়াই লাখ টাকা ফল বিক্রয় করে ফেলেছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, ফলটি এই অঞ্চলে পরিচিত না হওয়ায় বাজার জাত করতে একটু সমস্যা হচ্ছিল কিন্তু এখন পাইকার এসে ক্ষেত থেকেই ফল ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। এখনো মাঠে যা ফল আছে তাতে আরও লক্ষাধিক টাকা বিক্রয়েরে আশা করছেন তিনি।

ক্ষেতে কাজ করে তাদের সংসারও ভালো চলছে বলে জানান স্থানীয় নারী শ্রমিক কৌশল্যা।

এর আগে কখনো এমন ফল দেখেননি ও খাননি বলে স্থানীয়রাসহ দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ফসলের মাঠে।

দেখতে আসা আলতাফুর রহমান নামে দর্শনার্থী বলেন, রকমেলন ফলটি আগে কখনো সরাসরি দেখিনি ও খায়নি তাই বউ-বাচ্চাকে নিয়ে এখানে দেখতে আসলাম। দেখ ও ফলটি খেয়ে ভালই লাগল।

স্থানীয় কৃষক দুলাল হোসেন বলেন, মুন্নাফের রকমেলন ক্ষেত দেখতে আসছি। দেখে ভালই লাগল। চিন্তার করছি আগামীতে আমিও এর চাষ করবো। এছাড়াও আশেপাশের কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

রাজধানীতে এর চাহিদা থাকায় ক্ষেত থেকে রকমেলন ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে দেড়শ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রয় করনে বলে জানান ব্যবসায়ী উজ্জ্বল।

কৃষি অধিদপ্তরের মতে, এটি মরুভূমির ফল হলেও ঠাকুরগাঁওয়ের আবহাওয়া ও মাটির সাথে ভালোভাবে অভিযোজিত। স্থানীয় পর্যায়ে এটির বাজার তৈরি হলেও এটি একটি লাভজনক ফসল হিসেবে কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, রকমেলন একটি ভিটামিন খনিজ সমৃদ্ধ ফল। এটি একটি লাভজনক ফসল ও এর দামও ভালো। তাই রকমেলন চাষে মুন্নাফ আলী মণ্ডলকে পোকা-মাকড় দমন রোধসহ সকল প্রকার সহযোগিতা এবং পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড