• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ, অভিযোগকারীকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত

  মনিরুজ্জামান, নরসিংদী

০৩ মে ২০২৩, ১১:৩০
অধ্যক্ষ

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের অধীনস্থ বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নরসিংদীর অধ্যক্ষ নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, তুলনামূলক কম যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে ভাইবা বোর্ডে বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাখা ও নির্বাচিত প্রার্থীর সহকর্মীর মাধ্যমে খাতা মূল্যায়নসহ নানা অনিয়মের প্রশ্ন তোলায় ওই প্রতিষ্ঠানের একজন ইন্সট্রাক্টরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সাময়িক বরখাস্তকৃত শিক্ষকের নাম মো. মাহমুদুল আলম সরকার। তিনি বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর ও রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ভুক্তভোগীর দাবি লিখিত অভিযোগের প্রতিকার না পেয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করায় আগের তারিখ উল্লেখ করে বহিষ্কার দেখানো হয়েছে। যদিও বরখাস্তের আদেশের চিঠি তিনি অনেক পরে পেয়েছেন।

জানা যায়, গত ২২ ডিসেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হবে মর্মে পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পদে ১২ বছর অভিজ্ঞ থাকা আবশ‍্যক এবং বয়স সর্বোচ্চ ৪০ বছরের মধ‍্যে হতে হবে। পরবর্তীতে গত ৮ এপ্রিল ঢাকায় লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে চারজন প্রার্থীকে ভাইবা পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয় এবং পরের দিন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের প্রধান কার্যালয়, ঢাকায় সেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত ৯ এপ্রিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত একজন প্রার্থীকে নিয়োগদানের জন্য চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা দেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর গত ১০ এপ্রিল পরীক্ষার্থী বাছাইয়ে অসংগতি উল্লেখ করে ফলাফল পুন: বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও অতিরিক্ত সচিব মো. ইউসুফ আলী বরাবর আবেদন করেন। পরে, তিনি ১৬ এপ্রিল পাট ও বস্ত্র মন্ত্রাণালয়ের সচিবকে একই বিষয়ে অবহিত করে চিঠি পাঠান। পরে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন না দেওয়ার অভিযোগ তোলে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য-সচিব ও পরিচলক (প্রশাসন) ১২ এপ্রিল কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়। তাতে বলা হয় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আপনার বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ নেওয়া হবে না এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক গত ২৫ এপ্রিল কারণ দর্শানো লিখিত জবাব দেন এবং গত ২৭ এপ্রিল উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। এদিকে ওই দিনের তারিখ (২৭ এপ্রিল) উল্লেখ করে বোর্ডের সদস্য-সচিব ও পরিচলক (প্রশাসন)’র সাক্ষররিত তাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রদান করা হয়। যা তিনি অনেক পরে হাতে পেয়েছে।

নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও অতিরিক্ত সচিব মো. ইউসুফ আলী বরাবর আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন যে, অধ্যক্ষ পদটি রাজস্ব খাতে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ৩য় গ্রেডের উচ্চতর পদ কিন্তু ভাইভাতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাকা ৩ জনের মধ্যে ২ জন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। ওই দুইজনের মধ্যে একজন আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক যা ওই অধ্যক্ষ পদের কয়েক ধাপ নিচের পদধারী।

অন্য দিকে মেধাক্রম প্রথম হিসেবে নির্বাচিত প্রার্থীর সহকর্মী ভাইবা পরীক্ষায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং খাতা মূল্যায়নে স্বজনপ্রীতি ও ভাইভাতে একপাক্ষিক আচরণ করার অভিযোগ তোলা হয়। নির্বাচিত প্রার্থীর রোল ক্রম অনুযায়ী নাম ঘোষনার ৪৫ মিনিট পর হাজির হয়েছেন যা ওই অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরায় ফুটেজ রয়েছে।

লিখিত আবেদনে আরও বলা হয় যে, যাকে চূড়ান্ত মনোনয়নে দ্বিতীয় করা হয়েছে, তার শিক্ষা জীবন শেষ হয়েছে মাত্র ১১ বছর আগে। কিন্তু আবেদন করার শর্ত পূরণ করেন না, অথচ তিনিও লিখিত পরীক্ষার জন্য বিবেচিত হয়েছেন । তাই প্রার্থী বাছাইয়ে অসংগতি ও ত্রুটি থাকায় ফলাফল পুন: বিবেচনা করার অনুরোধ জানান। ভুক্তভোগী কোনো প্রতিকার না পেয়ে গত ২৭ এপ্রিল তারিখ উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন।

ভুক্তভোগীর আইনজীবী মুনতাসির মাহমুদ রহমান বলেন, যাদেরকে ভাইবা বোর্ডে রাখা হয়েছে, তারা প্রার্থীর চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন। তাছাড়াও যাকে নির্বাচিত করা হয়েছে, তার সহকর্মীরা তার খাতা মূল্যায়ন ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলেন যার জন্য আমার মোয়াক্কেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অনেক অনিয়মের সুযোগ ছিলো। আরও অনেক বিষয় রয়েছে প্রমাণ সাপেক্ষ। আমরা রিট পিটিশন দায়ের করেছি, আশাবাদী আমরা ন্যায় বিচার পাবো।”

এসব বিষয় জানতে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) সুকুমার চন্দ্র সাহার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। আপনার কিছু জানার থাকলে অফিসে এসে লিখিতভাবে জানান। লিখিত ছাড়া আমি উত্তর দিবো না। তাছাড়া, আমি নিজে থেকে কিছু করি না, বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশে কাজ করি।”

নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী জানান যে, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পায়তারা করার অভিযোগে মো. মাহমুদুল আলম সরকারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে স্বীকার করে বলেন, এখানে আমরা স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রদান করেছি, কোনো প্রকার স্বজনপ্রীতি করা হয়নি, সে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে।”

দেশে টেক্সটাইলের অনেক সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে ৩ জন বিশেষজ্ঞের মধ্যে ২ জন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যে নির্বাচিত করা হয়েছে কেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমরা বুটেক্স (বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে একজন নিয়েছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থাকতে পারবে না, এমন কোনো কথা নয়।”

অধ্যক্ষ পদ থেকে কম যোগ্যতা সম্পূর্ণ ব্যক্তিকে কেন বিশেষজ্ঞ রাখা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানকে পত্র দিয়েছিলাম। তিনি ওই ব্যক্তিকে ভাইবা বোর্ডে পাঠিয়েছেন। আমাদের হাত নেই ওখানে।”

প্রথম হওয়া প্রার্থীর সহকর্মীকে দিয়ে কেন খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং ভাইবাতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে চিঠি দিয়েছি, তিনিই ওই শিক্ষককে নিয়োগ বোর্ডে পাঠিয়েছেন। আর এখানে স্বজনপ্রীতি হয়নি। আর কম যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি ভাইবা বোর্ডে থাকতে পারবে না এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই বলে ও জানান তিনি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড