• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাঁশখালীর রসালো লিচু ঝুলছে বাগানে, এবার বিক্রির সম্ভাবনা শতকোটি টাকা

  শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)

০২ মে ২০২৩, ১৩:৩৪
লিচু

মধুমাস জৈষ্ঠ্যের রসালো ফল লিচু সোভা পাচ্ছে বাঁশখালীতে। মৌসূমের সেরা ফল চট্টগ্রামের স্থানীয় জাত বাঁশখালী কালিপুরের রসালো লিচু এখন বাগানের গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে। প্রকৃতিতে বাগানের লিচু দোল খাচ্ছে নয়নাবিরাম দৃশ্যে। বাগান ছাড়াও এ লিচু সোভা পাচ্ছে বাড়ির ছাদ বাগানেও। কালীপুরের পূর্ব পাহাড়ী এলাকায় খুব কম বসতঘরই আছে যাদের তিন-চারটা লিচু গাছ নেই। মৌসুমী এ লিচু প্রকৃতিতে যেমন সৌন্দর্য বিলায় তেমনি চাষীদের মুখে হাসি ফোটায়। এবারে বাঁশখালীতে লিচুর ব্যাপক ফলন হয়েছে। কয়েকদিন পরপরই বাঁশখালীর অভ্যন্তরিণ হাট-বাজারে উঠ শুরু করবে বছরের সেরা রসালো ফল বাঁশখালীর কালীপুরের লিচু। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও পোকামাকড়ের তেমন আক্রমণ না থাকায় বাঁশখালীতে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে দাবী উপজেলা কৃষি অফিসের। পরিপক্ক হতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে কোথাও কোথাও এরই মধ্যে রঙিন হয়ে উঠেছে কালিপুরের রসালো জাতের লিচু। লিচুর ফলন দেখে এবার মৌসূমে ১০০ কোটি টাকার ওপরে বিক্রির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

চলতি মৌসুমে বাঁশখালী উপজেলা জুড়ে ৭৬০ হেক্টর বাগানের লিচুর ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাঁশখালী উপজেলা অফিসার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবু সালেক। তিনি জানান, গত মৌসুমে ৭২০ হেক্টর বাগানে লিচুর ভালো ফলন হয়েছিল। এ বছর প্রতি হেক্টরে বীজের গাছ লাগানো হয়েছে ২১০-২২০ টা। কলমের নতুন জাতের চারা প্রায় ২৬০ টা। জানা গেছে বিগত কয়েক বছর ধরেই বাঁশখালী উপজেলায় লিচুর খুব ভালো ফলন হয়ে আসছে। সে কারণে এবারো গত বছরের ন্যায় বাঁশখালী কালিপুরের লিচু বিক্রির প্রত্যাশা করা হচ্ছে ১০০ কোটি টাকার ওপরে। গত বছর বাজারে প্রতি ১০০ লিচু ২৫০ টাকা থেকে প্রকারভেদে ৩০০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। অন্যদিকে প্রতি হাজার পাইকারি লিচু বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া শুধু বাঁশখালী কালিপুরের ৩০০ হেক্টরসহ পুরো উপজেলায় সাড়ে ৭৬০ হেক্টর বাগানে স্থানীয় জাত কালীপুরের লিচু উৎপন্ন হয়। স্থানীয় জাতের লিচুর পাশাপাশি উন্নত জাতের লিচু যেমন বোম্বাই, চায়না ৩, মোজাফফরী চাষ দিন দিন বাড়ছে। আবহাওয়া শুষ্ক ও ভাল থাকায় ফলন ভাল হয়েছে। বাঁশখালী কালিপুরের লিচু অনেকটা দিনাজপুরের লিচুর মতো হলেও এটি আকারে একটু ছোট। কিন্তু স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। তাই চট্টগ্রামবাসীর কাছে কালীপুরের লিচু বেশ স্বাদের ও প্রিয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচু। লিচুতে রঙ ধরেছে কোন কোন বাগানে। উপজেলার পুকুরিয়া, সাধনপুর, কালিপুর হয়ে বৈলছড়ি পর্যন্ত ৪-৫ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকাজুড়ে সড়কের পাশে, বাড়ির আঙ্গিনায়, পাহাড় ও লোকালয়ের লিচু বাগানে এখন শুধু লিচু আর লিচু। তাছাড়া উপজেলার পূর্ব পাহাড়ি এলাকায় বিশেষ করে পুঁইছড়ি, নাপোড়া, চাম্বল, জঙ্গল জলদীতেও বাগানে বাগানে সোভা পাচ্ছে লিচুর দোল খাওয়া। চলতি বছরে লিচুর বাম্পার ফলনে শুধুমাত্র বাঁশখালীতেই রেকর্ড সংখ্যক লিচু বিক্রির সম্ভাবনা দেখছে উপজেলার লিচু চাষী ও ব্যবসায়ীরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক প্রতিবেদককে বলেন, 'এবার চলতি মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে মৌসুমী ফলের মধ্যে বাঁশখালীর কালীপুরের লিচু স্পেশাল একটি ফল। এখানে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষাবাদ হয়। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী স্থাপন, পরামর্শ, দলীয় আলোচনা, ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে লিচু চাষী-বাগানীদের সহযোগিতা করেছি। এ বছর ৭ শত ৬০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে লিচুর উৎপাদন ভালো হয়েছে। স্থানীয় বাজারে লিচু আসতে শুরু করেছে। তবে বাণিজ্যিক লিচু বাজারে আসতে আরো সপ্তাহ-দশদিন সময় লাগবে। কালো বৈশখীর প্রভাব না পড়লে, বৃষ্টি না হলে লিচু ব্যবসায়ীরা আশানুরুপ দাম পাবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরই বাঁশখালীতে লিচুর ফলন বাড়ছে, এ উপজেলায় ২০১৫ সালে প্রায় ৫০ কোটি, ২০১৬ সালে ৬০ কোটি এবং ২০১৭ সালে ৭০ কোটি, ২০১৮ সালে ৮০ কোটি ও ২০১৯ সালে প্রায় ৯০ কোটি টাকার লিচু উৎপাদিত হয়েছিল। ২০২০ ও ২০২১ এ করোনা সংক্রমণ থাকার পরেও ১০০ কোটি টাকার ওপরে লিচু বিক্রি ছাড়িয়ে গেছে। গত মৌসূমেও প্রায় ১০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়েছিল। এ কারণে এবার তিনি শত কোটি টাকার ওপরে লিচু বিক্রি ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন।

উল্লেখ্য, বাঁশখালীতে উৎপাদিত লিচু স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে দখল করে নেয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজার। কালিপুরের লিচুর কদর সারাদেশেই। বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর লিচুর জন্য বিখ্যাত যুগ যুগ ধরে। বৈলছড়ি, গুণাগরি, পুকুরিয়া, জঙ্গল জলদি, জঙ্গল চাম্বল সহ প্রায় প্রত্যেক ইউনিয়নেই পাহাড়ি এলাকায় একই সাথে সমতলে লিচুর চাষ হয়ে আসছে বহুকাল থেকেই। বাণিজ্যিক ও ঘরোয়াভাবে উৎপাদিত এই লিচুর কদর দেশ জুড়েই। উপজেলার এ লিচু দেশের বাইরে সৌদি আরব, কাতার, ওমান, মালয়েশিয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যের মতো দেশেও প্যাকেট করে যাচ্ছে। বাঁশখালীর প্রবাসীরা তাদের মালিকের জন্য, নিজেদের জন্য কালীপুরের রসালো নিয়ে যায়। অনেকেই তাদের প্রবাসী ছেলেদের জন্য এ লিচু পাঠানোর ব্যবস্থা করে থাকে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড