জে রাসেল, ফরিদপুর
ফরিদপুরে একটি সরকারি অফিসের লাগামহীন টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে পৌর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সংঘাত এড়াতে স্থান পরিবর্তন করে ডিসি অফিসের সামনে গিয়ে মানববন্ধন করেন তারা।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল ফরিদপুরে এলজিইডি, বিএডিসিসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অব্যাহত টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন পর সরব হয় ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেদিন ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ক্ষমতাসীন দলের টেন্ডারবাজ নেতাদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় বিএডিসি (সেচ) অফিসের সামনে বুধবার মানববন্ধন ও ঘেরাও কর্মসূচি দেয় পৌর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ।
ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান মনিরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বুধবার দুপুরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. মনিরুজ্জামান মনির ও সদস্য মো. জামাল উদ্দিন কানু।
মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য সাইদুর রহমান বাবলু, সাইদুর রহমান, আবুল হোসেন, ইকবাল চৌধুরী, এস এম কামাল, শরীফ ইমরান, যুবলীগ নেতা শাহরিয়ার সোহাগ প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে তারা জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারে কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান মনির স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে ফরিদপুর বিএডিসির সেচ প্রকল্পের দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ করা এবং প্রজেক্ট ডাইরেক্টর পংকজ কর্মকারের দুর্নীতি তদন্তের দাবি জানিয়ে বলা হয়, বিএডিসির ফরিদপুর সেচ প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর পংকজ কর্মকার ফরিদপুর হারোকান্দি সেচ ভবনে অফিস করেন।
তিনি ইচ্ছা মতো, বেশীরভাগ সময়ে ঢাকা থাকেন। প্রতিটি টেন্ডার আহ্বান করেই তিনি গা ঢাকা দেন। তার মনোনীত কিছু ঠিকাদার ও অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজ অফিস কর্মকর্তার মাধ্যমে ৫% টাকা নিয়ে আইডি বিক্রি করে রেট দিয়ে দেন। দরপত্র ওপেন করে তদন্ত করে দেখেন ওনার মনোনীত ঠিকাদার ছাড়া কেউ কাজ পান না, কারণ সঠিক রেট উনার মনোনীত ঠিকাদার ছাড়া কারো কাছে নেই।
সর্বশেষ টেন্ডারে আইডি ৮০৮৮৭৯ থেকে ৮০৮৯৪১ পর্যন্ত ৬২ গ্রুপ কাজ প্রায় ২০ কোটি টাকার কাজে ১ কোটি টাকা ভাগ করে নিয়েছেন ফরিদপুরের আলোচিত রাজনৈতিক গডফাদাররা ও পিডি পংকজ কর্মকার। পিডি অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিজস্ব মনোনীত ঠিকাদার দের মাঝে কাজ বণ্টন করেছেন। তার সাথে জড়িত ফরিদপুরের একজন আলোচিত শ্রমিক নেতা, তার পার্টনার বিএডিসির সিন্ডিকেটের সদস্য, স্থানীয় একজন বিএনপি নেতা আর তাদের পিছনের শক্তি বর্তমান ক্ষমতাধর দলীয় গডফাদাররা।
পিডি এমনে সময় অফিস করেন না, কিন্তু ঠিকাদারি বিল নেয়ার সময় ঠিকই ব্যাগ নিয়ে হাজির হন তার পিসির ৭% টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময়। পিডি পংকজ এর আগে পাইপ ছাপ্লাইয়ের টেন্ডার করে তার আত্মীয়কে কাজ পাইয়ে দিয়ে নিম্নমানের পাইপ সাপ্লাই দিয়েছেন। বিএডিসির গোডাউন চেক করলে এবং যারা বারিড পাইপের কাজ করেছেন এমন ঠিকাদারদের কাছে খোজ নীলেই এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে। অধিকাংশ পাইপ সাইটে নেয়ার সময় সামান্য ঝাঁকিতে ভেঙে যায়। আবার গোডাউনে অনেক পাইপ ফাটা অবস্থায় আছে।
বিএডিসির মতো এমন একটি জনগুরুত্ব সম্পূর্ণ অফিস যেখানে সরাসরি প্রান্তিক কৃষকদের কৃষি কাজের সুবিধার্থে সেচের পানির সুব্যবস্থা করার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ সম্পন্ন করার কথা, উল্টো সেখানে হয় ব্যাপক দুর্নীতি। শুনলে অবাক হবেন এই প্রকল্প এরিয়া নির্ধারণে পিডি কৃষকদের মাঝ থেকে দালালদের মাধ্যমে প্রকল্প পাশের নামে ১০% টাকা উৎকোচ নিয়ে থাকেন। যারা টাকা দেন না তাদের প্রকল্প পাশ হয় না।
বিএডিসির অনেক নতুন লাইসেন্সধারী আছেন যারা বিগত ৫ বছর ধরে লাইসেন্স ফি দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে এলটিএম টেন্ডারে অংশ নিতে পারেন না। এলটিএম করে টেন্ডার করলে লটারি হবে, লটারিতে বিএডিসির তালিকাভুক্ত সকল ঠিকাদার অংশগ্রহণ করতে পারবে। লটারিতে কাজ পেলে তো ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারেন না পিডি। তাই সুকৌশলে পিডি রেট দিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্য টেন্ডার ওটিএম করেন।
তারা বলেন- আমাদের দাবি টেন্ডার ওটিএম করলে রেট ওপেন করতে হবে, যার কাজ নেয়ার যোগ্যতা আছে তিনিই কাজ পাবেন। আর তা না হলে এলটিএম টেন্ডার আহ্বান করেন, সবাই লটারিতে অংশগ্রহণ করি। এই দুটি প্রক্রিয়াই স্বচ্ছ। অথচ এই প্রক্রিয়া পিডি অনুসরণ না করে শুধুমাত্র নিজের এবং কিছু অসাধু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সুবিধার জন্য রেট গোপনের টেন্ডার আহ্বান করেন। আপনাদের মাধ্যমে বিএডিসি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি এই অনিয়মের টেন্ডার বাতিল করার এবং প্রজেক্ট ডাইরেক্টরের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি সুষ্ঠুভাবে তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড