• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফসলি জমির মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়

  কাজী শাহরিয়ার রুবেল, আমতলী (বরগুনা)

২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪১
ফসলি জমির মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়

চারদিকে মানুষের বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও মাঠের পর মাঠে চাষ করা হচ্ছে ধান, সরিষা, ডালসহ বিভিন্ন শস্য। এর মধ্যেই বিবিসিকো নামের একটি ইটভাটার অবস্থান। আর ওই ইটভাটায় জোর জবরদস্তি করে তিন ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু ওই ইটভাটার মালিক আ. হান্নান মৃধা। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর। তার ভয়ে কেহ তার এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।

সরেজমিন বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রাম ঘুরে দেখো গেছে, দূর থেকে দেখা যায় চারিদিকে ফসলী জমি কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা যায় কোনো কোনো ফসলি জমির মধ্যে ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের পুকুর। পাশেই পড়ে রয়েছে একটি ভ্যাকু মেশিন। ওই ভ্যাকু মেশিন দিয়েই বিবিসিকো ইটভাটার মালিক আ. হান্নান মৃধা রাতের আধারে জোরপূর্বক জমি থেকে মাটি কেটে ট্রাক্টর (ট্রলি) ভরে এসব মাটি তার ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন।

গত রবিবার দিনে ও রাতে বিবিসিকো ইটভাটার পশ্চিম পার্শ্বে রায়বালা মৌজার ২৩৯ নং দাগের পক্ষিবিবি মালিকানাধীন ২০০ শতাংশ জমির মধ্য থেকে ২০ শতাংশ তিন ফসলি সরল জমির মাটি কেটে নিয়ে গেছে। বিষয়টি জমির মালিক পক্ষিবিবির পুত্র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আমতলী থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দেয়।

গতকাল সোমবার সকালে একই মৌজায় রায়বালা হাতেমিয়া নূরানি হাফিজিয়া মাদরাসার ২৩৯ নং দাগ থেকে ৬০ শতাংশ জমির মধ্য থেকে ৪ শতাংশ জমির মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। নসু শিকদারের ২৪১ নং দাগের ৭০ শতাংশ জমির মধ্য থেকে ২০ শতাংশ জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নেয়া হয়েছে। জমির মালিকরা মাটি কাটতে বাধা দিলেও তাদের বাধা অগ্রাজ্য করে ওই সকল জমির কেটে ইট ভাটায় নিয়ে যায়। জমির মধ্যখানে ১২ থেকে ১৪ ফুট গভীরতা করে মাটি কাটার ফলে পাশের জমিগুলোও ভেঙে যাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ও গ্রামবাসীদের অভিযোগ, শুধু রাতে না দিন-দুপুরেও কৃষকদের কৃষি জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নিচ্ছে এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু আ. হান্নান মৃধা। প্রতিবাদ করলে মারধর ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক পক্ষিবিবির পুত্র মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, আমাদের ফসলি জমির মাটি এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু ও বিবিসিকো ইটভাটার মালিক আ. হান্নান মৃধা জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে গেছে। আমি পুলিশ এনে মাটি কাটা বন্ধ করেছি।

স্থানীয় কৃষক সোহাগ হাওলাদার বলেন, আমার জমির পাশ দিয়ে ১২ ফুট গভীরতা করে মাটি কাটার ফলে আমার ফসলি জমির প্রায় ২০ শতাংশ ভেঙ্গে গেছে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে ইটভাটার মালিক হান্নান মৃধার লোকজন আমাকে মেরে আহত করে। বিচার চেয়ে আমি আমতলী ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করেছি।

রায়বালা হাতেমিয়া নূরানি হাফিজিয়া মাদরাসার মোতাওয়াল্লি ইউনুচ মৃধা ও একই গ্রামের বাসিন্দা ধলা মিয়া হাওলাদার বলেন, ওই এলাকার কৃষকদের তিন ফসলি জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে দিন দিন ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। এছাড়া জমি থেকে গভীর করে মাটি কাটায় পাশের জমিগুলো ভেঙে ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে কেহ কিছু বললেই ইটভাটার মালিক পক্ষ তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে যায়। ভূমিদস্যু ইটভাটার মালিক হান্নানের কাছে সাধারণ কৃষকরা এখন অনেকটা জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন। ভয়ে কেহ কিছু বলে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভ্যাকু চালক জানান, ওই জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ ট্রলি মাটি নিতে পারছেন। মাটি কাটার বিষয়ে তিনি জানান, ইটভাটার মালিকের কথায় তিনি ফসলি জমি থেকে মাটি কাটছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বিবিসিকো ইটভাটাটি পরিচালনা করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। ইটভাটায় ট্রাক্টর (ট্রলি) দিয়ে মাটি টানা ও ইট টানার কারণে ওই গ্রামের কাঁচা ও পাকা সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যা এখন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহমেদ মাসুম তালুকদার বলেন, জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ায় এলাকার ফসলি জমি ও গ্রামীণ রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতির বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনেকবার অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখনো গ্রহণ করা হয়নি।

অভিযুক্ত বিবিসিকো ইটভাটার মালিক আ. হান্নান মৃধা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো জমির মাটি জোরপূর্বক কাটিনি। আমার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমির মাটি কেটেছি।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান বলেন, জোরপূর্বক ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ পাঠিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম মুঠোফোনে বলেন, ফসলি জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেহ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড