মো. রেজোয়ান ইসলাম, নীলফামারী
ইজিবাইক সোসাইটির চেইন মাস্টার মো. ছটু। শহরে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করেন তিনি। দিন আনি দিন খাই অবস্থা তার পরিবারের। খুব কষ্ট করে সংসার চালান। এমনই এক পরিবারের যুবক তার কর্তব্য ভোলেননি অনটনেও।
এক যাত্রীর ফেলে যাওয়া পৌনে চার লাখ টাকার ব্যাগ ফেরত দিলেন মো. ছটু। ঘটনাটি গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে ঘটেছে।
জানা যায়, সৈয়দপুর শহরের নিয়ামতপুর সরকার পাড়ার বাসিন্দা কুড়িগ্রামের রৌমারি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. কাইয়ুম চৌধুরী কর্মস্থল থেকে বাসে করে টার্মিনালে নামেন। তার সাথে প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে নেওয়া ঋণ ও বেতন বোনাসের প্রায় পৌনে ৪ লাখ টাকা টাকার একটি ব্যাগ ছিল। পরে বাস টার্মিনালে নেমে একটি ইজিবাইক চেপে নিয়ামতপুরের বাসায় আসেন। কিন্তু ভুল করে তার সাথে থাকা টাকার ব্যাগটি ইজিবাইকে রেখেই বাড়িতে প্রবেশ করেন। কয়েক মিনিট পর তার খেয়াল হয় ব্যাগটি অটোবাইক থেকে নামাননি। সাথে সাথে ইজিবাইকটির সন্ধানে বের হন।
এ দিকে ওই ইজিবাইক চালক গাড়িতে টাকার ব্যাগ রয়েছে খেয়াল না করে ইজিবাইক চালিয়ে শহরের দিকে আসে। পথিমধ্যে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের মুন্সিপাড়া মোড়ে টাকার ব্যাগটি রাস্তায় পড়ে যায়। এ সময় চেইন মাস্টার মো. ছটুর নজরে পড়ে ব্যাগটি। পরে লোকজনের উপস্থিতিতে সেটি খুলে দেখতে পায় ওই ব্যাগে টাকা রয়েছে।
সাথে সাথে সংগঠনটির তামান্না মোড় হাজারীহাট শাখার সভাপতি মঞ্জুর হোসেন সিয়াম ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরজু রহমানকে বিষয়টি জানান তিনি। এমন ঘটনায় তারাও টাকার মালিকের সন্ধান করতে থাকে। এরই মধ্যে কাইয়ুম চৌধুরী বিষয়টি থানায় অবগত করেন।
পরবর্তীকালে বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটি সৈয়দপুর উপজেলা তামান্না মোড় হাজারীহাট শাখার নেতৃবৃন্দ টাকার মালিক কাইয়ুম চৌধুরীকে খুঁজে বের করেন। রাতে শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বরের ট্রাফিক পুলিশ বক্সে টাকার মালিককে ডেকে আনেন তাঁরা। পরে নীলফামারী পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) আবু নাহিদ পারভেজ চৌধুরী মাধ্যমে ব্যাগে থাকা পৌনে ৪ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেন ওই কৃষি কর্মকর্তাকে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ইজিবাইক সোসাইটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. আশরাফ কোরায়শী ছাড়াও বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির সৈয়দপুর তামান্না মোড় হাজারীহাট শাখার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
মো. কাইয়ুম চৌধুরী দৈনিক অধিকারকে বলেন, সাংসারিক কাজে প্রয়োজন হওয়ায় প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ঋণ নেওয়া ৩ লাখ ও বেতন বোনাসের প্রায় ৭৫ হাজার টাকা ছিল ওই ব্যাগে। সবগুলো টাকাই ব্যাগে রয়েছে জানিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এসময় খুশি হয়ে টাকার ব্যাগ পাওয়া ওই অটোবাইক শ্রমিক মো. ছটুকে পুরস্কৃত করেন।
এ ব্যাপারে সংগঠনের সভাপতি মঞ্জুর হোসেন সিয়াম ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরজু রহমান দৈনিক অধিকারকে বলেন, কুড়িয়ে পাওয়া টাকার ব্যাগ প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। এ জন্য তারা তাদের সংগঠনের সদস্য ছটুকে ধন্যবাদ জানান তার সততার জন্য।
নীলফামারী পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) আবু নাহিদ পারভেজ চৌধুরী দৈনিক অধিকারকে বলেন, ইজিবাইক শ্রমিক ছটুর সততা সত্যিই প্রশংসনীয়। এ জন্য তাকে আমরা ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। তার এ সততা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড