নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
কিশোরগঞ্জের ভৈরব অনিবন্ধিত রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদনে ভুল চিকিৎসায় গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাত ৮টায় ভৈরব পৌর শহরের চন্ডিবের মোল্লাবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদনে সন্তান প্রসবের সময় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত গৃহবধূ পৌর শহরের কালিপুর দক্ষিণ পাড়া এলাকার হায়দার মিয়ার বাড়ির জামাল মিয়ার মেয়ে স্মৃতি বেগম (২১)।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর জেলা রায়পুরার ইব্রাহীমপুর এলাকার সজিব মিয়ার সাথে দুই বছর আগে স্মৃতির বিয়ে হয়। গর্ভধারণের পর ভৈরবে পৈত্রিক বাড়িতে আসেন সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য। ১৫ এপ্রিল প্রসব ব্যথা হলে বিকাল ৩টায় পৌর শহরের চন্ডিবের মোল্লাবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদনে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্য দুই জন মিডওয়াইফ শামিমা আক্তার ও আইরিন আক্তার তাকে ডেলিভারি করতে এপিসিওটমি করে বাচ্চা প্রসব করান। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বজনরা নিয়ে যেতে চাইলে তারা বাধা দেন। পরে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে বলে।
রোগীর স্বজনরা জানান- বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন এবং তারা জানান রোগীর এপিসিওটমি করার সময় তার রগ কাটা গিয়েছে তাই অতিরিক্ত কতক্ষণে মারা গিয়েছে।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী রোগীর ভাবী শাহানা বলেছেন, আমি নিজেই আমার ননদকে রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদনে নিয়ে গিয়েছি। বাচ্চা ডেলিভারির সময় বাচ্চা বের করতে তারা এপিসিওটমি করতে চাই আমি তাতে বাধা দেয় তারা বলে কিছুই হবে না। তারা জোর করে এপিসিওটমি করার পর আমার ননদের অতিরিক্ত রক্ত বের হয়। আমি বারবার অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে তারা বাধা দেয়। বলে ঠিক হয়ে যাবে। পরে তারা সেলাইন করে ইনজেকশন ও ট্যাবলেট দেয় কিন্তু আমার ননদের রক্ত পড়া বন্ধ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, অবস্থা খারাপ হলে আমরা তাকে সেখান থেকে হাসপাতালে গেলে ডাক্তার বলে মারা গেছে। তারা আমার ননদকে মেরে ফেলেছে তারা কোনো ডাক্তার না তারা দুইজন আমার ননদকে হত্যা করেছে।
এ বিষয়ে নিহতের স্বামী সজিব মিয়া বলেন, আমার স্ত্রীর অবস্থা খারাপ শুনে আমি রেড ক্রিসেন্ট থেকে তাকে নিয়ে ভাগলপুর হাসপাতালে যায়। সেখানে ডাক্তার জানান বাচ্চা প্রসবের সময় তার রগ কেটে ফেলেছে তাই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সে মারা গেছে। আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই।
নিহতে বাবা জামাল মিয়া বলেছেন, আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি। আমি দোষীদের শাস্তি চাই। আমার মত যেন কোন বাবার কোল খালি না হয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদনের কর্তব্য দুই জন মিডওয়াইফ শামিমা আক্তার ও আইরিন আক্তার অতিরিক্ত ব্লিডিংয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, বাচ্চা সুস্থভাবে ডেলিভারি করিয়েছি। ডেলিভারির সময় আমরা অতিরিক্ত রক্ত ক্ষণের জন্য ওষুধ ব্যবহার করেছি। ব্লিডিং বন্ধ হয়েছিল। হঠাৎ পেট ব্যথা হওয়ায় রোগীর স্বজনদের আল্টাসনোগ্রাফি করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। পরে শুনেছি মারা গিয়েছে। তারা আরও জানান, আমরা প্রতিদিন এখানে ১৫/২০ জন গর্ভবতী রোগীর বাচ্চা নরমালে ডেলিভারি করি। আমার এ বিষয়ে ট্রেনিং প্রাপ্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প. প. কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ জানান, ভৈরব রেড ক্রিসেন্ট নামে কোন নিবন্ধিত হাসপাতাল বা মাতৃসদন নেই। ডেলিভারির সময় রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি দুঃখজনক। তারা অবৈধ ভাবে ডেলিভারি করিয়েছে। আমি অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ মাকছুদুল আলম বলেন, ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর কোনো খরব পাইনি। যদি কোনো অভিযোগ পাই তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড