মো. জিয়াউর রহমান, নেত্রকোণা
দুই মাস বয়সের এক কন্যাশিশুকে রেখে গভীর রাতে স্বামীর ঘর থেকে পালিয়ে গেলেন তাসলিমা আক্তার ওরফে বিথী (২০) নামে এক পাষানী মা। গৃহবধূ তাসলিমা চলে যাওয়ার সময় একটি চিরকুট লিখে রেখে যান। চিরকুটে তিনি লিখেন, ‘আমি নিজের ইচ্ছাতেই চলে গেলাম। আর এ জন্য আমার স্বামী বা পরিবারের কেউ দায়ী নয় এবং আমার রেখে যাওয়া বাচ্চার প্রতিও আমার কোনো দাবি নেই।’
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ পৌর শহরের উত্তর দৌলতপুর এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। মা হারা ওই দুধের শিশুটির লালন-পালন নিয়ে গত ৮ দিন ধরে চরম বিপাকে পড়েছেন শিশুটির অসুস্থ দাদী মাজেদা বেগম (৫৮)।
জানা গেছে, গত প্রায় দেড় বছর আগে মোহনগঞ্জ পৌর শহরের উত্তর দৌলতপুর এলাকার লাহুত মিয়ার ছেলে রোমান মিয়ার (২২) সাথে একই উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে তাসলিমা আক্তার ওরফে বিথীর বিয়ে হয়।
গৃহবধূ তাসলিমার স্বামী রোমান মিয়া জানান, তার স্ত্রী তাসলিমা বিয়ের আগে তার মা জামিলা আক্তারকে নিয়ে ঢাকার মুন্সিগঞ্জ এলাকায় থেকে সেখানে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করত। আর সেখানে থাকা অবস্থায় ওই এলাকার আলীরাজ নামে এক যুবকের সাথে তাসলিমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবে তার প্রেমের এ বিষয়টি মা এবং মেয়ে দুজনই গোপন রেখে প্রায় দেড় বছর আগে তারা ঢাকা থেকে নিজ বাড়ি মোহনগঞ্জের উদয়পুর গ্রামে চলে আসেন।
পরে জয়নাল আবেদিন নামে স্থানীয় এক ঘটকের ঘটকালিতেই রোমান মিয়ার সাথে তাসলিমার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের ৪-৫ মাস যেতে না যেতেই গৃহবধূ তাসলিমা তার সাবেক প্রেমিক আলীরাজের সাথে গোপনে মোবাইলে কথা বলার বিষয়টি তার স্বামীর কাছে ধরা পরে এবং এ নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর পরের দিন রাতেই তাসলিমা কাউকে না জানিয়ে ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পালিয়ে ঢাকার মুন্সিগঞ্জে তার খালার বাসায় চলে যায়। পরে তাকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে গত ২১ জানুয়ারি তার স্বামী রোমান মিয়া বাদী হয়ে মোহনগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন। যার জিডি নম্বর ৭০২।
এ ঘটনার ৪ দিন পর ওই গৃহবধূকে তার মা বাবাসহ এলাকার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বুঝিয়ে শুনিয়ে পুনরায় তাকে স্বামীর ঘরে রেখে যান। পরে এ অবস্থাতেই গৃহবধূ তাসলিমার গর্ভে থাকা কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। এরপর সে পুনরায় ওই সাবেক প্রেমিকের টানে দুই মাস বয়সের তার ওই কন্যাশিশুটি রেখে গত ১৬ অক্টোবর রাতে পালিয়ে যায় এবং স্বামী রোমান মিয়া পুনরায় তার বিরুদ্ধে মোহনগঞ্জ থানা আরও একটি জিডি করেন। যার জিডি নম্বর ৮৯৪। এরপর থেকে মা ছাড়া ওই দুধের শিশুটির লালন পালন করা নিয়ে শিশুটির দাদী মাজেদা বেগম চরম বেকায়দায় পড়েছেন।
ওই কন্যা শিশুটির দাদী মাজেদা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠ বলেন, পৃথিবীতে এমন পাষাণ মা আছে বলে আমি কোনো দিন শুনি নাই। এই দুধের বাচ্চাটারে রাইখা কি কইরা একজন মা থাকতে পারে এটাই আমার প্রশ্ন? তিনি আরও বলেন, আমি অসুস্থ্য মানুষ, নিজেই বাতের ব্যথায় ভোগতাছি। এরপরেও কিতা আর করাম ফিটার খাওয়াইয়া কোনো রহমে আমার এই নাতনীটারে বাচাইয়া রাখতাছি।
মোহনগঞ্জ পৌরসভার স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার কামাল হোসেন রতন বলেন, আমি নিজে কয়েকদিনই রোমানদের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে বুঝিয়ে এসেছি। কিন্তু মেয়েটি মূলত স্বামীর ঘর করার কোনো রকম ইচ্ছে নেই। তবে এভাবে একটি শিশুকে ফেলে রেখে মায়ের চলে যাওয়াটা সত্যি দুঃখজনক।
এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. শওকত আলী বলেন, এমন একটি শিশুকে রেখে কীভাবে মা থাকতে পারে এটি আমি বুঝে উঠতে পারছি না। এ বিষয়ে মেয়েটির নামে থানায় একাধিক জিডিও রয়েছে। তবে মেয়েটি স্বামীর ঘর না করার ব্যাপারে অনড় রয়েছে ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড