তরিকুল ইসলাম তরুন, কুষ্টিয়া
৭ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন ও পাড় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে, গেল বছর উদ্ধার করা হয় দূষণ-দখল আর অপব্যবহারে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী নদী হিসনার দীর্ঘ আট কিলোমিটার এলাকা। ঐতিহ্যের হিসনা এখন পেয়েছে ভরা যৌবনরেখা, অপেক্ষায় পদ্মার পানি আর ভর মৌসুমের।
সম্প্রতি খনন হওয়া ৮ কিলোমিটার হিসনা পাড়ের মানুষ জানাচ্ছেন নতুন বিপত্তির কথা। নদী খনন করা মাটি দিয়ে পাড় বেঁধে রাখার দাবি থাকলেও কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের এই নদী পাড়ের মাটি বিক্রি করছে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড।
নদীর নাব্যতা ফেরানো, পরিবেশ ভারসাম্য এবং পাড় সংরক্ষণে সরকারের এই চলমান উদ্যোগ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা দিয়ে বয়ে চলা হিসনায় অব্যাহত থাকবে বলেও জানা গেছে।
সম্প্রতি হিসনা পাড়ের মাটি বিক্রি শুরু হলে নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অভিযোগের ঝুলি নিয়ে এলাকাবাসী দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দপ্তরে-দপ্তরে। কিন্তু তাতেও থামেনি মাটি বিক্রি।
দৌলতপুরের প্রাগপুর ইউনিয়নের মাদাপুর গ্রামবাসী আনারুল ঠাকুর বলেন, নদীর উভয় পাড়ের মাটির পাড় ওই মাটি দিয়ে বেঁধে দিলে সবচেয়ে ভালো হবে। এই মাটি টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করা হচ্ছে আমাদের অজান্তে।
একই গ্রামের টুকু শেখ বলেন, হিসনা খননে কৃষকদের উপকার হয়েছে। হিসনার পাড় আমরা এলাকাবাসী সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি, এক বছর পর হঠাৎ এসে এই মাটি কাটতে গেলে নদীর পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং নদী পাড়ের কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
হিসনা পাড়ের বাসিন্দা রাজু বলেন, আমরা চাচ্ছি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা থাক। নদীর মাটি নদীর পাড়ে থাক, এসব মাটি হিসনা পাড় বাঁধতেই কাজে লেগে যাবে, বিক্রয়ের কোন প্রয়োজন নেই। বাবু সরদার বলেন, মাটি কাটার জন্য, নদীর তীরবর্তী আমাদের জমির গাছগাছালি ও ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রতিনিয়ত হচ্ছে।
পার্শ্ববর্তী এলাকা মথুরাপুর ইউনিয়নে হিসনা নদী তীরবর্তী এক গৃহবধূ বলেন, আমরা চাই পাড় মজবুত থাকুক, যেখানকার মাটি সেখানেই থাকুক।
একই এলাকার পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক যুবক ভিডিয়ো ধারণ করা বক্তব্যে বলেন, মাটি তো পাড়ে আছে, সরকারি কোনো লোক এসে আমাদের সাথে আলাপ করেনি। সরকারি কোনো মানুষ এসেও এখানে মাটি বিক্রি করছে না, আমরা সরেজমিনে দেখছি, নদী কর্তৃপক্ষের কোনো লোক নেই।
এ দিকে শান্ত হিসনা পাড় অশান্ত হয়ে উঠেছে এই মাটি স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে। জড়িয়েছে পুলিশি ঘটনাও। দৌলতপুর থানা'র ওসি মজিবুর রহমান জানান, এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি মামলাও দায়ের হয়েছে, তবে এলাকা এখন শান্ত। প্রতিটা বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তদন্ত করা হবে। এলাকাবাসীর কোনো দাবি থাকলে তারা আইনশৃঙ্খলা অবনতি না ঘটিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইনের মাধ্যমে তাদের দাবি জানাতে পারে, সেই সুযোগ তো তাদের আছেই।
প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জমান মুকুল বলেন, সরকার যেহেতু মাটি বিক্রির প্রয়োজন মনে করছে সেহেতু আমাদের জায়গা থেকে কিছু করার নাই। তবে জনগণের ভোগান্তি সরকার জানলে নিশ্চয়ই সরকার এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
হিসনা তীরবর্তী আরেক ইউনিয়ন মথুরাপুরের চেয়ারম্যান মনোয়ার কবির মিন্টু বলেন, আমরা জনগণের পক্ষে, হিসনা পাড়ের মানুষ যা চাই আমরা তা-ই সমর্থন করি। এখানে জনগণ যা চাইবেন তা-ই বাস্তবায়ন করা হবে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, এলাকাবাসীর অনেকে মাটি স্থানান্তর চাই বলে জানিয়েছে, এজন্য খনন করা হিসনার কিছু-কিছু জায়গায় মাটি বিক্রি করা হয়েছে। তবে, মাটি নদীর পাড়েই থাকলে নদী বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো সমস্যা নেই। মানুষের বা নদীর ক্ষতি হয় এমন কিছু করা হবে না। যাদের জন্য নদী খনন করা হয়েছে তাদের যদি অসুবিধা হয় তাহলে জনগণের অসুবিধা করে ওইটা করবো না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী গেলো পনেরো দিনে নদী পাড়ের মাটি বিক্রি করা হয়েছে অল্প কিছু পরিমাণে, যা খুবই কম মূল্যের। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন। দিনে অন্তত ২শো গাড়ি (শ্যালো চালিত বিশেষ ধরনের গাড়ি) মাটি কাটা হচ্ছে হিসনার পাড় থেকে। যার গাড়ি প্রতি বাজারদর অন্তত ৫শ' টাকা।
সংশ্লিষ্ট সংসদীয় আসন কুষ্টিয়া-১ এর সংসদ সদস্য আ: কা: ম: সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ বলেন, হিসনা খনন করা মাটি পাড় বাঁধাইয়ের পর উদ্বৃত্ত থাকলে সেটা স্থানান্তর বা বিক্রয়ের জন্য এক বছর আগেই খনন পরবর্তী সময়ে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড কে বলেছিলাম। তারা সে সময় কাজটা তোয়াক্কা করেনি। এখন নদী পাড়ের পরিবেশ-প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। অসময়ে তারা কাজটি করতে আসলেও এ বিষয়ে আমাকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছুই জানায়নি। খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টা দেখছি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড