• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৃৎ শিল্পীরা

  মাজেদুল ইসলাম হৃদয়, ঠাকুরগাঁও

১১ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:২৭
শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৃৎ শিল্পীরা
ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৃৎ শিল্পীরা (ছবি : অধিকার)

আধুনিকের ছোঁয়ার হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎশিল্প। এর আগে সকল ক্ষেত্রেই দেখা যেত মৃৎশিল্পের ছোঁয়া। রান্না কাজে মাটির হাঁড়ি, মাটির থালা, মাটির কলসি, মাটির বাটিসহ নানা মাটির তৈরি জিনিস পত্র দেখা যেত। এছাড়াও ছোটদের খেলাধুলার জন্য নানারকম খেলনার জিসিনপত্র দেখা যেত।

বর্তমানে শুধু পহেলা বৈশাখ বা কোন মেলাকে ঘিরে শুধু নানা মাটির তৈরি তৈজসপত্র বানানো হয়। পহেলা বৈশাখে আর দেরি নাই তাই মাটির তৈরি নানা তৈজসপত্র বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছে মৃৎ শিল্পীরা।

অনেকেই মৃৎ শিল্পের এ পেশা ছেড়ে দিলেও বংশ পরম্পরায় অনেকেই ধরে রেখেছে এই পেশা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আকচা ইউনিয়নের পালপাড়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তৈজসপত্র তৈরির কাজ।

পালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বৈশাখ মাস আর বেশি দেরী নাই। তাই গত এক মাস থেকে খুব ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। বেশ কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা নিপুণ হাতে মাটির তৈরি ফুলদানি, হাতি, ঘোড়া, গরু, পাখি, পুতুল, ব্যাংক, মাছ, পেঁপে, কলাসহ বিভিন্ন খেলনা তৈরি করছেন। পাশাপাশি রং তুলির শেষ আঁচর দিচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, কাদামাটির এ শিল্প হারিয়ে হওয়ার পথে। পুরো পালপাড়ায় হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার হাতি, ঘোরা, পুতুল তৈরি করেন। বেচা-বিক্রি তেমন হয় না। এ পেশার মানুষের জীবন ধারণ করার মতো সচ্ছলতা নেই। ফলে বৈশাখেও পালপাড়ায় পাইকারদের আনাগোনা নেই। হারিয়ে গেছে এখানকার প্রাণচাঞ্চল্য।

তারা আরও জানায় শিল্পের আগ্রাসনে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত প্ল্যাস্টিক আর মেটাল দ্রব্যের ছড়াছড়ি থাকলেও মাটির তৈরি তৈজসপত্র হারিয়ে যায়নি একেবারে। অতীতের তুলনায় বর্তমানে ব্যবহার কম হলেও মাটির তৈরির তৈজসপত্রের প্রয়োজনীয়তা গ্রামীণ পরিবারে রয়ে গেছে এখনো। এছাড়া শহরে পরিবারেও ঘর সাজানোর সামগ্রী হিসেবে বেশ চাহিদা রয়েছে মাটির তৈরি নানা জিনিসপত্রের। আর এ কারণেই এখনো টিকে রয়েছে গ্রাম-বাংলার এই ঐতিহ্য।

মৃৎশিল্পী মহিদ্র চন্দ্র পাল জানান, গত দুই বছর করোনার কারণে কোনো বৈশাখী মেলা না হওয়ায় খেলনা বা শো-পিচ জাতীয় পণ্য বিক্রি হয়নি। এতে দু'বছর পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে। এ সময় এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে দেনা আরও বেড়েছে। তবে এ বছর কোনো বিধিনিষেধ না থাকলেও ক্রেতারা আসেন না। নিজেই বিভিন্ন মেলায় গিয়ে বিক্রি করি।

পালপাড়ার বাসিন্দা অশোক কুমার বলেন, এক সময় পাইকাররা বৈশাখের আগে আমাদের এখানে ভিড় করতেন। এখন আর পাইকার আসেন না। আমি নিজেই এগুলো তৈরি করে বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করি।

ধর্ম পাল বলেন, পালপাড়ায় এমন দুরবস্থা হবে কোনো দিন কল্পনা করিনি। এখন চাহিদা মতো আঠাল মাটি পাওয়া যায় না। দূরের গ্রাম থেকে মাটি আনতে হয়। মাটির অনেক দাম, শ্রমিকেরও দাম বেড়েছে। ফলে পুরাতন এই পেশা ত্যাগ করেছেন অনেকে।

ঠাকুরগাঁও কালচারাল অফিসার সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে সরকার কাজ করছে। দেশি কৃষ্টি আর স্বকীয়তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মাটির বাসন কোসন। এ শিল্প যাতে বিলুপ্ত না হয় সেদিকে আমাদের নজর আছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড