• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিচারের নামে গ্রাম পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে হাত বেঁধে নির্যাতন

  মো. মাহাবুবুর রহমান রানা, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)

১১ এপ্রিল ২০২৩, ১৪:৩৫
বিচারের নামে গ্রাম পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে হাত বেঁধে নির্যাতন

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বিচারের নামে নিরীহ দুই ব্যক্তিকে গ্রাম পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে হাত বেঁধে মারপিটের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার তিল্লি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে তিল্লি ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে ঘটনাটি ঘটেছে। ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরে এক গ্রামবাসীর হাতবাঁধা ছবি ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এ দিকে ওই দুই গ্রামবাসীকে হাত বাঁধা ও মারধরের ঘটনা থেকে উদ্ধারের জন্য ৯৯৯ এ ফোন করেন প্রতিবেশী শৈলনুদ্দিন। অপর প্রান্ত থেকে শৈলনুদ্দিনকে জানানো হয় যাকে মারধর করছে তাকে ৯৯৯ এ ফোন দিতে বলেন। তবে সাটুরিয়া থানা সারাদিনে ৯৯৯ এ ফোন পাননি বলে জানান ওসি সুকুমার বিশ্বাস।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মারধরের শিকার দুজন হচ্ছেন পূর্ব চরতিল্লি গ্রামের মো. বরকত আলী (৬৫) ও মো. হযরত আলী (৬০)। গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে তিনজন গ্রাম পুলিশ এসে দুজনকে ইউনিয়ন পরিষদে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন- চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম ধলাসহ একাধিক ইউপি সদস্যরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে, প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান চেয়ারম্যান ও সদস্য আতোয়ার রহমান মিলে দুজনকে গালিগালাজ এবং মারধর করে। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের নির্দেশে হযরত আলীর হাত পিছমোড়া করে দড়ি দিয়ে বাধা হয়। বেলা তিনটার দিকে দুজনকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে হযরত আলী রাস্তা কাঁটার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সরকারি সড়কটি আমাদের পৈত্তিক সম্পত্তির উপর দিয়ে চলে গেছে। পাশের প্রতিবেশী হাসানেরও কিছু অংশ সড়কে রয়েছে। মো. হাসানের অংশ দিয়ে চলাচল করলেই প্রতিনিয়ত ঝগড়া করেন। তার রাস্তা দিয়ে আমার পরিবারকে চলাফেরা করতে না দেওয়ায় আমিও আমার অংশের সড়ক কেটে দেয়। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান ও সদস্য আতোয়ার রহমান তাদের দুজনকে মারধর করে। চেয়ারম্যান তার গালে চড় থাপ্পড় মারে এবং গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে তার হাত বেধে বারান্দায় ২ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

তিনি আরও বলেন, এই বয়সে এমনভাবে অপমানিত হতে হবে চিন্তা করতে পারিনা। তিনি বলেন আমি এর বিচার চাই। তবে তিনি স্বীকার করে বলেন একটা রাস্তা নিয়ে প্রতিবেশীর সাথে তার বিরোধ রয়েছে। এরই জের ধরে রাস্তার কিছু অংশ কেটে ফেলেন।

মো. বরকত আলী বলেন, চেয়ারম্যান নিজের হাতে আইন তোলে নিতে পারেন না। সে রাস্তা সংস্কার করার জন্য আমাদের বলত। তার কথামতো কাজ না করলে আমাদের যে বিচার করত সে। চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম ধলা আমাদের নিরীহ পেয়ে হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখে সমাজে হেয়পন্ন করেছে। এমনকি চেয়ারম্যানের শাস্তি দাবি করেন তিনি।

চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম ধলার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মারধর ও হাত বাধার কথা অস্বীকার করেন। তবে তিনি চৌকিদার দিয়ে দুজনকে ডেকে আনার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, একটি সরকারি রাস্তার মাটি কুপিয়ে জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করায় তাদের ডেকে আনা হয়েছিল। এ ধরণের কাজ আর করবেনা মুচলেকা দিয়ে তারা ভুল স্বীকার করেছেন। তবে হজরত আলীর হাতবাঁধা ছবি বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আরা জানান, তিল্লি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাকে একটা সরকারি রাস্তা কেটে ফেলার ছবি পাঠিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে বিচার সালিশের নামে কাওকে মারধর কিম্বা হাত বাধার মত ঘটনার কথা তার জানানেই। তিনি বলেন বিচারের নামে কাউকে মারধর কিম্বা হাত বাধতে পারেননা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা কোন সদস্য। যদি এটা হয়ে থাকে তাহলে অন্যায় হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একই কথা বলেন সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকুমার বিশ্বাস। তবে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড