কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন নামে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মচারীর মৃত্যুর ঘটনায় র্যাব গঠিত তদন্ত দল নিহত সুলতানা জেসমিনের পরিবারের সদস্যদের জবানবন্দি নিয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুর থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত র্যাব তদন্ত দল জেসমিনের ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত ও তার ভগ্নীপতি আমিনুল ইসলাম নওগাঁ সার্কিট হাউসে ডেকে নিয়ে জবানবন্দি গ্রহণ করে।
জেসমিনের ছেলে ও ভগ্নীপতির জবানবন্দি গ্রহণ শেষে র্যাব সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের দৃষ্টি এড়িয়ে সার্কিট হাউসের পেছনের সিঁড়ি দিয়ে পূর্ব থেকেই প্রস্তুত রাখা গাড়িতে উঠে সার্কিট হাউস ত্যাগ করে। র্যাব সদস্যরা চলে যাওয়ার পর সার্কিট হাউস থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন জেসমিনের ভগ্নীপতি আমিনুল ইসলাম ও তার ছেলে শাহেদ কথা বলেন।
আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত ২২ মার্চ জেসমিনকে র্যাব সদস্যরা আটকের পর নওগাঁ হাসপাতালে থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৪ মার্চ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেহেতু আমি ও জেসমিনের ছেলে সৈকত জেসমিনের সঙ্গে ছিলাম। এই সময়ের মধ্যে যা কিছু ঘটেছে তাই বর্ণনা আকারে আমাদের নিকট থেকে জানতে চেয়েছেন তারা। তদন্ত টিম আমাদের দুজনের বক্তব্য লিখিত আকারে গ্রহণ করেছে।
আদালত, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদ বা মায়ের মৃত্যু নিয়ে কিছু না বললেও মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করতে চান বলে সাংবাদিকদের জানান।
এর আগে গত রবিবার বিকালে জেসমিনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন তিনি।
এ বিষয়ে তিনি রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে এর বেশি কিছু জানি না। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জেসমিনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কি উঠে এসেছে তা নিয়ে কেউ কথা বলছেন না। আদালতে প্রতিবেদন পৌঁছানোর আগে ‘স্পর্শকাতর’ এই বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলবেন না বলে জানিয়েছেন।
নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বলেন, আমি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে শুনলাম যে রিপোর্ট এসেছে। কী রিপোর্ট এসেছে সেটা আমি জিজ্ঞেস করিনি। রিপোর্ট কোর্টে গেলে সবাই জানতে পারবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজপাড়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সুভাষ চন্দ্র বর্মণ প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার কথাই অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি রিপোর্ট পাইনি। আমি কিছু বলতে পারব না।
এ দিকে র্যাবের হেফাজতে নির্যাতন নয়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে জেসমিন সুলতানার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় ও ময়নাতদন্তকারী টিমের প্রধান অধ্যাপক ডা. কফিল উদ্দিন।
সোমবার ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, জেসমিনের মাথায় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। বড় কোনো আঘাত নেই। মাথায় পাশে এবং হাতে যে আঘাত পাওয়া গেছে সে আঘাত মৃত্যু হওয়ার মত নয়।
গত ২২ মার্চ ভূমি অফিসের কর্মী নওগাঁ শহরের জনকল্যাণপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুলতানা জেসমিনকে আটক করে র্যাব। এরপর অসুস্থ অবস্থায় তাকে প্রথমে নওগাঁ সদর হাসপাতালে এবং পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
পর দিন ২৩ মার্চ বিকালে রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক। চিকিৎসাধীন পরদিন শুক্রবার মারা যান জেসমিন। আটকের পর র্যাব হেফাজতে জেসমিনকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড