• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অবৈধ ৩১ ইটভাটার দখলে মনিরামপুর (পর্ব-২)

  মোস্তাকিম আল রাব্বি সাকিব, মনিরামপুর (যশোর)

৩০ মার্চ ২০২৩, ১৪:৪৪
অবৈধ ৩১ ইটভাটার দখলে মনিরামপুর (পর্ব-২)
অবৈধ ইটভাটায় ইট তৈরি হচ্ছে (ছবি : অধিকার)

যশোরের মনিরামপুরে কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না অবৈধ ইটভাটার পরিবেশ দূষণের মহা উৎসব। আদালতের নির্দেশনা থাকায় নাম মাত্র কয়টি ইটভাটায় অভিযান চললেও সবুজে ঘেরা মনিরামপুর জুড়ে চলছে ৩১টি অবৈধ ইটভাটা। এই ইটভাটাগুলো যেমন পরিবেশ দূষণ করছে তেমনিভাবে সাধারণ কৃষকের ফসলি জমি নষ্ট করছে।

চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক বিশেষ সভায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

সভায় পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইটভাটায় কৃষি জমির মাটির ব্যবহার, কৃষি জমি বিনষ্টকরণ বন্ধ করতে হবে। ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে গাছপালা কেটে কাঠ পোড়ানো বন্ধ করাসহ অবৈধ ও পরিবেশ দূষণকারী ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এ সময় তিনি ২০২৫ সাল নাগাদ সব সরকারি কাজে শতভাগ পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট ব্যবহার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

গত বুধবার (২২ মার্চ) দুপুরে মনিরামপুরের বেশ কয়েকটি ইটের ভাটায় গিয়ে দেখা যায়, উৎসবের মত ইট তৈরির কাজ করছেন শ্রমিকরা। অবৈধভাবে কৃষকের জমির মাটি কেটে ভাটাগুলোতে পাহাড় সমান উঁচু করেছে। এছাড়া বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ভাঙা হলেও সেগুলো পুনরায় ইট তৈরির কাজ শুরু করেছে। বৈধ কাগজপত্র এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন অবৈধভাবে রমরমা ব্যবসায় মেতে আছে মনিরামপুরে ইটের ভাটাগুলো।

উপজেলাতে অবস্থিত মোট ৩১টি ইটের ভাটার একটিতেও নেই বৈধ সনদ। প্রশাসনকে ম্যানেজ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে টিকে আছে ভাটা মালিকগন। তাহলে কোথা থেকে কি হয়? এরূপ প্রশ্ন জনমনে বিরাজমান। অবৈধ ইট ভাটা গুলো চালু থাকলে হয়তো এক শ্রেণির লোকজন লাভবান হন ঠিকই কিন্তু দিনশেষে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের কৃষি সমাজ। ইটের ভাটা থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল। বিপাকে পড়েছেন ছাত্রছাত্রীসহ স্থানীয়রা। ভাটার ইট ও মাটি বহন করা বেপরোয়া ট্রাক চলার কারণে নষ্ট হচ্ছে রাস্তা। মাটি কাটায় বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। এসব অবৈধ ইটভাটা ও মাটি ব্যবসায়ীদের ভারী যান চলাচলের ফলে মনিরামপুরের বেশ কয়েকটি পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টির সময় কাদা এবং গ্রীষ্মের সময় ধুলার রাজ্যে পরিণত হয় এই অঞ্চলগুলো।

স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীদের। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতরা বেশিরভাগই প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকে দেখেও না দেখার ভান করছে।

অবৈধ ভাটার বিষয় মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেনের সাথে জানান, আমার এ বিষয় জানা নাই কারোর বৈধ কাগজ আছে কিনা, বৈধ কাগজ ছাড়া তো সে চলতে পারে না, লাইসেন্স নবায়ন আছে কিনা সেইটা দেখার বিষয়। তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা অনুমতি নিয়েছে কি-না এটা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অবৈধভাবে ট্রাক্টরে মাটি টানার বিষয় তিনি জানান, আমি যোগদান করার পর থেকেই দুইটি অভিযান পরিচালনা করেছি এবং দরকার হলে আবারো মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।

মনিরামপুর ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি হাজী বাবর আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দৈনিক অধিকারকে জানান, বৈধ কাগজপত্র বিহীন মনিরামপুর উপজেলায় মোট ৩১টা ইট ভাটা চালু আছে।তার দাবি পরিবেশ অধিদপ্তর নতুন করে সনদ নবায়ন করছে না।

আরও পড়ুন : অবৈধ ৩১ ইটভাটার দখলে মনিরামপুর (পর্ব-১)

সর্বশেষ পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী- ইটভাটাগুলো পরিচালিত হচ্ছে কি-না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বশেষ আইন করার পর আর কোনো নতুন ভাটা মনিরামপুরে তৈরি হয়নি এবং চলমান সকল ভাটাগুলো সংশোধনী আইনের পূর্বে তৈরি করা।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড