• শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাঙামাটি জেলা আ. লীগের একপেশে কমিটি পুনর্গঠনের দাবি 

  এম. কামাল উদ্দিন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার (রাঙামাটি)

২৮ মার্চ ২০২৩, ১২:৫৭
রাঙামাটি জেলা আ. লীগের একপেশে কমিটি পুনর্গঠনের দাবি 

নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি নিয়ে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তীব্র হয়ে উঠেছে। সম্মেলনের দীর্ঘ ১০ মাস পর ২১ মার্চ দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে এ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি।

কমিটতে জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত এবং শারীরিকভাবে সক্ষম ও যোগ্য ১৯ জনকে বাদ দিয়ে বিপরীতে বিভিন্ন উপজেলা ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সত্ত্বেও ২৭ ব্যক্তিকে দ্বৈত পদবিতে রাখা হয়েছে বলে দাবি উঠেছে।

সোমবার রাঙামাটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়া জেলা আওয়ামী লীগের জ্যৈষ্ঠ নেতারা এসব দাবি করেছেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের নতুন অনুমোদিত কমিটিকে সভাপতি দীপংকর তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বরের সিন্ডিকেটভুক্ত একপেশে অভিহিত করে বলা হয়, এর ফলে রাঙামাটি জেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় শক্তির মারাত্মক সংকুচিত হয়েছে। অবিলম্বে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় শক্তি ধরে রাখতে সিন্ডিকেটভুক্ত একপেশে কমিটি সংশোধন করে পুনর্গঠনের জন্য দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জোরালো দাবি জানানো হয়েছে।

সকালে রাঙামাটি শহরের বনরুপার একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাদ পড়া নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ‘৭৫’ পরবর্তী কঠিন দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত জ্যৈষ্ঠ নেতা আশুতোষ বড়ুয়া, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন, মো. জমির উদ্দিন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. হানিফ, উপ-দপ্তর সম্পাদক জাকির হোসেন সেলিম, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অমর কুমার দে, সদস্য জয়সেন তঞ্চঙ্গ্যা, নুরুল আজম চৌধুরী।

এছাড়া বাদ পড়া অন্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ, জ্যোতির্ময় চাকমা কেরল, সদস্য সমরেশ দেওয়ান, চারু বিকাশ চাকমা, মো. শফিকুল ইসলাম, অমর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, জলঙোরা পাংখোয়া, সুচিত্র চাকমা, রফিক তালুকদার ও প্রদীপ বড়ুয়া।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৪ মে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় সভাপতির দুই প্রার্থীর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা সরে দাঁড়ানোর ফলে দীপংকর তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

দুই প্রতিদ্বন্ধির মধ্যে মো. কামাল উদ্দিনকে পরাজিত করে মো. মুছা মাতব্বর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আমরা নির্বাচিত দু’জনকেই অভিনন্দন জানিয়েছি। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি এবং উদ্বোধক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এশারফ হোসেন এমপি।

বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপিসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে রাঙামাটি সার্কিট হাউসে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের নিয়ে এক সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় উপস্থিত প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের মধ্যস্থতায় নিখিল কুমার চাকমা সরে দাঁড়াতে সম্মত হলে দীপংকর তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন।

এ অধিবেশনে উপস্থিত প্রেসিডিয়াম সদস্য মোশারফ হোসেন তার বক্তব্যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সভাপতি প্রার্থী দীপংকর ও নিখিল এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মুছা মাতব্বর ও কামাল উদ্দিন- এ চারজন বসে আলোচনা করে ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠন করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠাতে।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, নিখিল কুমার চাকমা ও কামাল উদ্দিনের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই একটি একপেশে কমিটি তৈরি করে অনুমোদনের জন্য গত বছর ২০ ডিসেম্বর কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানে গত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদবির ত্যাগী, পরীক্ষিত, সাংগঠনিক কার্যক্রমে দক্ষ ও শারীরিকভাবে সক্ষম ১৮ জন এবং ‘৭৫’ পরবর্তী দলের কঠিন দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ বড়ুয়াসহ মোট ১৯ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

পরবর্তীকালে কেন্দ্রের নির্দেশে তা প্রত্যাহার করে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি আরেকটি কমিটি পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। দীপংকর তালুকদার ও মুছা মাতব্বর তাদের ব্যক্তি স্বার্থে অন্ধ হয়ে দলকে একটি সিন্ডিকেট কমিটিতে পরিণত করার হীন- উদ্দেশ্যে ‘৭৫’ পরবর্তী দলের কঠিন দুঃসময়ে যারা দলকে তিল তিল করে আজ পর্যন্ত শক্তিশালী করেছেন, তাদেরকে বাদ দিয়ে এবং চরম অবমূল্যায়ন করে বিভিন্ন উপজেলা ও সদ্য বিএনপি থেকে আগত লোকজন দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি তৈরি করেছেন।

এ কমিটিতে বিভিন্ন উপজেলা ও সহযোগী সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সত্ত্বেও ২৭ জনকে দ্বৈত পদবি দেওয়া হয়েছে। এতে দলের শক্তিকে মারাত্মক সংকুচিত করা হয়েছে। কমিটিতে ২৭ জনকে দ্বৈত পদবি না দিয়ে দীর্ঘদিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও যোগ্য লোকদের রাখা হলে দলের শক্তি আরও তীব্র হয়ে উঠত।

এসব কারণে দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা চরম হতাশা ও অপমানিত বোধ করছেন। তাই দলের শক্তিকে ধরে রাখতে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেটভুক্ত এক পেশে কমিটি সংশোধন করে পুনর্গঠনের জন্য জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ দাবি করছি।

এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর বলেন, যারা এসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তারা দলীয় স্বার্থ-পরিপন্থি কাজ করে চলেছেন। তাদের এসব কাজে কোনো লাভ নেই। তাদেরকে এবার কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার মূল কারণ হল- তারা প্রতিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে থাকেন এবং দলীয়ভাবে সক্রিয় ছিলেন না। দলীয় স্বার্থে তাদেরকে পাওয়া যায় না।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড