• শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জন্মদিন পালন করা হলো না নাফিসের, দুই বন্ধুর চিরবিদায়

  মো. আবুবকর মিল্টন, বাউফল (পটুয়াখালী)

২৪ মার্চ ২০২৩, ১২:৫৩
জন্মদিন পালন করা হলো না নাফিসের, দুই বন্ধুর চিরবিদায়
স্বজনদের আর্তনাদ (ছবি : অধিকার)

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ছিল নাফিসের ১৬তম জন্মদিন। ক্লাসের বন্ধুরা তাকে সারপ্রাইজ দেয়ার কথা। স্কুল ছুটির সময় বন্ধুদের সাথে কথা হয়, পরের দিন ক্লাসে যেন চকলেট নিয়ে আসেন নাফিস। ছোট আয়োজনও করবে বলে ঠিক করেছিলেন বন্ধুকে না জানিয়ে। পরের দিন নাফিস স্কুলে এসেছেন কিন্তু ক্লাসে নয়, সবার কাছ থেকে চির বিদায় নিতে, ক্লাসে ফিরে বন্ধুদের সাথে জন্মদিন পালন করা হলো আর। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া নাফিস ও বাপ্পি পরপাড়ে চলে গেছেন ৯ম শ্রেণির কিশোর গ্যাংয়ের হামলায়। অঝরে কেঁদে বিদায় জানিয়েছেন সহপাঠী ও এলাকাবাসী।

সহপাঠীদের সূত্রে জানা গেছে, জন্মদিনের প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করার কথা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন নাফিস। স্কুল থেকে ২শ মিটার দুরেব্রীজের ওপর পৌঁছলে আগে থেকে সেখানে ওঁত পেতে থাকা নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রায়হান কাজী, হাসিবুল কাজী, সৈকত, মশিউর রহমান (নাইম), নাঈম হোসেন সংঘবদ্ধভাবে নাফিসের ওপর হামলা করে। তাকে বাঁচাতে মারুফ ও সিয়াম এগিয়ে আসলে৩জনকেই ধারালো অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে। এতে সিয়াম প্রাণে বেঁচে গেলেও মৃত্যুর কাছে হার মানতে হয় নাফিস ও মারুফকে।

এ সময় গুরুতর জখম অবস্থায় স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে বাউফল হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি দেখে বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন চিকিৎসক। সেখানে একই সাথে মারা যান নাফিস ও মারুফ। গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে সেখানে হৃদয় বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়। সহপাঠী ও স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ। অশ্রুসিক্ত বিদায়ে হাজার হাজার উৎসুক লোক এসে ভিড় করেন প্রিয় মুখ দুটোকে এক নজর দেখতে। মৃত্যুর ২২ ঘণ্টা পর দাফন সম্পন্ন করেন সহপাঠী, শিক্ষক ও স্থানীয়রা।

সহপাঠী মারুফা, সাঞ্জিদা, জিনিয়া, রাবেয়া, রিমা, জান্নাত, সুমাইয়া, সুরাইয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন- আমরা নাফিসের সাথে ছুটির আগে কথা বলেছিলাম পরের দিন তার জন্মদিনের ট্রিট চেয়ে বায়না ধরেছিলাম। কালকে সে চকলেট নিয়ে আসবে বলেছিল। আমরাও ছোট আয়োজন করে তাকে সারপ্রাইজ দিব ভেবে রেখেছি। আমরা মাত্র স্কুল থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসেছি এর মধ্যে দেখতে পেলাম কিছু লোক নাফিসকে নিয়ে স্কুল সংলগ্ন একটি ফার্মেসিতে নিয়া এসেছে। অনেক রক্তাক্ত ছিল নাফিসও মারুফ।

তারা আরও বলেন- এদের মতো মেধাবীদের এভাবে চলে যাওয়া মেনে পারছেন না তারা। এ সময় সিয়াম ও মারুফের খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান সকলে।

প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, মারুফ ও নাফিস দুজনই মেধাবী ছাত্র। এলাকায় এদের নামে কোনো বদনাম নেই। নিয়মিত ছাত্র হিসেবে সুনামের সাথে এলাকায় পরিচিত ছিল। নাফিস পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে। মারুফও বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র ছিল। আমাদের মেবাধী দুই শিক্ষার্থীকে এভাবে হারাতে হবে কোনো চিন্তাও করিনি। যারা এ ঘটনার সাতে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যাতে ভবিষ্যতে এ রকম কোনো ঘটনা আর না ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, হামলাকারীরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। তারা প্রায়ই এলাকায় মারামারি ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এলাকাবাসী তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন ধরনের নেশার সাথেও জড়িত।

এসময় পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সাথে জড়িতদের খুব তাড়াতাড়ি গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ একই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র রাহান কাজি, সাইদুর রহমান সৈকত, মশিউর রহমান নাঈম, নাঈম হোসেন, হাসিবুল হাসানসহ পাঁচজনের হামলায় নিহত হন ১০ম শ্রেণির ছাত্র নাফিস ও মারুফ।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড