• শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রবাস ফেরত স্বামীকে পারিবারিক কলহে খুন করেন স্ত্রী

আদালতে দুই আসামির স্বীকারোক্তি

  এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

২৪ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৩
প্রবাস ফেরত স্বামীকে পারিবারিক কলহে খুন করেন স্ত্রী
গ্রেফতারকৃত আসামিরা (ছবি : অধিকার)

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পারিবারিক কলহের জেরে প্রবাস ফেরত স্বামী এমদাদুল হককে (৪৮) পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন ঘাতক স্ত্রী নারগিস মোস্তারি (৪০)।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) চট্টগ্রাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন নারগিস ও ভাড়াটে খুনি আইয়ুব নবী। নিহত এমদাদুল হক উপজেলার ১৫নং ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াহেদপুর গ্রামের ফরাজি বাড়ির মৃত মনছুর আহম্মদের পুত্র।

এ দিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত এমদাদের ছোট ভাই কামলা পাশা বাদী হয়ে বুধবার (২২ মার্চ) রাতে নারগিস মোস্তারি (৪০) ও আইয়ুব নবীকে (২২) আসামি করে মিরসরাই থানায় একটি হত্যা মামলা (নং ১৩) দায়ের করেন। নারগিস সাহেরখালী ইউনিয়নের মধ্যম সাহেরখালী গ্রামের আলা মিয়া চৌধুরী বাড়ির আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে।

আইয়ুব নবী একই বাড়ির নিজাম উদ্দিনের ছেলে। সে পেশায় দিনমজুর।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এমদাদের স্ত্রী নারগিস জানান, ২০০৪ সালে এমদাদের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী প্রবাসে থাকতেন। প্রবাসে থাকাকালীন ঠিকমতো টাকা পয়সা দিতো না, অনেক কষ্ট দিতো। এরমধ্যে তাদের দুইটি সন্তানের জন্ম হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্বামী একেবারে দেশে চলে আসেন। দেশে আসার পরও ঠিকভাবে টাকা পয়সা খরচ করতো না।

তিনি বলেছিলেন, এ নিয়ে আমার স্বামীর সাথে প্রায়ই ঝগড়া হতো। তার আচরণে আমি অতিষ্ঠ হয়ে মেরে ফেলার মনস্থির করেছি। এরপর বিষয়টি আমাদের বাড়ির কাজের লোক আইয়ুব নবীকে বলি। সে প্রথমে রাজি না হলেও পরে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার স্বামীকে খুন করতে রাজি হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার ৩ দিন আগে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি ওয়াহেদপুরে চলে আসি। আসার সময় সাহেরখালী ভোরের বাজারের একটি ফার্মেসী থেকে ঘুমের ঔষধ ক্রয় করে সাথে নিয়ে আসি।

তার দাবি, আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার (২১ মার্চ) আছরের পর রান্না করা সেমাইয়ের সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিই। সেমাই খেয়ে আমার স্বামী অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর আইয়ুব নবীকে ফোন করে বাড়িতে আসতে বলি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সে আমার ঘরে আসে। তখন আমার স্বামীর জ্ঞান ফিরে আসে। তখন তাকে বলি ডাক্তার এসেছে, তোমাকে চিকিৎসা করতে। এরপর আমি একহাত চেপে ধরি, আইয়ুব নবী আরেক হাতে জিআই তার পেঁচিয়ে মাল্টিফ্লাগ থেকে সংযোগ দিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর মাল্টিফ্লাগ পাশের পুকুরে ফেলে দিয়েছি।

জবানবন্দিতে নারগিস বলেছেন, মারা যাওয়ার পর আমার স্বামীর মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে আইয়ুব নবীকে ভাড়ার জন্য দিই। এরপর রাতে সে চলে যায়। পরবর্তীতে রাত ২টায় আমার দেবর কামাল পাশাকে ফোন করে তার ভাই বিদ্যুৎপৃষ্টে মারা যাওয়ার বিষয়টি জানাই।

নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী কামাল পাশা বলেছেন, আমরা শুরু থেকে বলেছি। আমার ভাইকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আদালতে দেওয়া আসামির জবানবন্দি অনুযায়ী আমাদের কথা সত্য হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতার করার জন্য আমি মিরসরাই থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যাতে অন্য কোনো স্ত্রীর হাতে তার স্বামীকে নির্মমভাবে খুন হতে না হয়।

মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন বলেন, এমদাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্ত্রী নারগিস ও ভাড়াটে আইয়ুব নবীকে আসামিকে করে তার ছোট ভাই কামাল পাশা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এজারহারনামীয় দুই আসামিকে গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে প্রেরণ করি। বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে দুই আসামি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার আলামত জিআই তার, মাল্টিফ্লাগ ও ৫০০ টাকার একটি নোট উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।

উল্লেখ্য, গত বুধবার ভোরে ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াহেদপুর এলাকায় এমদাদুল হকের ঘর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে মিরসরাই থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাদের জন্য স্ত্রী নারগিস মোস্তারিকে আটক করা হয়। একই দিন ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আইয়ুব নবীকে আটক করা হয়।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড