• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

এ দায় কার?

নোটিশের পরও সচল ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি

মামলা করে সুযোগ নেন নগর পরিকল্পনাবিদ

  তুষার আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ

১৯ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৬
মামলা করে সুযোগ নেন নগর পরিকল্পনাবিদ
বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসাবশেষ (ছবি : অধিকার)

ভবনটি শত বছরের পুরনো। বেশ কয়েক বছর আগেই এটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে নোটিশ দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। এরপরও তা ভাড়া দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ভবন মালিক।

তবে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে সনাক্ত করার পরও ওই ভবনে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল কোন বলে- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে। অনেকে আঙ্গুল তুলছেন সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দিকেই। কেননা, ঝুঁকিপূর্ণ শনাক্ত এবং নোটিশ করার পরও সেই ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ কী করে পেলেন সেই প্রশ্ন এখন জোরালো হচ্ছে।

এর উত্তরে সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মঈনুল ইসলাম বলেছেন, আমরা তাদের আগেই নোটিশ করেছিলাম। কিন্তু নোটিশ করার পর হাইকোর্টে উত্তরাধিকাররা মামলা করার মাধ্যমে ভবন পরিচালনার সুযোগ নেয়। এখানেও তাই ঘটেছে।

জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টার দিকে শহরের নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকার ২৮নং আর.কে. দাস রোডে অবস্থিত জেলা আটা-ময়দা মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ইলিয়াস দেওয়ানের মালিকানা দোতলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।এতে আওলাদ হোসেন (৪৫) নামে এক কর্মচারীর মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হয় আরও আটজন।

ভবনটিতে মোট ছয়টি দোকান ভাড়া দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে দোতলায় অবস্থিত রাজলক্ষ্মী ভাণ্ডার নামক একটি মসলার দোকান থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত ঘটে বলে জানা গেছে। ভবনে থাকা শ্রী মা ভাণ্ডার নামক ঠোঙ্গা ও কাগজের দোকান, গরিবে নেওয়াজ নামক লবণের দোকান, গোবিন্দ ভাণ্ডার নামক ভূষা মালের দোকান, জনতা এন্টার প্রাইজ ও দয়াল নন্দ ট্রেডার্স নামক দুটি ডাউলের দোকানের পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। বিস্ফোরণে গরিবে নেওয়াজ ভাণ্ডারের সাঁটার উড়ে গেছে। জনতা, শ্রী মা ভাণ্ডার ও রাজলক্ষ্মী ভাণ্ডারের দোকানের ভেতরে ছাদ ভেঙে পড়েছে। ভবনের পেছনের অংশ ধসে পড়েছে।

বয়সের ভারে জরাজীর্ণ ওই ভবনে এ নিয়ে মোট তিনবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ভবনটিতে থাকা জনতা এন্টারপ্রাইজ নামক ডালের দোকানের মালিক রামু সাহা বলেন, এই নিয়ে ওই ভবনে তিনবার বিস্ফোরণ ঘটেছে। কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া প্রথমবারের বিস্ফোরণে আরও একজন নিহত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ততটা শক্তিশালী না হলেও গতকাল ঘটে যাওয়া সবশেষ বিস্ফোরণটির ভয়াবহতা পিলে চমকে দিয়েছে সকলের। একজন নিহত এবং ৮জন আহত হয়েছে। ভবনটিও প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আমাদের দোকানেই প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একাধিকবার বিস্ফোরণ ঘটে যাওয়া ওই ভবনে গতকালের ঘটনার সূত্রপাত জমে থাকা গ্যাস থেকে। ঘটনাস্থলে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরুল আহমেদ মুঠোফোনে বলেছেন, ধারণা করছি গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকে ভেতরে গ্যাস জমে ছিল। এতেই বিস্ফোরণ ঘটেছে।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরে ৪২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সনাক্ত করেছে সিটি করপোরেশন। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের অধিকাংশই ব্যবহৃত হচ্ছে। করোনা মহামারির আগেও নারায়ণগঞ্জের মার্ক টাওয়ারসহ বেশ কয়েকটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে সনাক্ত করতে দেখা গিয়েছিল ফায়ার সার্ভিসকে। ওই ভবনে ফায়ার এক্সিট বা অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকায় তা লাল রঙ দিয়ে চিহ্নিতও করা হয়েছিল তৎকালীন সময়ে। তবে ভবনটিতে কর্মযজ্ঞ চলছে পুরোদস্তর। প্রশ্ন উঠেছে, ঝুঁকিপূর্ণ সনাক্ত করার পরও শহরের বুকে এ সকল ভবন চলছে কী করে?

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. ফখরুদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিত্যক্ত ঘোষণা করার দায়িত্ব ফায়ার সার্ভিসের না। ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্ব হলো কোনো ভবনে আগুন লাগলে বা কোনো উদ্ধার কাজের প্রয়োজন হলে সেখানে সেই দায়িত্ব পালন করা। ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করার দায়িত্ব রাজউক ও সিটি করপোরেশনের। নিতাইগঞ্জে যেই ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়নি। আমাদের ইঞ্জিনিয়ার নেই।

এ দিকে নোটিশ করার পরও ওই ভবনে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এবং এমন বিস্ফোরণে যেই তাজা প্রাণ ঝড়ে পড়ল আর মৃত্যু মুখে উপনীত হলো আরও আটজন- এর দায় কার? সেই প্রশ্নের উত্তর-ই বা মিলবে কোথায়?

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড