• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাড়ি নির্মাণে বাধা ও হামলার ঘটনায় পুলিশের দ্বারস্থ ভুক্তভোগীরা

  নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

১৬ মার্চ ২০২৩, ১৫:৫৯
বাড়ি নির্মাণে বাধা ও হামলার ঘটনায় পুলিশের দ্বারস্থ ভুক্তভোগীরা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নিজ পৈত্রিক ভিটায় বসতবাড়ি নির্মাণের সময় বাধা ও হামলা শিকারের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী আকলিমা বেগম। গতকাল বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুরে শহরের চন্ডিবের নান্নু কাজী বাড়িতে সালিশি বৈঠকে রায় দেওয়ার পরেই এই হামলার ঘটনা ঘটে। পরে ১৬ মার্চ সকালে ভৈরব থানায় গিয়ে এই অভিযোগ দায়ের করা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পরধনলোভী, ভূমিদুস্য, দাঙ্গাবাজ, উগ্রমেজাজী, দুষ্ট ও খারাপ প্রকৃতির লোক। তাহারা দীর্ঘদিন যাবৎ জমি সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়া অভিযোগকারী আকলিমা বেগমের সহিত শত্রুতা পোষণ করিয়া আসিতেছে এবং তার ও তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মারধর ও খুন-জখমের হুমকি প্রদান করিয়া আসিতেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ মার্চ সকাল অনুমান সকাল সোয়া ১১টার সময় দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র, লোহার রড, লাঠিসোটা ইত্যাদি নিয়া বেআইনিভাবে জনতাবদ্ধে আকলিমা বেগমের বসত বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ পূর্বক তাকে অকথ্য, অশ্লীল ভাষায় গালাগালি শুরু করিয়া দেয়।

এ সময় তিনি তাহাদের গালাগালি করিতে নিষেধ করিলে বিবাদীগণ খেপিয়া যায় এবং রাগ ও ক্ষোভের বশবর্তী ১নং বিবাদী মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে জাহিদুল হক জীবন হুকুম দিয়া বলে, “শালির বেটিকে আজকে জানে মারিয়া ফেল” উক্ত হুকুম পাওয়ার সাথে সাথে ২নং বিবাদী মৃত স্বপন মিয়ার ছেলে জয় মিয়া তাহার হাতে থাকা লোহার রড দিয়া বাদী আকলিমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ্য করিয়া আঘাত মারিলে তিনি আত্ম-রক্ষার্থে কিছুটা সরিয়া যাওয়ার চেষ্টা করিলে উক্ত আঘাত তাহার কাঁধে লাগিয়া নীলাফোলা চাপা জখম করে এবং ১নং বিবাদী জাহিদুল হক জীবন তার কাপড়-চোপড় টানাটানি করিয়া শ্লীলতাহানি করে। বিবাদী আকলিমা বেগমকে বাঁচানোর জন্য তার চাচি আগাইয়া আসিলে ৩নং বিবাদী ইকবাল মিয়া তাহার হাতে থাকা লোহার রড দিয়া এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করিয়া শরীরের বিভিন্নস্থানে নীলাফোলা জখম করে। এরপরে তার চাচিকে বাঁচানোর জন্য আগাইয়া আসিলে ৪নং বিবাদী আলভী তাহার চুলের মুঠি ধরিয়া মাটিতে টানা হেঁচড়া করিতে থাকে এবং সকল বিবাদীগণ তাহাকে এলোপাতাড়িভাবে বাইরাইয়া, কিলঘুষি ও লাথি মারিয়া শরীরের বিভিন্নস্থানে নীলাফোলা জখম করে।

এ সময় তারা প্রাণ রক্ষার্থে ডাক-চিৎকার করিলে উপরোক্ত সালিশে আসা লোকজন ও আশেপাশের লোকজন আগাইয়া আসিলে উপস্থিত সাক্ষী ও জনতার প্রতিবাদের মুখে বিবাদীগণ তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রাণ নাশের হুমকি প্রদর্শন করা হয়। পরবর্তীকালে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, উক্ত জায়গা জমির বিষয়ে প্রায় দেড় বছর যাবত তারা প্রতিপক্ষের বসত বাড়ির বিল্ডিং নির্মাণ কাজ বন্ধ ও চাঁদা দাবিসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষ আল আমিন কাজী গং এর বিরুদ্ধে। পৌর শহরের চন্ডিবের কাজী বাড়ির ভুক্তভোগী আকলিমা বেগম ও তা পরিবারের সদস্যরা এ ভুক্তভোগীরা হয়রানীর স্বীকার।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, শহরের চন্ডিবের কাজী বাড়ির মৃত আব্দুল আজিজের পুত্র আল-আমিন কাজীসহ কাজী বাড়ির লোকজনের সাথে একই বাড়ির মৃত আবুল কাশেম মিয়ার সন্তান আলী হোসেন, মিজান ও আকলিমা বেগমের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছিলো। এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পৃথক পৃথক মোকদ্দমার ভিত্তিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কিশোরগঞ্জ, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উভয় পক্ষের জন্য ১৪৪/১৪৫ ধারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু আল আমিন কাজী আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তার বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে এবং প্রতিপক্ষ আকলিমা বেগমের নিজ ভূমিতে বাড়ি নির্মাণে করতে গেলে সে নিজে বাধাগ্রস্ত করে এবং ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে হয়রানি করার অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।

এ দিকে আবার আল আমিন কাজী বাদী হয়ে মিথ্যা অভিযোগে আকলিমা বেগমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মোকদ্দমাটি গত ১৮ জুলাই, ২০২২ এ আদালত খারিজ করে দেয় বলে জানান আকলিমা বেগম। কিন্তু হয়রানির উদ্দেশ্যে দ্বিতীয়বার আবারো মিথ্যা অভিযোগ এনে আকলিমা বেগমের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা করলেও আবার খারিজ করে দেয় আদালত বলে জানান তিনি।

ভুক্তভোগী আকলিমা বেগম বলেন, আমার বাপ দাদারা আল-আমিন কাজীর দাদার কাছ থেকে বাড়ির করার জন্য জায়গা কিনেন ২৬ শতাংশ। বর্তমানে আমাদের দখলে আছে ১৪ শতাংশ। কিন্তু বাকী ১২ শতাংশ জায়গা আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে না। ওই জায়গা নিতে হলে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আল আমিন কাজী গং।

তিনি আরও বলেন দীর্ঘ দেড় বছর আমরা আমাদের নিজ বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাসায় থাকি। আজ ভৈরব পৌরসভার মেয়র ইফতেখার হোসেন বেণু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর ও ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজি মনির হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাদের বাড়ির সবাইকে নিয়ে মীমাংসা ও বসতবাড়ির কাজের অনুমতি প্রসঙ্গে রায় দিতে আসিলে তারা এই রায় না মেনে আমাদের উপর হামলা চালায় এবং হামলায় আমিসহ আরও কয়েকজন মহিলা আহত হয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছি।

ভুক্তভোগী মো. আলী হোসেন জানান, পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত ভূমির চারিদিকে বাউন্ডারি ওয়াল ও ইমারত নির্মাণসহ গাছপালা রোপণ করে ভোগদখল করছেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই জায়গায় বেদখলের জন্য হুমকি প্রদানসহ চাঁদা দাবি করতো। এরই জের ধরে আজ ও গত ২২ মে, ও বিবাদীগণ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ চন্ডিবের মৌজার আরএস-১১৫১, দাগনং- ৭১৬২, জমির পরিমাণ ২ শতাংশ আমার ভূমিতে অনাধিকারভাবে প্রবেশ করে চাঁদা দাবি করেন এবং বাউন্ডারি দেয়াল ভাঙচুর হয় বলে অভিযোগ করেন।

স্থানীয় কাউন্সিলর হাজী মনির হোসেন জানায়, বিষয়টি ভৈরব পৌরসভার মেয়র মহোদয়কে অবগত করেছি। গত দুই তিন মাস আগে থেকেই সালিশির মাধ্যমে আমি আলামিন কাজী গং ও আকলিমাকে নিয়ে ভৈরব পৌরসভায় সবশেষে একটি রায় করা হয়েছে। এদের মধ্যে কথা হয়েছে যে উভয় পক্ষ তাদের বাড়ির কাজ কর্ম করবে কেউ বাধা প্রদান করবে না কিন্তু পরিশেষে আল-আমিন কাজী কাজ করতে পারলেও আকলিমা কাজ করতে গেলে বাধা প্রদান করেন আল-আমিন কাজীসহ তাদের লোকেরা। তাই নিয়ে আজ এই সালিশি করা হয়।

এ বিষয়ে উপর পক্ষ মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, আমার বাপ দাদার সম্পত্তি দাগ সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় আমরা আকলিমা বেগমকে বসতবাড়ি নির্মাণ করতে বাধা প্রদান করি।

পৌর মেয়র আলহাজ্ব ইফতেখার হোসেন বেণু বলেন, উক্ত বিষয়ে পৌরসভায় একটি সালিশি করা হয়। এবং সকল প্রকার দলিল ও কাগজ পত্র সবকিছু আকলিমা বেগমের সঠিক পাওয়া যায়।তাই সেই প্রেক্ষিতে আজ তাদের কাজ করার জন্য অনুমতি দিতে আমি উক্ত এলাকার কাউন্সিলর ও সাংবাদিকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে নিয়ে সরেজমিনে এলাকায় আসিলে আল-আমিন কাজী গংদের সাথে বসিলে তারা কোন সঠিক কাগজপত্র দেখাত পারে নাই। আর সেই সাথে তারা আমার কোন সদত্তোর দিতে পারে নাই। পরে আমরা চলে আসলে ইকবাল কাজী,জীবন কাজীসহ তাদের বাড়ির লোকজন আকলিমা বেগমদের উপর হামলা চালায়। এতে করে তারা অনেকে আহত হয়।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মাকসুদুল আলম বলেন, উক্ত ঘটনায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পরিদর্শন করেন। আর আকলিমা বেগম একটি অভিযোগ দায়ের করেন। আমরা ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড