• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হাসপাতালে নেই এক্সরে ফিল্ম ও সঠিক সেবা, বিপাকে রোগীর স্বজনরা

  মোঃ রেজোয়ান ইসলাম, নীলফামারী

১২ মার্চ ২০২৩, ১৪:৩৯
চিকিৎসা সেবা

জেলার প্রায় ২২ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে নির্মিত ২৫০ শয্যার নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল যেখানে সংকট দিয়েছে এক্সরে ফিল্মের।হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগিরা জেলা শহরের বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিক থেকে চড়া মূল্যে এক্সরে করতে বাদ্য হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ রোগির স্বজনেরা।

হাসপাতাল সুত্র জানায়, চলতি মাসের এক তারিখ থেকে এ সংকট দেখা দিয়েছে। ফিল্ম সংগ্রহের জন্য গত একমাস আগে টেন্ডার আহব্বান করা হয়েছে। কিন্ত তা সরবারহে কোন ধরনের নিশ্চিয়তা নেই। কবে সরবারহ করা হবে তাও নিশ্চিত না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও রয়েছে হাসপাতালে ঔষুধের সংকট। বিভিন্ন ওয়াড ঘুরে এ তথ্য পাওয়া যায়।

ওই হাসপাতালের পুরুষ ওয়াডে নীলফামারী সদরের বড় সংগলশী গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ২নং বিছানার রোগি বাবুল ইসলাম (৬০) বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, বুকের ব্যাথায় গত তিনদিন আগে ভর্তি হয়েছি। ডাক্তার আমাকে বুকের এক্সরে করার জন্য পরামর্শ দিলে হাসপাতালের এক্সরে রুমের একজন বলেন, এখানে ফিল্ম নাই বাহিরে থেকে করে নিয়ে আসেন। বাদ্য হয়ে ৭০০ টাকা দিয়ে এক্সরে করে নিয়া আসি। তিনি বলেন, এতো বড় হাসপাতাল সরকার সবই দেয় কিন্ত ফিল্ম দেয় না এটা কেমন কথা। অনেকে আবার টাকার অভাবে বাহিরে এক্সরে করাতে পারছে না।

একই ওয়াডের ১নং বিছানার রোগী পৌর শহরের শফিকুল ইসলাম (৫৬) দৈনিক অধিকারকে জানান, ‘কোমড় ব্যাথায় চিকিৎসার জন্য গত দুইদিন ধরে ভর্তি আছি। বৃহস্পতিবার সকালে ডাক্তার এক্সরে করতে বলে, কিন্ত শুনলাম হাসপাতালে নাকি এক্সরে হয় না। তাই ছেলের সাথে বাহিরে গিয়ে ৬০০ টাকা দিয়ে এক্সরে করলাম। গরীব মানুষ কম পয়শায় চিকিৎসা করতে এসে লাভ কি হলো। এছাড়াও বাহির থেকে ঔষুধও কিনতে হচ্ছে।

মহিলা ওয়াডের রোগি জেলা শহরের মাস্টার পাড়া থেকে আসা তুহিন (২২) দৈনিক অধিকারকে জানান, ‘সড়ক দূর্ঘটনায় কোমরে ব্যাথা পেয়েছি। তাই চিকিৎসক এক্সরে করার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্ত হাসপাতালে এক্সরে রুমের লোকজন বলেন, এখানে ফিল্ম নাই তখন বাদ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বাহিরে এক্সরে করতে হয়েছে। সেই ক্লিনিকে দাম নিয়েছে ৬০০ টাকা। হামরা গরীব মানুষ সরকারী হাসপাতলে কম টাকায় সেবা পাওয়ার আশায় ভর্তি হই। কিন্ত এখানে এক্সরে ফিল্ম নাই ও সঠিক সেবা নেই। এসব দেখারো কেউ নাই।

জানতে চাইলে হাসপাতালের স্টোরকিপার খোরশেদ আলম দৈনিক অধিকারকে জানান, এজিথ্রোমাইসিন, টেবলেট বেকলো, টোফেন, ইউডেন প্লাস, জেন্টামাইসিন, মক্সিন ইনজেকশন, অমিপ্রাজল ইনজেকশন, ডাইক্লোফেনাক বড়ি, রেনিটিট, ফ্যামোডিন সিরাপ, বারবিট সিরাপ, অমিডন সিরাপ, ডন সিরাপ ও সিভিট সব ধরনের ভিটামিন হাসপাতালে সাপ্লাই নাই। এ ছাড়াও আইভি ক্যানুলা এক মাস ধরে সরবারহ নাই। তাহলে রোগিরা পাবে কিভাবে।

জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস ও রেডিও গ্রাফী মো. নূরুজ্জামান সরকার দৈনিক অধিকারকে জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে ফিল্মের সংকট চলছে। এতে করে হাসপাতালে রোগিরা বড় ধরনের বিপাকে পড়েছে। এখানে প্রকারভেদে সরকারীভাবে প্রতিটি এক্সরে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নেয়া হয়। অথচ বাহিরে রোগিরা চড়া মূলে এসব এক্সরে করছে। এতে রোগির স্বজনদের বেড়েছে ভোগান্তি। তবে তত্বাবধায়ক স্যার টেন্ডার আহব্বান করছেন। আশা করি দু, একদিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক দৈনিক অধিকারকে জানান, হাসপাতালের তত্বাবধায়ক চেষ্টা করে আগাম এসব এক্সরে ফিল্ম কিনতে পারেন, কিন্ত উনি তা করবেন না। হাসপাতালে এক্সরে বন্ধ থাকায় বেসরকারী ক্লিনিকের মালিকরা জমজমাট ব্যবসা করছে। এদিকে, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারন রোগিপত্র। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঔষুধ সংকটতো আছেই। আইভি ক্যানুলা, ভিটামিনসহ বিভিন্ন ওষুধ রোগিদের বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হাসপাতালের একজন সিনিয়র স্ট্যাপ নার্স ও ইনচার্জ দৈনিক অধিকারকে জানান, ‘কিছু কিছু ঔষুধ আমাদের হাসপাতালে সাপ্লাই নাই, যেমন হার্টের চিকিসার জন্য (clopid 75 mg, Atv 10 mg, gtv 2.6 mg) এসব টেবলেট বাহির থেকে কিনতে হয়। এ ছাড়াও গত এক মাসে ১০০ অমিপ্রাজল ইনজেকশন পাইছি, কিন্ত চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় রোগির স্বজনদের কিনে আনতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে দৈনিক অধিকারের প্রতিবেদক নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. গোলাম রসুল রাখিকে একাধিকবার ফোন দিয়ে পাওয়া না যাওয়ায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

ওই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ জহিরুল করিম মুঠোফোনে দৈনিক অধিকারকে জানান, এক্সরে ফিল্ম এর সংকট আছে কি না আমি জানিনা। আপনি তত্বাবধায়কের সাথে কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সিনিয়র মানুষ তাই হাসপাতালের বিভিন্ন কাজ নিয়ে আমাকে প্রায় ঢাকায় আসতে হয়। অভিযোগে জানা যায়, তার বাড়ী ঢাকায়,তাই তিনি বিভিন্ন অজুহাতে ছুটি ভোগ করেন।

হাসপাতালে তত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু আল হাজ্জাজ দৈনিক অধিকারকে জানান, এক্সরে ফিল্মমের জন্য এক মাস আগে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। কিন্ত এখনো অনুমোদন (খবর) পাইনি। টেন্ডার পেলে এ সংকট কেটে যাবে। আগের কিছু ফিল্ম ছিল দু,দিন আগে শেষ হয়েছে। তাই রোগিরা বাহির থেকে বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে এক্সরে করছে এখানে আমার কিছুই করার নাই।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড