• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

২১ কোটি টাকার বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা

সাদা ফুলেই লুকিয়ে আছে কালো বর্ণের মূল্যবান পেঁয়াজের বীজ

  মাজেদুল ইসলাম হৃদয়, ঠাকুরগাঁও

১১ মার্চ ২০২৩, ১৯:২৬
সাদা ফুলেই লুকিয়ে আছে কালো বর্ণের মূল্যবান পেঁয়াজের বীজ
বর্ণের মূল্যবান পেঁয়াজের বীজ (ছবি : অধিকার)

ঠাকুরগাঁও জেলার মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সাদা সাদা ফুল। আর ওই সাদা ফুলে ভেতরে লুকিয়ে আছে কালো বর্ণের পেঁয়াজ বীজের দানা। এসব বীজের বাজার দর চড়া হওয়ায় চাষিরা এ বীজকে 'কালো সোনা' বলে আখ্যায়িত করেন। নিজে লাভবান হওয়ার আশায় ও দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ও ঘাটতি পূরণে পেয়াজের বীজ বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনের আগ্রহ বাড়ছে ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকদের।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল, পাড়িয়া, ও ধনতলা ইউনিয়নের সাবাজপুর, রায়মহল, পাতিলভাষা, মরিচপাড়া, খোচাবাড়ী, বাঙ্গাটুলি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজবীজ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বালিয়ডাঙ্গী উপজেলার চাষিরা। সকাল হলেই এসব ক্ষেতে পরিচর্যায় কেউ সেচ, কেউ আবার পোকা দমনে কীটনাশক স্প্রে করছে। অনেকেই মৌমাছি সংকটের কারণে পেঁয়াজ ফুলে পরাগায়ন না ঘটায়, হাতের স্পর্শে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন ঘটানোর চেষ্টা করছেন। এতে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ও পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক কিশোর-কিশোরীরাও এসব কাজ করছে।

পরাগায়নের কাজ করতে আসা বাসন্তী রানী, গীতা রানীসহ স্থানীয়রা বলেন, এসব পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে পরাগায়ন ঘটানোর জন্য অনেক মৌ-মাছির প্রয়োজন হয়। তবে তেমন মৌ-মাছি না থাকায় ভালো বীজ উৎপাদনের জন্য পেঁয়াজ ক্ষেতে সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পরাগায়নের কাজ করছে তারা। এতে করে দিনের শেষে একটা ভাল মজুরি পায় তারা। এতে করে তাদের সংসার খরচে সহায়তা হচ্ছে।

পরাগায়নের কাজ করতে আসা একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া কলেজ ছাত্র সুমন আলী বলেন, আমার মতো এখানে অনেক স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার পাশাপাশি হাতের স্পর্শে কৃত্রিমভাবে পরাগায়নের কাজ করে। এতে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে পড়াশোনার খরচে অনেক সহায়তা হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চার উপজেলায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ব্যাপক পরিসরে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন হচ্ছে। এবার পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৯৮ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৮০৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ১৬০ হেক্টর জমির ফসল কর্তন হয়েছে। এছাড়াও ১১৩ হেক্টর জমিতে শুধু পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ৯০০ কেজি করে মোট ১০২ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হয়। আর প্রতি কেজি বীজের দাম দুই হাজার করে ধরা হলে শুধু ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রায় ২০ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকার পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হবে বলে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল গ্রামে ৩২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করছেন তরুণ যুবক কৃষি উদ্যোক্তা মোয়াজ্জেম হোসেন তিনি বলেন, এর আগে স্বল্প পরিসরে বীজ উৎপাদন করলেও এবার পেঁয়াজের চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় এবং দেশের পেঁয়াজ চাষিদের কাছে ভালো বীজ পৌঁছানোর উদ্দেশ্যেই বেশি করে বীজ উৎপাদন করছে। ৩২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। পেঁয়াজের ফুল ও পরাগায়ন ভালো হওয়ায় উৎপাদিত বীজ কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকা বিক্রয় হবে বলে আশা করছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, তার ৩২ বিঘা জমিতে প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ জন কাজ করে। এদিকে যেমনি কৃষক লাভবান হচ্ছে অন্য দিকে পেঁয়াজ ক্ষেতে কাজ করে স্থানীয়রাও লাভবান হচ্ছে।

চাড়োল, ধনতলা ও পাড়িয়া ইউনিয়নের পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনকারী কৃষক আনসার আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, সাইদুর রহমানসহ অন্যান্যরা বলেন, জমিতে পেঁয়াজবীজ বপনের সময় নভেম্বরে। বীজ পরিপক্ব হতে সময় লাগে চার মাস ১০ দিন। ১ বিঘা পেঁয়াজ ক্ষেতে খরচ হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষেতের ক্ষতি না হলে ১৮০-২০০ কেজি বীজ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ২ লক্ষ টাকার অধিক। এতে লাভবান হওয়া যাবে। সরকার যদি স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করত তাহলে আর কৃষক পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করত বলে জানান তারা।

যদিও সরকারি নির্ধারিত মূল্যেও সার না পাওয়ায় বেশি দামে সার কিনতে হয় বলে অভিযোগ করেন কৃষক সাইদুর রহমান। সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যাতে কৃষকরা তাদের সার সঠিক সময়ে কম দামে সার পায় এ ব্যবস্থা চান তিনি।

কিন্তু এ দিকে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে যেমন কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। প্রতিবেশীরা কাজ করে টাকা উপার্জন করছে। এবং দেশের পেঁয়াজের ঘাটতি ও চাহিদা মেটাতে সহায়তা করছে। এ জন্য এসব চাষিদের সাধুবাদ জানান স্থানীয়রা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি ভাবে মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে বেশকিছু কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ বলেই অনেকে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করছে। এতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়াও কৃষকদের বীজ উৎপাদনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অদূর ভবিষ্যতে এই মশলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন এ জেলায় আর বৃদ্ধি করা হবে। এবং এরর সাথে মৌ-চাষকে সম্পৃক্ত করলে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হবেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড