• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভূমিদস্যুদের ইন্ধনে কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে দুই ভাইয়ের রেষারেষি

  জে রাসেল, ফরিদপুর

১০ মার্চ ২০২৩, ১৫:৪১
ভূমিদস্যুদের ইন্ধনে কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে দুই ভাইয়ের রেষারেষি

এস এম রেজওয়ান ও এস এম রুম্মান আহমেদ (আহাদ)। তারা আপন দুই ভাই হলেও বর্তমান সম্পর্কটা যেন দা-কুমড়োর মতো। এমন সম্পর্কের মূলে রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি। আর এসবের কারণ, এই দুই ভাই পড়েছে স্থানীয় ভূমিদস্যুদের রোষানলে।

ভূমিদস্যুদের একটি পক্ষ বড় ভাই রেজওয়ান ও অপর একটি পক্ষ ছোট ভাই আহাদকে নিয়ে আড়াল থেকে নাটাই ঘুড়িয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে উঠে আসে।

এই দুই ভাইয়ের বসবাস ফরিদপুর জেলা শহরের হাড়োকান্দি এলাকার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক সংলগ্ন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ গেইটের বিপরীত পাশে পৈত্রিক ভিটায়। তারা ঐ এলাকার মৃত এ.এস.এম আকতারুজ্জামানের দুই পুত্র।

এর মধ্যে বড় ভাই রেজওয়ান (৪৮) একটি প্রাইভেট সার্জিক্যাল কোম্পানিতে চাকুরি করেন এবং তার কোনো স্ত্রী-সন্তান নেই। ছোট ভাই আহাদ (৪১) বর্তমানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। এর আগে তিনি ঢাকায় থেকে ফ্রি-ল্যান্সার হিসেবে কাজ করতেন।

জানা যায়, সম্প্রতি জেলা সদরের ১০৪ নং হাবেলী মৌজার হাল বিএস ৯৬৪ ও ৯৬৫ নং ও খতিয়ান হাল বিএস ১৫৩ নং দাগের হাড়োকান্দি এলাকার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক সংলগ্ন ৩.৯৪ শতাংশ জমি নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে তাদের দ্বন্দ্ব। দৌড়চ্ছে থানা পুলিশ থেকে শুরু করে আদালত পাড়ায়।

যদিও বড় ভাইয়ের অভিযোগ, ছোট ভাই আহাদ এলাকার এক প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের সাথে আঁতাত করেছে। তার সাথে মিলেমিশে এখানে হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, বড় ভাই রেজোয়ান ঐ প্রভাবশালীর নাম প্রকাশে ইতস্ততবোধ করলেও পৈত্রিক সম্পত্তি প্রাণপণে রক্ষার জন্য নাম জানান। তার মুখ থেকে ঐ এলাকার প্রভাবশালী আবুল বাশার খান ও ফজলে আলী রাব্বির নাম বেরিয়ে আসে।

সরেজমিনে ঐ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বড় ভাই রেজওয়ান ঐ জায়গার পেছনের অংশে একটি জরাজীর্ণ বিল্ডিংয়ে বসবাস করছেন। তিনি একাই সেখানে থাকেন। ঘরের ভেতর স্যাঁতসেঁতে দুর্গন্ধযুক্ত। ছোট ভাই আহাদ, ঐ জমির সামনের অংশে একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন।

বড় ভাই এস.এম রেজওয়ান অভিযোগ করে এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন, ওয়ারিশ সূত্রে এই জমির মালিক আমরা দুই ভাই। এই জায়গা থেকে আমাকে উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্ন সময় হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে একটি গ্রুপ।

তার মধ্যে রয়েছে- আমার ছোট ভাই আহাদ, বোন হুমায়রা শরীফ মুক্তা, হাড়োকান্দি এলাকার মোঃ সেন্টু মিয়া, কাজী ইকরামুল হক মামুন, মাহফুজ আহম্মেদ তাবরিজ সহ অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। এরা সবাই আবুল বাশার খানের নেতৃত্বে এসব কর্মকাণ্ড করে আসছে।

এরা ২০২২ সালের ৪ জুলাই পরিকল্পিতভাবে জোড়পূর্বকভাবে এই জায়গায় থাকা আমার একটি টিনসেড ঘর ভেঙে ফেলে। তাতে আমার প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি করে। এ বিষয়ে ফরিদপুর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার এস আই শ্রীবাস গাইনকে।

কিন্তু তিনি সাক্ষীদের সাথে কোনো কথা না বলে বানোয়াট তদন্ত আদালতে পেশ করেন। যার একটি কপি আমাকে দেয়া হয়েছে। যেখানে সকল সাক্ষীদের একই বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। যা দেখে আমি মর্মাহত হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এই জমি নিয়ে ২০২০ সালের ৮ই অক্টোবর একটি শালিস হয়। আমাদের দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের জন্য ঐ শালিসে ছোট ভাই আহাদকে আমাদের অপর একটি জমিতে বসবাস করার জন্য বলা হয় এবং সে মেনেও নেয়। কিন্তু সম্প্রতি ঐ গ্রুপের ইন্ধনে সে এই জায়গায় ঘর তুলে আমাকে উচ্ছেদ করে দিতে চাচ্ছে। আমার টাকায় গড়া বাউন্ডারিও ভেঙ্গে ফেলছে। এমনকি বাসার ছাদের উপরে গিয়ে ছাদ ভাঙার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তার দাবি, আমি ঘর থেকে বের হলে দা-বটি নিয়ে দাড়িয়ে থাকে। বর্তমানে আমি ঘর থেকে মানুষ ছাড়া বের হতে পারতেছি না, ঢুকতেও পারি না। যেকোনো সময় আমাকে মেরে ফেলতে পারে। আমাকে মেরে ফেললে তাদের ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে। এমনকি তারা সকলে আমাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করতেছে।

অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ঐ প্রভাবশালী আমার ছোট ভাইকে এই জায়গায় হাসপাতাল করার অফার করেছে এবং তাকে একটি মালিকানা পক্ষ হিসেবে রাখা হবে জানিয়ে লোভ-লালসা দেখিয়েছে। আমার ছোট ভাইও সেই লোভে পড়েছে এবং আমাকে উচ্ছেদ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমি বর্তমান অসহায় হয়ে পড়েছি। আমি প্রশাসনের মাধ্যমে বা সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সঠিক তদন্ত করে সমাধানের দাবি জানাচ্ছি এবং আমার নিরাপত্তার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে ছোট ভাই আহাদ অভিযোগগুলো অস্বীকার করে ভিন্ন অভিযোগ করেন। তার দাবি, বড় ভাই নিজেই অপর একজন ভূমিদস্যুর সাথে হাত রয়েছে। তবে কে সেই ভূমিদস্যু, নাম জানাননি। তিনি বলেন, আমার ভাই একজন পাগল। সেই নিজেই নাটক সাজাচ্ছে। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

আবুল বাশার খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পন্ন অস্বীকার করে বলেন, এস.এম রেজোয়ানকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না এবং রুম্মান তাদের আত্মীয় হয় বলে জানান।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের উদ্ভট কথার কোনো ভিত্তি নেই, আমি কেন নেতৃত্ব দিতে যাব।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড