• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে দেওয়ানবাড়ী মসজিদ কমপ্লেক্স

  সাদ্দাম হোসেন, সাভার (ঢাকা)

০৯ মার্চ ২০২৩, ১৫:২১
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে দেওয়ানবাড়ী মসজিদ কমপ্লেক্স
দেওয়ানবাড়ী মসজিদ কমপ্লেক্স (ছবি : অধিকার)

কালের বিবর্তনে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে দেওয়ান বাড়ি মসজিদ কমপ্লেক্সের ঐতিহ্য। ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার সাভারের আমিন বাজারে অবস্থিত দেওয়ান বাড়ি কমপ্লেক্স ও মসজিদ। আনুমানিক অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে অর্থাৎ ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে আলহাজ্ব জোনাব আলী এই মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন।

মসজিদটির আয়তন উত্তরাধিকারীদের সুরম্য আবাসভূমিসহ ১০৬ শতাংশ। আলহাজ্ব জোনাব আলী বিশিষ্ট কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তদানীন্তন কলকাতা থেকে আগত বলে জনশ্রুতি রয়েছে। উভয় বাংলার তার প্রায় ৪০-৪২টি চামড়া সংরক্ষণ ও মজুদের জন্য গুদামঘর ছিল। এই স্থাপনায় রয়েছে চারটি শানবাঁধানো পুকুর ঘাট। ঘাটে বসার আসন, আবাসস্থলের দখিনে খোলা মাঠ ছিল।

মসজিদে যাতে ৫০-৬০ জন ধর্মপ্রাণ মুসলমান সুশীতল মনোরম পরিবেশে সৃষ্টিকর্তা নিকট প্রার্থনা করতে পারেন। স্থাপনাটি ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ উন্নয়ন সংরক্ষণ ও অপসারণ বিধির ২০০৮ এর উপবিধি ৬১ অনুযায়ী রাজউকের মহা পরিকল্পনার আওতায় ২০০৯ সালে রাজউক কর্তৃপক্ষ হেরিটেজ আখ্যা দিয়ে গেজেটভুক্ত করেছেন। এছাড়াও ২০২০ সালে নতুন প্রকাশিত হেরিটেজ তালিকা ভুক্ত আছেন।

২০০৯ ও ২০২০ সালে গেজেট তালিকায় ক্রমিক নং যথাক্রমে ৪১ ও ৪০। ঢাকা জেলার সাভার থানার বেগুনবাড়ি মৌজার সাবেক ধোবারই সি এস ও এস এ দাগ নং ১৬৫ আর এস দাগ নং ১৫৫। স্থাপনাটি রাজউক কর্তৃক তালিকাভুক্ত হওয়ায় এলাকাবাসীর খুব আনন্দিত হয়েছিলেন। এলাকাবাসী স্থাপনাটির নির্মাণ শৈলী ও সৌন্দর্যে গর্ব ভরে আত্মতৃপ্তি অনুভব করে। কিন্তু গেজেটভুক্ত হওয়ার ১৩ বছর পার হয়ে গেলেও কোন প্রকার পুনঃ সংস্কার বা সংরক্ষণের অগ্রগতি না দেখে হতাশ তারা।

এলাকাবাসীর ধারণা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত সংরক্ষণ পুনর্নির্মাণ করে অন্ততপক্ষে কর্তৃপক্ষের তালিকাভুক্তির তথ্য সম্বলিচিত একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা প্রয়োজন। অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে স্থাপনাটি সংরক্ষণ করলে আপাতত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা সম্ভব নচেৎ অচিরেই স্থাপনাটি নিশ্চিহ্ন হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি রাজউক ঢাকা উত্তরের ৩ নং জোনের অথরাইজড অফিসার স্বাক্ষরিত একপত্রে উক্ত স্থাপনার কোনরকম পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা যাবে না বলে জানানো হয়।

এতে ৭ দিনের মধ্যে আংশিক দখল হওয়া পুকুরটি পুন: খননের কথা উল্লেখ করে সম্পত্তির কোনোরকম বেচাকেনা না করার জন্য সংশ্লিষ্ট উত্তরাধিকারীদের তথ্য প্রেরণ করেন। কিন্তু রাজউকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান না থাকায় এবং কিছু অসৎ পরিদর্শকের ইন্ধনে ধ্বংস ও হুমকির মুখে রয়েছেন, মাদকের আখড়ায় ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ১৯৭৮ সাল থেকে বেশ কিছুদিন আজানের সময় এই মসজিদের বিভিন্ন অংশ প্রদর্শন করা হতো।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ তার আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত মাটির ময়না ছবিটি নির্মাণে এই স্থাপনাটি সম্পূর্ণ ব্যবহার করেন। এদিকে মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষায় এলাকাবাসী স্ব-প্রণোদিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও উপজেলা ইউএনও বরাবর একাধিক আবেদন দিয়েও কোনরূপ আশানুরূপ কর্তৃপক্ষের সাড়া না পাওয়ায় হতাশ তারা।

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডক্টর সুফি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, খুব দ্রুত প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। না হলে এসব স্থাপনার সৌন্দর্য ধরে রাখা খুব কঠিন হয়ে যাবে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, এটি একটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। এসব স্থাপনা অধিগ্রহণ করে ভূমি মালিকদের বিনিময় স্বরূপ ফ্ল্যাট নাকি নগদ অর্থ প্রদান করব সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে ইতোমধ্যে আমরা চারটি স্থাপনার কাজ শুরু করেছি। আশা করছি বাকিগুলোর কাজ দ্রুত শুরু করব।

তিনি আরও বলেন, নোটিশ পাওয়ার পরেও যারা অন্যায়ভাবে স্থাপনা তৈরি করছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড