আরিফ চৌধুরী, মহানগর প্রতিনিধি (গাজীপুর)
শহীদ মিনারের বেদিতে জুতা পায়ে উঠে শিক্ষকের ভারতীয় হিন্দি গান ‘কুচ কুচ হোতা হে’ ভিডিয়ো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারে এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ সচেতন মহল।
শহীদ বেদীতে জুতা পায়ে গান গাওয়া শিক্ষক হচ্ছেন শেখ জামাল। তিনি সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি এন্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের দিবা শাখার গণিত বিষয়ের প্রভাষক।
জানা গেছে, স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে অনুষ্ঠানের একদিন আগে অর্থাৎ ৫ মার্চ (রবিবার) শহীদ মিনারের বেদিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনুশীলনের আয়োজন করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এক পর্যায়ে শেখ জামাল নামে ঐ শিক্ষক জুতা পায়ে শহীদ বেদীতে উঠে ভারতীয় হিন্দি গান কুচ কুচ হোতা হে গাইতে থাকেন। সে সময় অনেকেই মোবাইল ফোনে দৃশ্য ধারণ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে ভিডিয়োটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় উঠে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জানান, ফেসবুকে যখন দেখলাম শহীদ বেদিতে জুতা পায়ে একজন শিক্ষক হিন্দি গান গাইছেন তখন চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসল। যারা মাতৃভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিলেন, তাদের স্মরণে নির্মিত বেদিতে এমন চিত্র কখনই কাম্য নয়।
এ বিষয়ে সচেতন মহলের ব্যক্তিবর্গরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, একটা স্বাধীন দেশে এমন বিকৃত আচরণ কখনই মেনে নেয়া যায় না। যে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা মাতৃভাষা পেয়েছি, বাংলায় কথা বলছে পারছি তাদেরকে চরম অবমাননা করা হলো এই কাজের মধ্য দিয়ে। আমাদের ভাষা শহীদদের অপমান করা হলো, বিকৃত করা হলো সাংস্কৃতিকে।
নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা প্রার্থনা করে ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে একটি পোষ্ট করেছেন শিক্ষক শেখ জামাল। তিনি লিখেছেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন মানুষ। বাংলা ভাষাকে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এবং গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি। শহীদ মিনারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গত ০৫.০৩.২৩ তাং রবিবার অসাবধানতাবশত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিক ও গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং অনুতপ্ত। সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থী। আমার এ অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য সবাই আমাকে ক্ষমা করবেন এ বিশ্বাস রাখি।
তিনি মুঠোফোনে জানান, স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে শহীদ মিনারের বেদিতে অনুশীলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে অসাবধানতাবশত ঘটনাটি ঘটে গেছে। তবে পরবর্তীতে অধ্যক্ষ স্যারসহ সকলের কাছে আমি ক্ষমা চেয়েছি।
এ বিষয়ে সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান বিপুল সকল বিষয় অস্বীকার করে বলেন, শহীদ মিনারের বেদিতে কোনো অনুষ্ঠানের অনুশীলনের আয়োজন করা হয় নি। অনুশীলনের জন্য শ্রেণী কক্ষে আয়োজন করা হয়েছিলো। শেখ জামাল স্যার কেন এমনটা করলেন তা আমি জানি না। আমি স্যারের সাথে কথা বলে জানাবো।
বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের সাথে একাধিক মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড