• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কাপ্তাই হ্রদে নৌ দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়েছে ডুবোচর আর গাছের গুড়ি

  এম. কামাল উদ্দিন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার (রাঙামাটি)

০১ মার্চ ২০২৩, ১৫:১৮
কাপ্তাই হ্রদে নৌ দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়েছে ডুবোচর আর গাছের গুড়ি
কাপ্তাই হ্রদ (ছবি : অধিকার)

হ্রদের শহর রাঙামাটিতে প্রতিদিন-ই দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভ্রমণে আসছেন পর্যটকরা। বছরে কয়েক লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন এখানে। সবুজ প্রকৃতি আর নীল জলের সান্নিধ্য পেতে পর্যটকদের প্রথম পছন্দ হ্রদে নৌ-ভ্রমণ। কিন্তু মাঝে মাঝে সেই আনন্দে বিষাদের ছোঁয়া লেগে যাচ্ছে।

নৌ দুর্ঘটনায় বিরূপ অভিজ্ঞতা আর স্বজন হারানো ব্যথা নিয়েই ফিরতে হচ্ছে অনেক পর্যটককে। ডুবোচর আর গাছের গুড়ির কারণে কাপ্তাই হ্রদে নৌ দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। প্রায়ই ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে পর্যটকবাহী নৌ-যান। ডুবে থাকা গাছের গুড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনায় এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন দুই নারী পর্যটক। গত তিন বছরে এখানে ৭ পর্যটক মারা গেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ডুবোচর ও গাছের গুড়ি চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ডিসিবাংলো এলাকায় গাছের গুড়িতে লাল পতাকা ও বয়া স্থাপন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থা রাঙামাটি জোন ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। শীত মৌসুমে হ্রদের পানি কমতে থাকলে কাপ্তাই হ্রদে জেগে ওঠে অসংখ্য ডুবোচর।

ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী বহন আর চালকদের অসতর্কতায় নৌ-যান প্রায়-ই আটকে যায় এসব ডুবোচরে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি ডুবোচরে আটকে পড়া এমন ১৭৫ জন পর্যটক। পরে ৯৯৯ কল পেয়ে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। সর্বশেষ ২০ ফেব্রুয়ারি ডিসি বাংলো এলাকায় ডুবে থাকা গাছের গুড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে ইঞ্জিন নৌকার তলা ফেটে যায়।

এতে নৌ-ডুবিতে প্রাণ হারান দুই নারী পর্যটক হেনা রাণী বর্মণ ও পুষ্প রাণী বর্মণ। আহত হন তিনজন। এ সময় জীবিত উদ্ধার করা হয় আরও ৬২ জনকে। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি রতনপুর থেকে তীর্থ ভ্রমণে এসেছিলেন এ পর্যটকদল।

নৌযান চলাচল নিরাপদ রাখতে বিপদজনক এসব গাছের গুড়ি অপসারণ ও ডুবোচর চিহ্নিত করে লাল পতাকা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থা রাঙামাটি জোনের কার্যকরী সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দা, আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গাছের গুড়ির কারণে প্রতিবছর এখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। পর্যটকরা এখানে ঘুরতে, আনন্দ করতে আসেন, কিন্তু যাওয়ার সময় লাশ হয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর।

লঞ্চ চালক মো. জালাল বলেন, গাছের গুড়িগুলো কেটে ফেলা দরকার। হ্রদের ডুবোচর খুঁজে বের করে লাল পতাকা স্থাপন করলে চালকরা নিরাপদে চলতে পারবেন। প্রাণহানির পর তৎপর হওয়া বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে দুর্ঘটনাস্থলে একটি বয়া স্থাপন করেছে। আর ১১টি গাছের গুড়ি চিহ্নিত করে লাল পতাকা স্থাপন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থা রাঙামাটি জোন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থা, রাঙামাটি জোন চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, প্রতিবছরই বলে আসতেছি। প্রতি বছরই দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষ তারা এগুলো গুরুত্ব দিচ্ছে না। রাঙামাটি লেকটাকে তারা বোঝা মনে করতেছে। এখানে স্থায়ীভাবে বয়া স্থাপনসহ নৌ দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারী বাড়াতে হবে। কাপ্তাই হ্রদে নৌ চলাচলের পথে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন বিআইডব্লিউটিএর এই কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৌ-সহায়ক যন্ত্রপাতি ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন বলেন, গাছের গুড়িগুরো এতদিন ডুবন্ত অবস্থায় ছিল। তাই চিহ্নিত করতে বিলম্ব হয়েছে। আজ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা স্থায়ীভাবে বয়া স্থাপন করেছি। আরও যেখানে যেখানে গাছের গুড়ি আছে আমরা চিহ্নিত করে লাল পতাকা স্থাপন করবো।

উল্লেখ্য, রাঙামাটির পর্যটনশিল্পের বিকাশে ভোগান্তিহীন নিরাপদ ভ্রমণের অনুকূল পরিবেশ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি পর্যটক ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড