• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

৭ খুন মামলায় নূর হোসেনরা চলে গেলেও, বন্ধ হয়নি মহাসড়কের চাঁদাবাজি

  মো: আকাশ, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:২৫
চাঁদা

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশের শিমরাইল মোড়ের সড়কের সংস্করণ কাজ চলমান থাকলেও বন্ধ হয়নি দখলদারদের দখলবাজি। প্রশাসনের নীরব ভূমিকা পালন করায় প্রতি মাসে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে লুটে নিচ্ছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা।

সড়ক দখল করে চাঁদা আদায় শব্দটি নিত্যদিনের পরিচিত শব্দে পরিণত হয়েছে দেশের জনগণের জন্যে। প্রতিদিনই ওমুক ভাই, তমুক নেতার চাঁদা বাণিজ্যের শিরোনাম লক্ষ্য করা যায় পত্রপত্রিকায়। অন্যান্য অঞ্চলের মতো বাদ যায়নি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ও। প্রায় ৫ শতাধিক অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে এখানে। যার ফলে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এ সড়কটি। আদমজী সড়কে পরিবহন ও পথচারীদের চলাচলের জন্য তৈরি এই সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে হকারদের দখলে রয়েছে।

দেশের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এ সড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল অংশে দখল করে হকার বসিয়ে চাঁদাবাজি যেনো মামাবাড়ির আবদারের মতোই অনেকটা। যে যখন ক্ষমতায় থাকেন তখনই তার দখলে এটি।

২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের একক আধিপত্য ছিলো শিমরাইল মোড়ে। তার নেতৃত্বে তোলা হতো হকারদের থেকে মাসোয়ারা। তবে তিনি ৭ খুন মামলার পর থেকে চাঁদাবাজদের সংখ্যা বেড়ে একাধিকে পরিণত হয়েছিল। এরপর থেকে ধাপে ধাপে পরিবর্তন হয় অস্থায়ী এসব চাঁদাবাজরা।

পরবর্তীতে ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী হন নাসিকের সাবেক ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক। কিছুদিন যেতেই তার দখলে নেওয়া হয়েছিল ফুটপাতটি। তার সঙ্গে থাকা কর্মীরা এবং অন্য আরেক চিহ্নিত চাঁদাবাজ রিপন ওরফে মুরগি রিপন আদায় করতেন চাঁদা বাণিজ্যের টাকা। তবে সর্বশেষ ২০২১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নাসিকের ১ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পরিবর্তন হয়ে নির্বাচিত হন আনোয়ার ইসলাম। জয়ের দুমাস যেতেই নিজেদের আওতায় নিয়ে আসা হয় ফুটপাতটি। একপর্যায়ে গতবছরের রোজার মাসের শুরু থেকে আনোয়ার ইসলামের ছোট ছেলে ইলিয়াস লিয়নের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা দায়িত্ব নেন উক্ত চাঁদা আদায়ের। তখন থেকে এখনো পর্যন্ত বেতনভুক্ত কর্মচারী দিয়ে প্রতিদিন উঠানো হচ্ছে চাঁদা।

দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের চোখের সামনেই সড়ক দখল করে চাঁদা আদায় করে কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের সহযোগীরা। অস্থায়ী প্রতিটি দোকান থেকে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা করেও তোলেন তারা। একজন জনপ্রতিনিধির প্রকাশ্যে এমন কর্মকান্ডে অবাক সাধারণ নাগরিক।

চিটাগাংরোডস্থ মার্কেটের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, কিছুদিন পর পর লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে সেটা শুধু মাত্র কয়েকঘন্টার জন্যই। অভিযানের নাম এলেই চাঁদার টাকার পরিমাণ বেড়ে য়ায় বলেও জানান তারা।

যতদিন যাচ্ছে ততই পরিবহন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই যানচলাচল স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটিকে ৮ লেনে রূপান্তিত করে। বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে এ সড়কে।

রাজধানীর সন্নিকটস্থ নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধিরগঞ্জ থানাটি বেশ ঘনবসতিপূর্ণ এরিয়া। এখানকার বাসিন্দাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঠিকানা হিসেবে চিটাগাংরোড শিমরাইলে অবস্থিত মার্কেট বা বাজারকে বলা হয়। তবে সড়ক দখল করে রাখার ফলে পথচারীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। শিকার হতে হয় নানান সময় দুর্ঘটনারও।

হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের ছোট ছেলে ইলিয়াস ইসলাম লিয়নের নেতৃত্বে নাইম, শীতল, জামাল নামের কয়েকজন চাঁদাবাজ চাঁদা আদায় করে থাকেন। ইলিয়াস ইসলাম লিয়ন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিলুপ্ত ছাত্রলীগ কমিটির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

রফিক মিয়া নামের এক হকার জানান, আগে চাঁদাবাজ রিপনের হয়ে আমাদের থেকে ফয়েজ চাঁদা আদায় করতো। কিন্তু গত রোজার ঈদের পর থেকে শীতল আর নাইম নামের দুজন আমাদের থেকে কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের হয়ে টাকা আদায় করেন। আমাদের দোকানের জন্য আমরা দৈনিক ১৫০ টাকা দেই। টাকা না দিলে দোকান উঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এটি ছাড়াও বাতি এবং লাইনম্যান বাবদ আরও ১০০ টাকা খরচ হয় আমাদের।

না প্রকাশ না করা শর্তে এক মোবাইল ফোনের কাভার বিক্রেতা জানান, এখানে আমার দোকান বসিয়েছি প্রায় চার মাস হবে। প্রতিদিন ১৫০ টাকা আনোয়ার সাহেবের লোক নেয়। আবার দুটি বাতি বিল এবং লাইনম্যানের জন্য ২০ টাকাসহ ৮০ টাকা দেওয়া লাগে।

চাঁদাবাজির অভিযোগের সত্যতা জানতে কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ফুটপাতের চাঁদাবাজির সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা কি? আমি এসব বিষয়ে কিভাবে বলবো? নাইম, শীতল, জামাল নামক ব্যক্তিরা তার লোক কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যেহেতু ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পুরো ওয়ার্ডের জনগণই আমাদের। কিন্তু যারা অনিয়ম করে তাদের সম্পর্কে আমি কি বলবো।

সংস্কার কাজ চললেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছে না কেনো জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) এর নির্বাহী পরিচালক শাহানা ফেরদৌস জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় ফুটপাতে আমরা ইতিপূর্বে অনেকবার অভিযান পরিচালনা করেছি। আমরা উচ্ছেদ পরিচালনা করে যদি সকালে করি হকাররা বিকেলেই আবার বসে যায়। সড়ক বিভাগে জনবল তেমন বেশি নেই। আমরা জেলা প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান করে থাকি। আমরাও চাই জনগণ ভোগান্তি থেকে বিরত থাকুক। তবে এটা আমার একার পক্ষে সম্ভব না।

হকার বসিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সড়ক দখল করে হকার বসিয়ে সুবিধা নেওয়ায় যদি আমাদের কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকে। তাহলে আমাকে প্রমাণ সহকারে দেখালে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।

অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, শিমরাইল মোড়ের ফুটপাত নিয়ে যেকোনো একজন থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করলেই আমরা মামলা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। চাঁদাবাজ যেই হোক না কেনো তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড