এম কামাল উদ্দিন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার (রাঙামাটি)
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখে না! মৃত্যুঞ্জয়ী কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় 'কেউ কথা রাখেনি' কবিতার ইতি টেনেছেন এমন আক্ষেপ শুনিয়ে। কবিতার ছত্রে ছত্রে নানান আক্ষেপ এখনো সমান তালে নস্টালজিক করে তোলে বাঙালিকে।
কবির মতোই তেত্রিশ বছর ধরে মনে আক্ষেপ পুষছেন জামাল উদ্দিন। আছেন রাঙামাটি ইলোকট্রো মেডিক্যাল ওয়ার্কশপের সুপারের দায়িত্বে। এটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে মূলত মেডিক্যালের সিটসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে তা মেরামত করা হয়।
গত তেত্রিশ বছর ধরে এই এক অফিসেই আছেন জামাল। 'বদলির জন্য বহুবার চেষ্টা করেও কিছু হয়নি' বলে তার আছে দীর্ঘশ্বাস। তবে সে 'ইচ্ছের কপাট' বন্ধ করেছেন আরও আগেই।
এখন মনোযোগ অন্যদের নিয়ে। ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন। তাই অফিস ফেলে সংগঠনেই আগ্রহ বশি।
নিজের বলয় ঠিক রাখতে কর্মী-সমর্থকদের নিয়েই সময় কাটে তার। পেছনে সাংগঠনিক শক্তি থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও তাকে ঘাঁটাতে আগ্রহ দেখান না।
সম্প্রতি ইলোকট্রো মেডিক্যাল ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা যায় অপরিচ্ছন্ন দৃশ্য। তিন কক্ষের ওয়ার্কশপের বাঁয়ের প্রথম কক্ষে স্টোরে মজুদ সীট, স্টিলের কেবিনেট ও দ্বিতীয় কক্ষে ওয়ার্কশপ। সেখানে অপরিচ্ছন্ন মেঝে ছড়িয়ে আছে যন্ত্রাংশ, গাছের পাতা। বিভিন্ন স্থানে ঝুলছে মাকড়শার জাল। পাশেই পাতা টেবিল চেয়ারে বসেন চার স্টাফ।
ডানের কক্ষে একাই বসেন জামাল উদ্দিন। মেরামত কাজের ঠিকাদারের কাছ থেকে জোর করে আদায় করা লাক্সারি রিভলভিং চেয়ার আর দেওয়ালের ডিজিটাল ঘড়ি জৌলুস বাড়িয়েছে ওই কক্ষের। আপাত বড় কর্তার অফিস বলে কথা!
জামাল উদ্দিন বলেন, তেত্রিশ বছর সরকার রাইখছে, আছি। বদলি করে না কেউ। আজ করতেছি, কাল করতেছি করে নিয়োগ দিচ্ছে না মন্ত্রণালয়। বদলিও হই না। বহুজনরে ধরছি, কোনো কাজ হয় না।
নিয়মিত অফিসে করেন না, অথচ নিয়মিত বেতন ভাতা নেন- এমন তথ্যের জবাবে বলেন, আমার মূল অফিস সিভিল সার্জন। ওখানে কাজ আছে। সব সময় কাজ থাকে না। অবসরে সাংগঠনিক কাজ করি।
ওয়ার্কশপটিতে জামাল উদ্দিনসহ পাঁচজন কর্মী আছেন। তাদের একজন জামাল উদ্দিনের সহযোগী কাজী শফিকুর রহমান বলেন, সারাদেশে লোকের অভাব। নিয়োগ নাই। বলতে বলতেই মেজাজ হারান।
এবার শফিক বলে বসেন, এদেশে নীতিনির্ধারক যারা আছে এরা হইলো সবচেয়ে বড় কালপ্রিট। সচিবালয় থেকেই দুর্নীতি রুট লেভেল পর্যন্ত ছড়ায়।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের এক চিকিৎসা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ইকেকট্রো মেডিক্যাল বিভাগের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা এখন সেকেলে হয়ে গেছে। প্রতিনিয়তই হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও মেশিন যুক্ত হচ্ছে। এসব যন্ত্রপাতি মেরামতের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি জ্ঞান নাই তাদের। তাই নতুন করে ওই বিভাগে জনবলও নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। বিকল যন্ত্রপাতি আউটসোর্সিং দিয়ে মরামত করা হচ্ছে। সিট মেরামত ছাড়া আর কোনো কাজই করতে পারে না বিভাগটি। বসিয়ে বসিয়ে ফাউ বেতন ভাতা দিচ্ছে সরকার। সারাদেশেই একই অবস্থা।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, জেলার সবকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মেডিক্যালের সিটসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে ছোট খাটো মেরামতের কাজ করে বিভাগটি।
কিন্তু বিভাগটি বেশ পুরনো। আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সম্পর্কে তাদের ধারণা কম। জামাল উদ্দিন কতদিন এখানে আছে ঠিক জানি না। কেউ তেত্রিশ বছর এক অফিসে থাকতেই পারে। তবে বড় কোনো অপরাধ করেছে বলে শুনিনি- যোগ করেন জেলার এই সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড