আতিয়ার রহমান, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আল সালেহ লাইফ লাইন দ্বারা পরিচালিত এক মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিশু ছাত্রকে বেত দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে দৌলতপুর থানা সংলগ্ন দৌলতপুর দারুল উলুম কওমি মাদরাসার হেফজ শাখার ছাত্র সিবলি সাদিক (১০) নামে ওই ছাত্রকে একই মাদরাসার শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বেত দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন।
পড়া না পারার অপরাধে শিশু ছাত্রকে এভাবে পেটানো হয় বলে ওই ছাত্রের অভিযোগ। বিচার চেয়ে নির্যাতিত ছাত্র ও তার ভাই আজ রবিবার দুপুরে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন।
এ দিকে অভিযুক্ত মাদরাসা শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম শনিবার রাতে গোপনে মাদরাসা ত্যাগ করে সিরাজগঞ্জ জেলার নিজ বাড়ি চলে গেছেন বলে মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ভাগজোত এলাকার দিনমজুর গোলাম কিবরিয়ার ছেলে সিবলি সাদিক কুয়েতি সংস্থা আল সালেহ লাইফ লাইন দ্বারা পরিচালিত দৌলতপুর দারুল উলুম কওমি মাদরাসার হেফজ শাখার ছাত্র।
পড়া না পারার অপরাধে মাদরাসার শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম মাদরাসা ছাত্র সিবলি সাদিককে বেত দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। এ সময় ওই ছাত্র কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেও নির্দয় ও নিষ্ঠুর শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম তাতে কর্ণপাত না করে নির্যাতন চালিয়ে যায়।
এক পর্যায়ে শিশুটি আহত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম মারপিট বন্ধ করে নিজ কক্ষে চলে যান। পরে আহত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে তার সহপাঠী ও মাদরাসার অন্যান্য শিক্ষার্থীরা সুস্থ করে তুলে।
এতে ওই শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেতের আঘাতে কাল দাগ ও ক্ষতের সৃষ্টি হলে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ঘটনার বিচারে চেয়ে রবিবার দুপুরে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল জব্বারের কাছে গিয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ করে।
এমন অমানবিক ও নির্মম নির্যাতনের বিচার দাবি করে আহত ছাত্রের ভাই শামীম রেজা বলেন, দিন মজুর বাবা আমার ছোট ভাই সিবলি সাদিককে কুরআনে হাফেজ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য দৌলতপুর দারুল উলুম কওমি মাদরাসার হেফজ শাখায় ভর্তি করে। কিন্তু আমার ছোট ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে খুব কষ্ট পাচ্ছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
এ ঘটনার পর শনিবার রাতে দৌলতপুর দারুল উলুম কওমি মাদরাসা পরিচালনা কমিটি সদস্যরা জরুরি সভা করে অভিযুক্ত শিক্ষক আশরাফুল ইসলামকে মাদরাসা থেকে চাকরিচ্যুত করেছেন বলে জানিয়েছেন- মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুর রহিম।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল জব্বার জানান, আল সালেহ লাইফ লাইন দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা ছাত্রকে বেত্রাঘাতে আহত করার ঘটনা শুনার পর মাদরাসা পরিচালনা কমিটির লোকজনকে ডাকা হয়েছিল। তারা এমন ঘটনার জন্য অনুতপ্ত এবং লজ্জিত। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
একই সাথে অভিযুক্ত শিক্ষককে মাদরাসা থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি রমজান আলী নিশ্চিত করেছেন বলে জানান তিনি।
শিশুর মেধা বিকাশে শিক্ষার্থীদের আদর ভালবাসা দিয়ে পড়া লেখা করানোর বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও মাদরাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর এমন অমানবিক নির্যাতন শিক্ষার্থীদের মাঝে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করবে। এমন আচরণ বর্জনের ও বিরত থাকার আহ্বান সংশ্লিষ্ট মহলের।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড