রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ)
ঝিনাইদহের শৈলকুপার আশুরহাট গ্রামের পাখির অভায়ারণ্য হুমকির মুখে পড়েছে। আর কদিন পরেই হাজার হাজার পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠার কথা এই অভায়ারণ্য। কিন্তু একদিকে গাছ কেটে ফেলা, অন্যদিকে পাখি নিধনের কারণে পাখির নিরাপত্তা ও আশ্রয়স্থল আজ চরম সংকটে। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে অতিথি পাখি আসা বন্ধ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে পাখিশূন্য হয়ে পড়বে উপজেলার একমাত্র এই পাখি অভয়ারণ্য। তাই এলাকাবাসীর দাবি, এই পাখি অভয়ারণ্যের মধ্যে যাতে কোনো গাছ কাটা ও পাখি শিকার করা না হয়।
জানা যায়, উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের আশুরহাট গ্রামে ২০১৩ সালে ১০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে পাখির অভয়ারণ্য। এ গ্রামটি পাখিগ্রাম হিসেবে পরিচিত। ২০০৭ সালের দিকে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসা শুরু করলেও স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধে বসবাস শুরু করে ২০১৩ সাল থেকে। সেই বছরই তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন এই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করে। প্রতিবছরের মতো গ্রামের মধ্যপাড়ার আব্দুর রাজ্জাক ও গোপাল চন্দ্রবিশ্বাসের পুকুরপাড়ে শিমুল-জাম- মেহগনী গাছের ডালে ডালে বাসা বাঁধে হাজার হাজার পাখি। উপযুক্ত আবহাওয়া, পরিমিত খাবারের জোগান আর নিরাপত্তা থাকায় এরা এখানেই জায়গা করে নেয়। তাই শীতকাল এলেই দূরদূরান্ত থেকে চলে আসতে শুরু করে অতিথি পাখি। শিমুলগাছে থাকা পাখিগুলো সব সময় গাছেই অবস্থান করে। আষাঢ় থেকে থেকে ফাল্ধসঢ়;গুন মাস পর্যন্ত এসব পাখি এখানে অবস্থান করে। এ সময় তারা বাসায় ডিম দিতে শুরু করে। মা ও বাবা পাখি পালাক্রমে ডিমে তা দেওয়ার জন্য ঠিকমতো আহারও করে না। এরপর বাচ্চা ফুটলে খাবারের সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এখানে শামখোলা, পানকৌড়ি, বক, সারস, ঘুঘু, শালিক, টিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এদের প্রধান খাদ্যতালিকায় রয়েছে শামুক। এ ছাড়া ধানখেতের পোকামাকড়ও এরা খেয়ে থাকে।
আশুরহাট পাখি সংরক্ষণ সমিতির সদস্যরা জানান, কয়েক দিন আগে গ্রামের মকররম আলীর ছেলে নইমুদ্দিন ও বদরউদ্দিনের ছেলে শফি উদ্দিন এই পাখি অভায়ারণ্যের গাছ কেটেছে, আরও কেউ কেউ গাছ কাটার পাঁয়তারা করছে। এভাবে গাছ কেটে ফেললে পাখিশূন্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে গাছ কাটার ব্যাপারে শফি উদ্দিন বলেন, ‘আমার মালিকানাধীন জমির গাছ আমি কেটেছি। আমি কোনো দোষ করিনি।’
স্থানীয় বাসিন্দা সফর আলী জানান, জমির মালিকেরা মাঝেমধ্যেই গাছ কাটেন। এভাবে গাছ কাটার কারণে পাখিদের আবাসন সংকট দেখা দেবে। সেই সঙ্গে পাখিশূন্য হয়ে পড়বে এই অভায়রণ্য। কোনো পাখি শিকারি যাতে পাখি শিকার করতে না পারে, তাই আমরা সারা রাত ধরে পাহারা দিয়ে থাকি।
উপজেলার আশুরহাট পাখি সংরক্ষণ সমিতির সভাপতি আ. রাজ্জাক বলেন, ‘অনেকেই এই পাখি অভয়ারণ্যের মধ্যে গাছ কাটা শুরু করেছে। আবার অনেকেই গাছ কাটার পাঁয়তারা করছে। এভাবে গাছ কাটলে অতিথি পাখিরা কোথায় এসে দাঁড়াবে? আমি ডিসি ও ইউএনও সাহেবের কাছে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি। এই মুহূর্তে গাছ কাটা বন্ধ না করতে পারলে সামনে অতিথি পাখিসহ অন্যান্য পাখি এই এলাকায় আসবে না। পাখিশূন্য হয়ে পড়বে উপজেলার একমাত্র এই অভয়ারণ্য।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মোখলেচুর রহমান বলেন, ‘গাছ কাটার কথা আমি শুনেছি, এভাবে গাছ কাটলে পাখি অভায়ারণ্য হুমকির মধ্যে পড়বে। সেই সঙ্গে এলাকা পাখিশূন্য হয়ে পড়বে। আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘আমি গাছ কাটার কথা শুনেছি। তবে পাখিদের আবাসস্থল সুনিশ্চিত করতে এবং পাখি অভায়ারণ্য যাতে হুমকির মধ্যে না পড়ে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড