মো. রাফিকুর রহমান লালু, রাজশাহী
এশিয়ার পরাশক্তি চীনের তৈরি একটি অ্যাপে সিনেমার টিকিট কিনলেই ডলার মিলবে, এ আশায় ওই অ্যাপে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা দিয়ে হিসাব নম্বর খুলে রাজশাহীতে প্রতারিত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। গত সোমবার থেকে তাদের হিসাব নম্বর শূন্য হয়ে গেছে। এখন তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এ কার্যক্রম চালানোর জন্য রাজশাহী নগরের সিরোইল কলোনিতে একটি কার্যালয় খোলা হয়েছিল। গেল মঙ্গলবার থেকে ওই কার্যালয়েও তালা ঝুলছে।
কথিত এই চীনা অ্যাপ ব্যবহার করে বিদেশি সিনেমার টিকিট কিনে ডলার–বাণিজ্য করতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন রাজশাহীর হাজার হাজার যুবক।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ই-মুভি নামে একটি চীনা অ্যাপ ব্যবহার করে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। নগরের সিরোইল কলোনি এলাকার সাড়ে তিন নম্বর গলির মানিক নামের এক ব্যক্তি রাজশাহীতে এই অ্যাপের প্রচার শুরু করেছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী- অ্যাপে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা দিয়ে একটি হিসাব নম্বর খুলতে হয়েছে। এই টাকা দিয়ে বিভিন্ন দেশের সিনেমার টিকিট কিনতে হয়েছে। টিকিট কিনলেই সঙ্গে সঙ্গে তার হিসাব নম্বরে মুনাফা যোগ হয়েছে। যদিও টিকিট কেনার জন্য টাকাকে ডলারে পরিণত করতে হয়েছে।
বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট নম্বরে টাকা পাঠালেই তা ডলার হয়ে ব্যবহারকারীর হিসাব নম্বরে দেখা দেয়। তবে যিনি যত বেশি টাকা দিয়ে হিসাব নম্বর খুলবেন, তার মুনাফার হার তত বেশি। আবার অন্যজনকে হিসাব নম্বর খুলে দিলেও নিজের হিসাব নম্বরে ডলার যোগ হতো। গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন গ্রামে পর্যন্ত এই অ্যাপ যুবসমাজের মধ্যে ঝড় তুলেছিল। কোনো কাজ না করে রাতারাতি ধনী হওয়ার জন্য তাঁরা বেশি টাকা দিয়ে হিসাব নম্বর খুলে বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামের কেউ নিজের মোটরসাইকেল বিক্রি করেও এই হিসাব নম্বর খুলেছেন। প্রথম দিকে যারা করেছেন, তারা টাকা তুলেছেন। কেউ কেউ অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। জমা হওয়া টাকা বিকাশ বা নগদের মাধ্যমেই ‘ক্যাশ আউট’ করা গেছে। মানিকের কার্যালয় থেকে কয়েক দিন আগে ঘোষণা দেওয়া হয়, রাজশাহী শহরে এই অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিরোইল কলোনির সেই কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, দরজায় তালা ঝুলছে। দরজার এক পাশের দেয়ালের সঙ্গে ‘বিল বিকাশ’ লেখা রয়েছে।
সেখানে রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকার হিমেল নামে এক যুবকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, সপ্তাহ খানেক আগে মানিক নামে ওই ব্যক্তি তাকে বুঝিয়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি হিসাব নম্বর খুলিয়েছিলেন। তার হিসাব নম্বরে মুনাফাও যোগ হয়েছিল। কয়েক দিন ধরে আর ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাচ্ছিল না।
মানিক বলেছিলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে টাকা তোলা যাবে। কিন্তু ওই দিন সবার হিসাব নম্বর শূন্য হয়ে গেছে। তারপর ‘মু জি লি’ নামে একজন চীনা ব্যক্তি সবার মুঠোফোনে একটি খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, যার যত টাকা হয়েছিল, তার ৩০ শতাংশ পরিমাণ টাকা এখন জমা দিলে মুনাফাসহ আবার হিসাব নম্বর থেকে টাকা তোলা যাবে। হিমেল বলেন, এই বার্তা আসার পর তারা সবাই ফাঁকিটা বুঝতে পেরেছেন।
সেখানে একই এলাকার ফাহিম নামের এক যুবকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, তার দুটি হিসাব নম্বর ছিল। একটিতে ১১১ ডলার ও অপরটিতে ৯৫ ডলার জমা হয়েছিল। গত সোমবার থেকে হিসাব নম্বর শূন্য হয়ে গেছে। এখন বুঝতে পারছেন, এই টাকার ৩০ শতাংশ জমা দিতে বলাটাও একটা নতুন ফাঁদ। তিনি বলেন, মানিককে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার ফোন বন্ধ। মানিকের বাড়ি নওগাঁ জেলার মান্দা থানা।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড