• রোববার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১৯ চৈত্র ১৪২৯  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিয়ের ১১ মাসেই গৃহবধুকে হত্যা করে টাকা-গহনা নিয়ে পালিয়ে গেল স্বামী

  সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ:

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:২৮
হত্যা

মাত্র ১১ মাস ধরে বিয়ে হয়েছে মীম আক্তার (১৯) ও মিলন হোসেনের (২৪)। গার্মেন্টসকর্মী মিলন হোসেন ঢাকার আশুলিয়া থানার জামগড়া এলাকায় শ্বশুর আব্দুল মজিদের নেওয়া একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। পারিবারিক কোন কলহ ছিল না তাদের মধ্যে। কিন্তু নিজের পরিবারের চাহিদা মেটাতে স্ত্রী মীম আক্তারকে হত্যার পর শ্বশুরের টাকা ও স্ত্রীর গহনা নিয়ে চম্পট দিলেন স্বামী মিলন হোসেন।

শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া জিদার বাড়ি এলাকায় সাইফুলের ভাড়া বাড়িতে। নিহত মীম আক্তার সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার রানীগ্রাম মহল্লার আব্দুল মজিদ মন্ডলের একমাত্র মেয়ে। তিনি শিশুকাল থেকে খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের চর শৈলাবাড়ী গ্রামে মামার বাড়ীতে থাকতেন। সেখান থেকেই তার বিয়ে হয়।

রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা থেকে মীম আক্তারের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনার পর হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বার বার মূর্ছা যান বাবা-মা। কান্নায় ভেঙে পড়েন মামা-মামীসহ পাড়া প্রতিবেশীরা। রাতেই চর শৈলাবাড়ী কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

নিহতের মামা বাবলু হোসেন ও মামাতো ভাই শাকিল আহমেদ জানান, গত বছরের মার্চ মাসে মীম আক্তারকে পার্শবর্তী ভাটপিয়ার গ্রামেরে আব্দুল কুদ্দুস বেপারীর ছেলে মিলন হোসেনের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে যান শ্বশুড় আব্দুল মজিদ মন্ডল। তিনি মেয়ে জামাইকে গার্মেন্টেসে চাকরি নিয়ে দেন। একই বাড়িতে তারা বসবাস করছিলেন। শনিবার বিকেলে মিলন তার চাচার মৃত্যু হয়েছে এমন মিথ্যা কথা বলে গার্মেন্টস থেকে ছুটি নেন। ছুটি নিয়ে বাসায় এসে স্ত্রী মিমকে ভাত চড়িয়ে দিতে বলেন।

এ সময় তার শ্বশুড়-শাশুড়ী বাসায় ছিলেন না। মিলন ঘরের মধ্যে জোরে আওয়াজ দিয়ে সাউন্ডবক্সে গান বাজাতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরেই ঘর থেকে বেরিয়ে যান। মিলন বেরিয়ে যাবার বাসার অন্য ভাড়াটিয়ারা ভাত পুড়ে যাচ্ছে দেখে মীমকে ডাকতে থাকেন। সাড়া না পেয়ে ঘরের মধ্যে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় পান।

কান্নাজড়িত কন্ঠে নিহতের বাবা আব্দুল মজিদ মন্ডল বলেন, তার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে জামাই মিলন হোসেন। তার চিৎকার যাতে কেউ না শুনতে পায় সে জন্য জোরে সাউন্ডবক্স বাজিয়েছে। আমি এক লাখ টাকা জমিয়ে ঘরে রেখেছিলাম মেয়ের জন্যই। সেই টাকা আর সোনার গহনা লুট করে পালিয়েছে। মামাতো ভাই সাকিল আহমেদ বলেন, মিলনের মা নেই। তার বড় বোনের কথায় সে চলতো। বড় বোন অনেক টাকা ঋণ। সেই ঋণ পরিশোধ করতেই মীমকে হত্যা করে টাকা ও গহনা লুট করেছে।

খোকশাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ মুকুল বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। মীম খুব ভাল মেয়ে ছিল। ওর পরিবারের সবাই ভাল। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে ছিল সে। শিশুকাল থেকেই মামার বাড়ী থেকে বড় হয়েছে। সবারই আদরের ছিল মীম। তাকে নির্মমভাবে হত্যা কেউ মেনে নিতে পারছে না।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোমেনুল হোসেন বলেন, শনিবার রাতে মীম আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। ঘটনার পর থেকে স্বামী মিলন হোসেন পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুল মজিদ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড