• বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯  |   ২৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মৌবনে ভোক্তাদের ঠকানোর প্রশ্ন করলে সাংবাদিককে অবমাননা, তাচ্ছিল্য

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:১১
মৌবন

কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র এনএস রোডে অবস্থিত একটি প্রতিষ্ঠান মৌবন সুইটস, মিষ্টির পাশাপাশি দোকান লাগোয়া গড়ে উঠেছে মৌবনের স্বনামেই রেস্টুরেন্ট। স্থানীয় মানুষের কাছে মৌবন বেশ পরিচিত, জনপ্রিয়ও বটে, তবে এই জনপ্রিয়টাই ভাটা ফেলেছে মৌবনের কর্মীদের ব্যবহার। অভিযোগ, পরিচিত ও জনপ্রিয় হওয়ায়, এর নেতিবাচক সুবিধা নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। মানে কম, দামে সেরা এমন অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে হরহামেশা।

এ বিষয়ে একজন প্রমীলা ক্রেতা বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি এই অজুহাতে দাম বেশি নিতেই পারে কিন্তু যারা খাবার পরিবেশন করে, তাদের ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ, বিশেষ করে সুইটস অংশের যিনি ম্যানেজার, ক্যাশে টাকা নেন, উনার ব্যবহারের কারণে ওখান থেকে মিষ্টি কেনাই বাদ দিয়েছি।

তিনি জানান, তিনি এই প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ক্রেতা ছিলেন এবং তিনি তার নাম উল্লেখ না করতে এই সংবাদদাতাকে বিশেষ অনুরোধ জানান, নাম উল্লেখ করলে সমস্যা কি জানতে চাইলে তিনি প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের মারমুখী আচরণের দিকে ইঙ্গিত করেন।

জন্মসূত্রে কুষ্টিয়া বাড়ি, ঢাকায় একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলের সিনিয়র রিপোর্টার বলেন, এই যদি হয় অবস্থা, একটি রেস্তোরায় ক্রেতারা নিজেদের গাটের টাকা খরচ করে খেতে যান বা মিষ্টি কিনতে যান, তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয় এবং তিনি সেটা প্রকাশ্যে বলতে ভয় পাচ্ছেন। আমার বাড়ি যেহেতু এই জেলায়, নানা রকম অভিযোগ ব্যক্তিগতভাবে আমার কানেও এসেছে। আমাদের চ্যানেল থেকেও কেন্দ্রীয়ভাবে টিম পাঠানোর ব্যাপারে আমাদের হাই কমান্ড ভাবছে।

স্বাদ-মানের ক্ষেত্রেও অভিযোগের অন্ত নেই। স্বাদ-মান ও পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে যাচাই করার জন্য শহরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁ থেকে তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত দইসহ কয়েক প্রকার খাবার সংগ্রহ করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে খাইয়ে স্বাদ ও মান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। উক্ত ব্যক্তিরা সকলেই মৌবন রেস্তোরাঁর দই ও অন্যান্য খাবারকে স্বাদ ও মানহীন বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু দামের ক্ষেত্রে দেখা যায় মৌবন সবার চেয়ে এগিয়ে। কোনো কোনো রেস্তোরাঁর সাথে তুলনায় স্বাদে-মানে অর্ধেক হলেও দামে দ্বিগুণ মৌবনের পণ্য। মৌবনের একটি কাপ দইয়ের দাম ৪০ টাকা। অথচ তার চেয়ে অনেক মানসম্মত অন্যান্য রেস্তোরাঁ ও সুইটসের একটি কাপ দইয়ের দাম ২৫ টাকা।

মৌবন একটি জনবহুল রেস্তোরাঁ হলেও নেই কোনো ওয়াশরুম। বছরের পর বছর ব্যবসা করে গেলেও, প্রতিষ্ঠানটি এ ব্যাপারে কোনো নজর দেয়নি, অথচ এর কলেবর বেড়েছে। টয়লেট না থাকায় বিশেষ করে মহিলা ভোক্তাগণ পড়েন বিড়ম্বনায়। দীর্ঘদিন ধরে মৌবনের ভোক্তারা এসব বিষয়ে অভিযোগ করে আসলেও কর্তৃপক্ষ সেসব অভিযোগ কখনো আমলেই নেয়নি।

জানা যায়, চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল, রাজিয়া খাতুন নামে একজন মানবাধিকার কর্মী মৌবন থেকে দই কিনে প্রতারিত হয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করলে তার প্রেক্ষিতে গত ২৬ মে ২০২২ তারিখে প্রতিষ্ঠানটি থেকে বেশকিছু শর্তে মুচলেকা নেয় কুষ্টিয়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কিন্তু মুচলেকা দেওয়ার পরও থামেনি মৌবনের স্বেচ্ছাচারিতা, কমেনি পণ্যের দাম, বাড়েনি স্বাদ ও মান।

এ বিষয়ে প্রতারিত মানবাধিকার কর্মী রাজিয়া খাতুন বলেন, জরিমানা কিংবা মুচলেকা নয় জনসাধারণ যেন প্রতারিত না হয় সেজন্যই মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মৌবনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলাম।

এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নানা সময়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে অভিযান পরিচালনা করে নানা অনিয়ম পাওয়া গেছে এবং জরিমানা গুনতে হয়েছে মৌবন নামক প্রতিষ্ঠানটিকে।

এসব বিষয়ে মৌবন কর্তৃপক্ষের সাথে দৈনিক অধিকারের কুষ্টিয়া জেলায় দায়িত্বরত সাংবাদিক মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, কর্তৃপক্ষ থেকে আপত্তিকরভাবে, খেয়া রেস্তোরা, বনফুড, শিশির কনফেকশনারীর মালিকদের নাম উল্লেখ করে, তাদের সাথে কথা বলে তথ্য সংগ্রহে বাধা প্রদান করার ইঙ্গিত দেন। কর্তৃপক্ষ থেকে তাচ্ছিল্য করার সুরে বলা হয়, দৈনিক অধিকার পত্রিকার নাম এই প্রথম শুনলাম।

পরবর্তীকালে শাকিলা আঞ্জুমান রনি পরিচয়ে ফোন দিয়ে এই সাংবাদিককে বলেন আমি নির্বাহী পরিচালক, তার কাছেও তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২২ বছরে কেউ এমন তথ্য নিতে চাইনি। তিনি কিছু নাম এবং গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করে, তাদেরকে ম্যানেজ করে চলেন এমনটা পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেন। সাংবাদিকদেরকে অবমাননা করে বক্তব্য প্রদান এবং তথ্য সংগ্রহের নিমিত্তে যোগাযোগ করলে সাংবাদিককে তাচ্ছিল্য করায় নিন্দার ঝড় উঠেছে সাংবাদিক মহলে।

এ ব্যাপারে অভিমত জানতে চাইলে অধিকারের নির্বাহী সম্পাদক গোলাম জাকারিয়া হেসে বলেন, এটা কোনো ইস্যু হওয়ার মতো ইস্যু নয়। আসলে সব মূলধারার গণমাধ্যমের স্ট্র্যটেজি এক নয়। আমরা সবার কাছে পৌছুতে চাইনি এমনটাও হতে পারে, তবে সব দাপ্তরিক পর্যায়ে, অন্যান্য গণমাধ্যমে এমনকি জাতীয় সব পর্যায়ে, সর্ব মহলে দৈনিক অধিকার পরিচিতি ছড়াতে পারলেও স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী বা কর্তৃপক্ষ আমাদের নাম জানেন না এটা আমাদেরই ব্যর্থতা। প্রান্তিক পর্যায়ে পৌছাতে, এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। ১৮৪ জন সাংবাদিকদের মেধা, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ পত্রিকা আমাদের, অনলাইনে(অনলাইন সংস্করণ) এসইও স্কোরে আমরা সেরাদের কাতারে আছি, তারপরেও আমরা আপামর জনমানুষের কাছে পৌছাতে পারিনি এটা আমাদের অপারগতা। তবে কোনো প্রফেশনাল সাংবাদিককে তাচ্ছিল্য করা, অভিযোগ থাকা স্বত্বেও তথ্য সরবরাহ না করা সাংবাদিকতার এথিকস বিরোধী এবং অন্য সাংবাদিকদের রেফারেন্স দিয়ে তাদেরকে ম্যানেজ করে রাখা হয় এমন ইঙ্গিত দেওয়া, সাংবাদিক সমাজকে হেয় করার সামিল।

তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি সাংবাদিকতা পেশা মহান, এটি ম্যানেজ করার মতো পেশা নয়। তারা স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকদের রেফারেন্স দিয়ে ভোক্তাদের দিনের পর দিন ঠকাবে এটি মানা কষ্টকর।

সাংবাদিককে তাচ্ছিল্য করায় দৈনিক অধিকারের মফস্বল সম্পাদক কে এইচ আর রাব্বীর অভিব্যক্তি জানতে চাইলে উনি বলেন, আমি সাংবাদিকতায় গ্রাজুয়েশন-পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেছি। আমি যা শিখে এসেছি আর অভিজ্ঞতায় যা শিখছি তাতে কোনো অন্যায়ের প্রশ্রয় কোনো সাংবাদিক দেবেন এটা বিশ্বাস করি না, মানতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সাংবাদিককে তাচ্ছিল্য করেছেন ওটা উনার ব্যাপার। আমরা আমাদের রেগুলার কাজ করে যেতে চাই। অন্যায় করলে উনারা অন্যায়ভাবেও নানাবিধ ভাবে বাধা দেবেন, ক্ষমতার প্রয়োগ করবেন খুব স্বাভাবিক, তবে আমরা আমাদের মত করে অনুসন্ধান করবো, স্থানীয় সাংবাদিককে বাধা দিলে ঢাকা থেকে টিম যাবে, আমরা প্রয়োজনে প্রশাসনের সহায়তা নেব। কিন্তু কোনো বাধা, ভয়, কোনো রেফারেন্স দিয়ে ভোক্তাদের ঠকানো যাবে না। সাংবাদিকতার এথিকস থেকে সত্য খুঁজে বের করা এবং এর উন্মোচন করে জনসম্মুখে প্রকাশ করাই আমাদের মহান পেশার মাহাত্ম্য, যেটি আমরা করবো, এটাই আমাদের দায়িত্ব, এটাই আমাদের কাজ।

কুষ্টিয়া জেলার দায়িত্বশীল, অধিকারের জেলা প্রতিনিধি তরিকুল ইসলাম তরুণ বলেন, আমাদের পত্রিকার কুষ্টিয়া টিম থেকে সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করলে রাজনৈতিক বাধা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে, এটি মানা যায় না। রাজনৈতিক চর্চা দেশ ও জাতির কল্যাণে। কোন স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁ বা মিষ্টি বিক্রি করে এমন দোকানের অন্যায়ের প্রশ্রয় বা তাদেরকে এ ব্যাপারে রাজনৈতিক কাভার দেবে কেউ এটা আমরা অন্তত বিশ্বাস করি না। আর সাংবাদিকতার ঐতিহ্যবাহী জেলায় সাংবাদিকদেরকে হেয় করার অপপ্রয়াস স্বরূপ তাদেরকে ম্যানেজ করা হয় এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে সাংবাদিক সমাজকে হেয় করার অপপ্রয়াস করা হয়েছে। জাতীয় সাংবাদিকদের রেফারেন্স টানা হয়েছে জেনেছি, এটি আরও ঘৃণ্য। সাংবাদিকদেরকে হেয় করে কথা বলা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার বলয়ের মধ্যে থেকে অন্যায় করার পারমিট চাওয়া, অপরাধের সামিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে আইনের ছাত্র। আইন এর কোন ধারা, এটিকে সাপোর্ট করে না।

জাতীয় পর্যায়ের সম্পাদকদের সংগঠন ‘বনেক’ এবং প্রতিদিনের কাগজের সম্পাদক মো. খায়রুল আলম রফিক বলেন, স্থানীয়, প্রয়োজনে জাতীয় পর্যায়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে, সংশ্লিষ্ট মহলে এর নিন্দা জ্ঞাপন করা সময়ের দাবি। আর আমি প্রতিষ্ঠানটি থেকে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে বিবৃতির দাবি করছি না হলে আমরা আমাদের সংগঠন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। সাংবাদিকদেরকে, তাদের পেশাকে হেয় করার মতো হীন কাজ করার মতো বলয় এই প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তি এবং তাদের আত্মীয়দের কিভাবে হলো, এই অপক্ষমতার উৎস কি? জনমনে প্রশ্ন। ক্ষমতার উৎস কি ক্রেতা ঠকানো টাকা?

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড