• বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯  |   ২৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হাসপাতালে দুই বছর যাবত নেই কোনো দন্ত চিকিৎসক

অথচ খরচ এক কোটি নব্বই লাখ টাকা 

  এস. এম. রাসেল, মাদারীপুর

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০৭
হাসপাতালে দুই বছর যাবত নেই কোনো দন্ত চিকিৎসক
মাদারীপুর সদর হাসপাতাল (ছবি : অধিকার)

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের ঔষধসহ মালামাল সরবরাহের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাগজে কলমে সরবরাহ থাকলেও বাস্তবে নেই। এতে করে এক দিকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি সেবা থেকে অপর দিকে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে- মালামাল সরবরাহের কাজে মাদারীপুর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হওয়ার কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিকে সম্প্রতি দুদক একটি ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫ বছর মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মালামাল সরবরাহের কাজ পেয়েছে একটি পরিবারের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

অভিযোগ রয়েছে, তাদের হাতেই জিম্মি হয়ে পড়ছে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মালামাল সরবরাহের কাজ। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তিন কোটি আটত্রিশ লাখ পঞ্চান্ন হাজার দুইশ ষোল টাকার মালামাল সরবরাহ করা হয়। এতে মালামাল সরবরাহের কাজ পায় মেসার্স তাসিন এন্টারন্যাশনাল ও মিজান ট্রেডিং কোং নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সিরাজুল আলম খান ও মিজান খান। এই দুই মালিক একে অপরের আপন ভাই। সিরাজুল আলম খান মাদারীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে মালামাল সরবরাহ করা হয় চার কোটি সতেরো লাখ আটান্ন হাজার একশ উনিশ টাকার। ওই দুই ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালামাল সরবরাহ করে। ২০২০-২১ অর্থ বছরেও ওই দুই প্রতিষ্ঠান চার কোটি ছাপ্পান্ন লাখ নব্বই হাজার তিনশ সাতান্ন টাকার মালামাল সরবরাহ করে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে মিজান ট্রেডিং কোং ছয় কোটি নয় লাখ একাত্তর হাজার একশ একুশ টাকার মালামাল সরবরাহ করে।

মাদারীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে পাঁচ কোটি সাঁইত্রিশ লাখ টাকার দরপত্র আহবান করে। মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মালামাল সরবরাহের জন্য ৬টি প্যাকেজে দরপত্র আহবান করা হয়। ৬টি প্যাকেজে ৯৮ টি শিডিউল বিক্রি হয়। জমা পড়ে মাত্র ১৩টি শিডিউল।

চলতি অর্থ বছরেও সবাইকে অবাক করে কাজ পেয়ে যায় সেই দুই ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিজান ট্রেডিং এবং তাসিন ইন্টারন্যাশনাল। বরাদ্দকৃত পাঁচ কোটি সাঁইত্রিশ লাখ টাকার ‘ক’ গ্রুপের ইডিসিএল বহির্ভূত ওষুধ সামগ্রী ক্রয়ের জন্য ২৫% বরাদ্দ। ‘খ’ গ্রুপের সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ১২%, ‘গ’ গ্রুপে লিলেন সামগ্রী ক্রয় ৫%, ‘ঘ’ গ্রুপে গজ ব্যান্ডেজ ক্রয় ৫%, ‘ঙ’ গ্রুপে কেমিক্যাল ও রি-এজেন্ট ক্রয় ৩% এবং ‘চ’ গ্রুপে আসবাবপত্র ক্রয় ৩% বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, গত অর্থ বছরের গজ,ব্যান্ডেজ, তুলা ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল চৌত্রিশ লাখ নিরানব্বই হাজার আটশ পঁয়ষট্টি টাকা। লিলেন কাপড়ের জন্য বরাদ্দ ছিল চৌত্রিশ লাখ সাতানব্বই হাজার নয়শ চল্লিশ টাকা। সে হিসেবে প্রতিদিন গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ও লিলেন কাপড়ের জন্য খরচ হয়েছে উনিশ হাজার টাকা।

অথচ প্রতিদিনই রোগীদের নিজ খরচেই কিনতে হয় এইসব সামগ্রী। একশ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের জন্য গত অর্থ বছরে আইভি ফ্লুইড ও দন্ত চিকিৎসার উপকরণ (ঔষধ) কেনা হয়েছে এক কোটি নব্বই লাখ একত্রিশ একশ চুরাশি টাকার। অথচ দন্ত চিকিৎসক নেই দুই বছর থেকে। দন্ত চিকিৎসক না থাকলেও বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ঔষধ কেনা হয়েছে এক কোটি তের লাখ চুয়াত্তর হাজার নয়শ তিয়াত্তর টাকার।

মাদারীপুরের পাঁচখোলা গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী মো. রাজ্জাক বলেন, আমাদের তো জ্বর আর গ্যাস্টিকের ঔষধ ছাড়া সবই কিনে নিতে হয়। হাসপাতাল থেকে বলে সাপ্লাই নাই। শুনি ঔষধ কেনায় কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। কিন্তু তেমন কোন ঔষধ তো পাই না।

তবে সিন্ডিকেটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উভয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাদের দাবি নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তারা মালামাল সরবরাহের ঠিকাদারি কাজ করেন। কোনো ধরনের অনিয়মের সাথে জড়িত নয় বলেও দাবী করেন তারা, হাসপাতালের ঠিকাদারি কাজ তারা নিয়ম অনুসারেই পেয়ে থাকেন বলে জানান।

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, আমি যতদূর জানি মাদারীপুর সদর হাসপাতালে যারা ঔষধ সাপ্লাইয়ের কাজ করেন। তারা দুই তিন বছর নয়। গত দুই দশক ধরেই তারা হাসপাতালে ঔষধ ও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী সাপ্লাই করেন। তারা হাসপাতালের ঠিকাদারি ব্যবসার একটি শক্ত সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। যার জন্য সব সময়ই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এখানে দ্রুত স্বচ্ছতা আনার দাবি করছি।

এ ব্যাপারে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহমেদ বলেন, মালামাল সরবরাহের কাজে অনিয়ম নেই। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসলে তদন্ত করা হবে। দন্ত চিকিৎসক না থাকলেও এই খাতে কোটি টাকা খরচের ব্যাপারে তিনি বলেন- ওই টাকা দিয়ে অন্য খাতে খরচ করা হয়েছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড