• মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯  |   ২৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দিনে শুনশান নীরবতা

আঁধার নামলেই শুরু হয় বালু উত্তোলনের মহোৎসব

  রাকিব হাসনাত, পাবনা

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:২৬
আঁধার নামলেই শুরু হয় বালু উত্তোলনের মহোৎসব

দিনের বেলায় শুনশান নীরবতা। সূর্যের আলো ফুরিয়ে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় আনাগোনা। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা এস্কেভেটরগুলো সন্ধ্যা নামলেই চলে যায় পাশের বালু পয়েন্টের গন্তব্য স্থলে। একে একে আসতে থাকে ছোট বড় ট্রাকগুলো। সন্ধ্যা গড়িয়ে একটু অন্ধকার হলেই শুরু হয় বালু উত্তোলনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের গুপিনপুরে বালু উত্তোলনের এই মহোৎসব চলছে।

গণমাধ্যমের চোখ ফাঁকি দিতে দিনের আলোর বদলে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে বালু খেকোরা। রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বালু উত্তোলন হওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকাও রহস্যজনক। সারা রাতব্যাপী পুরো সুজানগর উপজেলায় বালুর ট্রাকগুলো দাপিয়ে বেড়ালেও কোনো বাধার সম্মুখীন পড়তে হয় না।

এর আগে সাতবাড়িয়ার গুপিনপুর ও ভাটপাড়ায় বালু উত্তোলনের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। প্রকাশিত সংবাদে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝর সৃষ্টি হলে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে সেটি বন্ধ করে দেয়। বন্ধের কয়েকদিন পর নানা মহলকে ম্যানেজ করে আবারও শুরু হয়েছে এই বালু উত্তোলন।

স্থানীয়দের অভিযোগ- সারা রাত শতাধিক গাড়ি চলাচল করে। এসব গাড়ির শব্দে শিশুরাও ঘুমাতে পারে না। প্রতিবাদ তো দূরের কথা এদের যন্ত্রণায় বাড়িতে ঘুমাতেও পারছেন না। রাস্তা-ঘাটের অবস্থা আরও খারাপ। কিছু বললেই হুমকি দেয়া হয়।

তারা আরও জানান, এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষাকালে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে প্রতি বছর বিলীন হয় ফসলি জমি, বসতভিটা, ঘরবাড়ি, মসজিদ-মন্দির, সড়ক, স্কুলসহ নানা স্থাপনা। সে সময় ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকার ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির রয়েছে নদী রক্ষা বাঁধও।

বালু উত্তোলনের এই কর্মযজ্ঞে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরের নাম উঠে আসলেও তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, কে বা কারা বালু উত্তোলন করছেন জানি না। রাতের বালু উত্তোলন নিয়ে কেউ আমাকে এ পর্যন্ত কিছু বলেনি। বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে যেই জড়িত থাকুক প্রশাসনের সাহায্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, রাতে নদীর মাঝে যাওয়া সম্ভব নয়। তারপরও আমরা যখনই যাই, তখনই তারা সবকিছু ফেলে পালিয়ে যায়। দুইদিন আগেও নদীর তীর থেকে আমরা কয়েকজনকে ধরে মামলা দিয়েছি।এ বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, রাতে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি জানি না। আমি এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

আর বালু উত্তোলনের বৈধতা চান পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়ার একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির। তিনি বলেন, আমি এইগুলো (বালু উত্তোলন) চাই না আবার চাইও! কারণ এই মুহূর্তে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে, সেগুলোতে বালু পাবো কোথায়? আপনি (সাংবাদিক) দিতে পারবেন এই বালু? সরকার তো আমাকে বালু দিচ্ছে না। আমি ডিসি সাহেবকেও বলেছি যে- আপনি ওপরে কথা বলেন যে সরকার আমাকে বালু দিক। প্রয়োজনে টেন্ডার করে আমাকে বালু দিক।

তিনি আরও বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে আমি ১০০% বিরোধিতা করি। আমি সাপোর্টও করি না, সহযোগিতাও করি না। অনেক কথাই আমার বিরুদ্ধে অনেকেই বলে। আবার অনেক পাবলিকও এসব মুখরোচক কথা বিশ্বাসও করে। কিন্তু এই বিষয়ে আপনারা (সাংবাদিক) সঠিক অনুসন্ধান করে তুলে ধরতে পারেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড