• বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯  |   ২৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকায় চিকিৎসা নেয়া হলো না সুমনের

  তাপস কুমার বিশ্বাস, ফুলতলা (খুলনা)

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:২১
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকায় চিকিৎসা নেয়া হলো না সুমনের

খুলনার ফুলতলা শহীদ আসাদ-রফি গ্রন্থাগারে শনিবার সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৫টায় বন্ধুরা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তার জন্য আবেদন পত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশ নিচ্ছিলেন। ঠিক একই সময়ে খুমেক হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সুমন।

বিয়াল্লিশ বছর বয়সী সদা হাস্যোজ্জল সুঠামদেহী যুবক মো. ইদ্রিস সরদার ওরফে সুমন। কিডনি বিকল দুরারোগ্যে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। আগামীকাল সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য রাজধানীর সিকেডি হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল তার। একমাত্র বড় বোন অন্ধ রেহেনা বেগম (৪৮) তার ১টি কিডনি স্নেহের ভাই সুমনকে দান করে তার চোখে পৃথিবীর আলো দেখবেন তিনি। কিন্তু বিধির লিখন না যায় খণ্ডন। বোনের স্বপ্ন পূরণের দুদিন আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমাতে হয় সুমনের।

খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর মধ্যপাড়া গ্রামের ইউনুছ সরদারের পুত্র মো. ইদ্রিস আলী সরদার সুমন। তিন বছর বয়সে তিনি পিতাকে এবং তার অল্পদিনের ব্যবধানে তার মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে পড়েন সুমন। কখনো চাচা কখনো বা খালা-খালুর তত্বাবধায়নে বড় হতে থাকেন তিনি। ১৯৯৭ সালে দামোদর এমএম হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করে ভাগ্যান্বেষণে রাজধানীতে পাড়ি জমান সুমন। অনেক চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে শেষটায় গ্রামীণ ফোনে চাকুরি জোটে তার।

পরবর্তীকালে ফুলতলা ইউনিয়নের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে করেন তিনি। কোল আলো করে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানও আসে তাদের ঘরে। ২০২১ সালের মাঝামাঝি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সুমন। চলতে থাকে চিকিৎসা। গত বছরের প্রথম দিকে পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে তার দুটি কিডনিই বিকল।

চাকুরিও চলে যায় তার। এককালীন ৮ লাখ টাকা দিয়ে কর্মস্থল থেকে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বাড়িতে।

শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে থাকেন তিনি। অন্য দিকে তাকে ছেড়ে একমাত্র কন্যাসহ স্ত্রী থেকে যান পিত্রালয়ে।

অসহায় এতিম সুমনের জায়গা হয় অন্ধ বোনের বাড়িতে। নিজের মটর সাইকেল বিক্রি ও আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবের সহায়তায় চিকিৎসা ও ডায়ালসিস চলতে থাকে। সোমবার কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য রাজধানীর সিকেডি হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল তার। ১টি কিডনি দান করবে তার অন্ধ বোন রেহেনা। প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তার জন্য মানবিক ফুলতলার পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকার ব্যবস্থা এবং ব্যাচ-৯৭ এর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে তার একাউন্টে ৫৪ হাজার টাকা জমা দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তার জন্য তার আবেদন পত্রে শনিবার বিকালে যখন স্থানীয় সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ সুপারিশ করছিলেন- ঠিক একই সময়ে খুলনার একটা ডায়ালসিস সেন্টারে ডায়ালসিস চলাকালে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়ার পরপরই তার মৃত্যু ঘটে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড