মো. গোলামুর রহমান, লংগদু (রাঙ্গামাটি)
রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের ৩৮৬নং মৌজার রাজনগর এলাকায় খাস জায়গা দখলে নিয়ে তাতে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাসের হিড়িক পড়েছে স্থানীয়দের।
খাস জায়গায় দখল নিয়ে বেচা-কেনা বিষয়ে দফায় দফায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বাধা সৃষ্টি ও সমাধার চেষ্টা করে এবং তারা তা মেনেও নেয়, কিন্তু এটা শুধু মাত্র যখন কেউ যায় বাধা দেয় সেই সময় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। পরবর্তীকালে আবার তাদের জমি দখলের কার্যক্রম চলমান থাকে।
গত শনিবার গুলশাখালীর ৩৮৬নং মৌজার রাজনগর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কমপক্ষে ৩০টি পরিবার মৌজার খাস জায়গা বেদখল করে সেখানে বসতি গড়ে তুলেছেন। সে সাথে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন পরিবার। এসব বেদখলের ব্যাপারে মৌজার হেডম্যানের যোগসাজশ রয়েছে বলে এলাকার সচেতন বাসীর অভিযোগ।
এদিন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, হেডম্যান উপস্থিত হয়ে নতুন ঘর বাড়ি তৈরির নিষেধাজ্ঞা দিলে, তাদের উপর চড়াও হয় খাস জায়গাতে বসতি করা বেশ কয়েকজন। বেশ নোংরা ভাষায় তাদের গালিগালাজ করে এবং আরও করবে বলেও হুমকি প্রদান করে।
এ বিষয়ে গুলশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম নিজে বাদী হয়ে, সরকারী খাস জায়গা দখল কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন এবং একই আবেদন অনুলিপি হিসেবে, রাজনগর ৩৭ বিজিবি জোন, ইউএনও লংগদু এবং লংগদু থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবর প্রেরণ করেন, আবেদনে বলা হয়।
বিষয় : পাহাড়ি এলাকায় সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখল/বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন।
মহাত্মন,
সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে, আমি মো. শফিকুল ইসলাম আপনার জেলার অধীনস্থ লংগদু থানাধীন ৩নং গুলশাখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান।
আমার ইউনিয়নের ৩৮৬নং গুলশাখালী মৌজার রাজনগর নামক এলাকায় সরকার বিরোধী কিছু মহল আর্থিকভাবে লাভবানের উদ্দেশ্যে বেশকিছু দিন যাবত সরকারি খাস জমি নিজেদের দাবি করে অন্যের নিকট বিক্রয় করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যা আমি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে আমার কাছে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করে।
উক্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাই/উদ্ঘাটনের জন্য আমিসহ জেলা পরিষদ সদস্য ১। মো. আব্দুর রহিম ২। মো. মৌওলা, ইউপি সদস্য, ২নং ওয়ার্ড ও ৩। শেখ চান, ইউপি সদস্য, ১নং ওয়ার্ড, গুলশাখালী ইউনিয়ন ৪। হেডম্যান মো. আব্দুল হালিম, ৩৮৬নং গুলশাখালী মৌজাসহ এলাকার আরও কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে খাস জমিতে অবৈধ দখল/ঘর নির্মাণ করতে নিষেধ করা হলে তাদের পরিবার সকল সদস্যদের নিয়ে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ/বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে এবং এরকম কাজ ভবিষ্যতেও চালিয়ে যাবে বলে হুমকি প্রদান করে।
নিম্নে উক্ত কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের কয়েক জনের নাম উল্লেখ করা হলো :
১। আলী হোসেন (৬০), পিতা: মৃত গম্বুর,
২। আক্কেল আলী (৩৫), পিতা: মৃত শামছুল হক
৩। মো. আব্দুল মালেক (৩২), আব্দুল হাই।
৪। মো. নিজাম(৩৭), পিতা: মৃত আব্দুর রহিম।
৫। মো. কামাল(৪৭), পিতা: মৃত ইমান আলী।
৬। মো. মুছলে উদ্দিন(৫০), পিতা: মৃত করম আলী।
৭। মো. শাহজাহান (৩৫), পিতা: গোলাম রাব্বানী।
সবার ঠিকানা- গ্রাম- রাজনগর, ডাকঘর- মাইনি, থানা- লংগদু, জেলা- রাঙ্গামাটি সাথে অজ্ঞাত আরও সঙ্গী রয়েছে।
এমতাবস্থায় এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
গুলশাখালীর ৩৮৬নং মৌজার হেডম্যান মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, আমার মৌজায় মোট ৩ হাজার ৩৩ একর জায়গা রয়েছে। তার মধ্যে ১৫শত ৭৫ একর জমির রেকর্ড পত্র আছে। বাকি ১৭ শত ৫৮ একর জমি খাস রয়েছে। এসব খাস জায়গা বেদখল করে তাতে নতুন নতুন বসতী গড়ে উঠছে।
রাজনগর এলাকায় সর্বশেষ খাস জায়গায় বসতি স্থাপন করেছেন তাদের মধ্যে মোছা. রুবিনা আক্তার স্বামী- মো. নিজাম উদ্দিন, রাশিদা বেগম স্বামী আব্দুল মালেক, মর্জিনা আক্তার স্বামী মো. কালাম মিয়া, ময়না বেগম স্বামী-আয়ুব আলী, নিজাম উদ্দিন পিতা- আব্দুর রহীম, জান্নাতুল ফেরদৌস কলি (সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা) স্বামী- মো. লুৎফর রহমান, আব্দুল মালেক পিতা- আব্দুল হাইসহ আরও অনেকে।
যদিও উল্লেখিত বসবাসকারীরা জানান, অন্যের কাছ থেকে দখলস্বত্ব ক্রয়মূল্যে তারা বসবাস করে আসছেন, জানা যায় যা সুকৌশলে জায়গা দখলের চেষ্টা মাত্র। তারা জানায় হেডম্যানের প্রতিবেদন নিয়ে সকলেই ভূমি বন্দোবস্তি পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনও করে রেখেছেন।
এসব এলাকায় যত্রতত্র খাসজমি দখল করে বসতি স্থাপনের ফলে পাহাড়ে বন্যহাতির উপদ্রপও বাড়ছে। এ কারণে লোকজন ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে বলে সচেতন মহল জানায়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড