মিজানুর রহমান মিজান, টেকনাফ (কক্সবাজার)
কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারী সিন্দাবাদ স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন বিহীন জ্বালানি তেল মজুদ করছে। নোঙর করা অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে জাহাজের ফিটনেস ও যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চাহিদার অতিরিক্ত তেল মজুদ করে তা সেন্টমার্টিন নিয়ে অতি গোপনে সাগরের মাছ ধরার ট্রলারে কাছে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেয়ারী সিন্দাবাদ নামক জাহাজটি নিজস্ব ব্যবহারের জন্য চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে সাড়ে নয় হাজার লিটার জ্বালানি তেল সংগ্রহ করে। সেই জ্বালানি তেল গুলো চট্টগ্রাম ভিত্তিক বিভিন্ন জ্বালানি বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের জ্বালানি পরিবহন কাজে ব্যবহৃত গাড়িতে করে টেকনাফ নিয়ে এসে জাহাজে মজুদ করে থাকে।
এ দিকে জাহাজটির দৈনিক জ্বালানি চাহিদা নিয়েও প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য। টেকনাফের এক দায়িত্বশীল জানিয়েছেন- সপ্তাহে সাড়ে নয় হাজার লিটার চাহিদা, আবার চট্টগ্রামের আরেক দায়িত্বশীল জানিয়েছেন সপ্তাহে চার হাজার লিটার চাহিদা রয়েছে।
অপর দিকে গত মাসে ঘাটে নোঙর করা অবস্থায় জাহাজটির বৈদ্যুতিক লাইন থেকে আচমকা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই যাত্রায় জাহাজে জ্বালানি মজুদ না থাকার কারণে জাহাজটি বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। এ ঘটনার পরে মাঝ সাগরে যাত্রীদের জানের নিরাপত্তা ও জাহাজের ফিটনেস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।
এ দিকে স্থানীয় বাজারে তেলের ব্যাপক সরবরাহ থাকার পরেও এমন একটি ফিটনেস বিহীন জাহাজে দৈনিক প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জ্বালানি মজুদের বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্বীপের কয়েকজন জেলে জানান, জাহাজটি সেন্টমার্টিন ঘাটে পৌঁছানোর পর শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিন কেন্দ্রিক মাছ ধরার ট্রলারে বিভিন্ন সময় জ্বালানি ভর্তি ট্যাংক সরবরাহ করতে থাকে। তাদের ধারণা এ ভাবে অবৈধ উপায়ে জ্বালানি তেল পাচারে জাহাজের কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বশীলদের হাত থাকতে পারে।
কেয়ারী টেকনাফ অফিসের ইনচার্জ শাহ আলমের কাছে জাহাজটির জ্বালানি ট্যাংক বিস্ফোরক অধিদপ্তর কর্তৃক বাৎসরিক পরিদর্শন ও ছাড়পত্র নবায়ন করা এবং স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গেল করোনাকালীন সময়ের পর থেকে আমারা অনুমতি নেয়নি তবে ৩০ জানুয়ারি ইউনো মহোদয় অবগত করার পর বৈঠক হয়েছে। গতকাল অনুমতির জন্য আবেদন করছি আমরা। অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি কেউ অবগত করেনি তাই নেওয়া হয়নি।
চট্টগ্রাম অফিসের দায়িত্বশীল নোমান এর কাছে একই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফাইল চেক করে বলতে হবে বলে জানিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরবর্তীকালে কয়েক দফা ফোন করেও কল রিসিভ না করায় এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
একইভাবে এই বিষয়ে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এসব ঢাকা অফিসের দায়িত্ব বলে জানান এবং এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
অনুমোদিত ডিলারের বাহিরে জাহাজটি প্রায় সাড়ে ৯ হাজার লিটার পরিমাণ জ্বালানি এনে মজুদ কিংবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছে কি-না জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান জানান, অনুমতি বিহীন জাহাজে তেল মজুদ বিষয়টি অবগত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট জাহাজের দায়িত্বশীলদের নিয়ে বয়কট এরপর ইতিমধ্যে ৪/৫ টি জাহাজের অনুমোদন জন্য আবেদন জমা করেছেন। তবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে জ্বালানি মজুদ ও অবৈধভাবে সরবরাহ করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড