• বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯  |   ২৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধরে রেখেছেন বাঁশের তৈরি শিল্প; ভালো নেই শিল্পীরা

  নেহাল আহম্মেদ প্রান্ত, আদমদীঘি বগুড়া:

২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৪৮
বাঁশ ও বেত শিল্প

দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো বগুড়ার আদমদীঘিতেও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেত শিল্প। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। এই শিল্পের তেমন কদর আর নেই বললেই চলে। এক সময় মানুষ বাড়িতে, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি শিল্প ব্যবহার করলেও এখন বিলুপ্তির পথে এ শিল্পটি। তবে বাঁশের তৈরি শিল্প দেখা গেলেও বেতের তৈরি শিল্প একেবারেই তেমন চোখে পড়ে না। দিন দিন এই পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। তারপরও এখনও কিছু পরিবার তরলা বাঁশের তৈরি শিল্পকে জীবিকার প্রধান উপার্জন হিসাবে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

সরেজমিনে উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের নতুন বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যবসায়ী বসে আছেন হাতের তৈরি এই শিল্প নিয়ে। তাদের দোকানে সাজানো আছে মাটি ঢোয়ানো ভাঁড়, মাটি কাটা টুকরি, পানি সিঁচা ছিনি, মাছ ধরা পলি, মাছ রাখা ফলি। এছাড়া আছে ডালি, চালনি, চালন, কুলা, ঝাড়ুসহ অনেক কিছু। মাটি ঢোয়ানো ভাঁড় কিনেন ১২০-১৩০ টাকা, বিক্রি করেন ১৫০-১৮০ টাকা, মাটি কাটা টুকরি কিনেন ৭০-৮০ টাকা, বিক্রি ৯০-১০০ টাকা, ছিনি কিনেন ১২০-১৩০ টাকা, বিক্রি ১৫০-২০০ টাকা, ফলি কিনেন ৫০-৬০ টাকা, বিক্রি ৭০-১০০ টাকা, পলি বিক্রি হয় ৫০-২০০ টাকা। ঝাড়ু ৫০-১০০, ডালি ১২০-৪০০ টাকা জোড়া। হাঁস মুরগী ঢাকা টোপা প্রকারভেদে বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে। খোলসানি বিক্রি ২০০টাকা। এছাড়া বিভিন্ন দামের বিভিন্ন শিল্প আছে তাদের দোকানে। পৌর শহরের এই হাটে বসে এই শিল্পের ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহে দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার বসে হাট।

পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলা থেকে হাটে আসা ব্যবসায়ী মজিবর রহমান বলেন, এই ব্যবসা করে যা করেছি তা ৫-৬ বছর আগে। এখন আর ব্যবসা ভালো হয় না। এই জিনিসগুলো বেশি দামে কিনতে হয়। তাই লাভ তেমন হয় না। তিনি বলেন, আগে সারাবছর এই ব্যবসা ভালো চলেছে। এখন বেশি দামে কিনতে হয়। তাই লাভ বেশি হয় না। এই হাটে নিয়ে এসে বিক্রি করি। এছাড়া রানীনগরেও আমার এই ব্যবসা চলে। আগে ডালি দিনে ৫০০ টি বিক্রি হয়েছে। ইটের ভাটাতে ডেকে ডেকে নিয়েছে। এখন ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নেয়। বহন করে ট্রাক্টর বা ভ্যান গাড়ি দিয়ে। তাই পেটে ভাতে চলছে। তারপরও ধরে রেখেছি এই ব্যবসা।

নওগাঁর সদর উপজেলার দুবলহাটির আরেক ব্যবসায়ী সুবল চন্দ্র প্রামানিক তিনিও এই শিল্পের ব্যবসা করেই চালিয়ে যাচ্ছেন সংসারের খরচ। চকগৌরি হাটের পাশাপাশি এই হাটে আসেন সে। তিনি বলেন, আগের মতো আর লাভ হয়না। কারণ এখন বাঁশ ও নারকেলের খিলনির দাম বেশি। তাই বেশি দামে কিনতে হয় আমাদের। এছাড়া বর্তমানে হাতের নাগালে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় বাঁশের তৈরি আদীয় এই শিল্পের চাহিদা কমে গেছে। এরপরেও গুটি কয়েক পরিবারের মানুষ ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

স্থানীয় রাহুল পারভেজ, রাজা নামের দুই ক্রেতা বলেন, বাঁশের তৈরি শিল্প একটি ঐতিহ্য।আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্প। এই শিল্প আগের মতো আর ব্যবহার করে না জনগণ। তবে অনেক সময় বাঁশের তৈরি কিছু শিল্প দিয়ে সাজসজ্জার কাজে লাগানো যায়। যখনই প্রয়োজন হয় তখনই আমরাও কিনি এই সকল হারিয়ে যাওয়া বাঁশের তৈরি শিল্প। তাই এই শিল্পকে ধরে রাখা উচিৎ বলে তারা মন্তব্য করেন।

আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার বলেন, বাঁশ ও বেতের তৈরি শিল্প একটি আদীয় শিল্প। এখন অনেক কারণে এই শিল্প আর তেমন ব্যবহার হয় না। তারপরও তারা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে এটা অবশ্যই সবার জন্য একটা অনুপ্রেরণামূলক কাজ। এটা আগে ছিল নিত্য প্রয়োজনীয়। তবে এখন এই শিল্পগুলো অনেক জায়গায় সৌখিন হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, তারা যদি কেউ কোনো সহযোগিতার জন্য আসে আমি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড