হুমাযুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামে গরীবের এক টাকার হোটেলে পেট পুরে বিরিয়ানি, পোলাও, মাছ, মাংস আর ডিম খেতে পেরে খুশি দরিদ্র পরিবারের প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ। আত্মীয়-স্বজন আর সন্তানদের নিয়ে এমন ব্যতিক্রমধর্মী রেস্টুরেন্টে যারা খেতে এসেছিলেন তারা প্রাণভরে আয়োজকদের আশীর্বাদ করলেন। উদ্যোক্তা ঢাকা ভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
রেস্টেুরেন্টে খেতে এসে সুভারকুটি গ্রামের সত্তুর্ধ আরজ আলী অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে হাসিমুখ করে জানালেন, ‘গরীর মানুষ এদন খাবার কিনবেরে পাং না। আজ পেট ভরি খাইলং বাহে। যামরা খোয়াইল আল্লাহ তার হায়াত দারাজ করুক।’
কুড়িগ্রাম শহর থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সুভারকুটি গ্রামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নিজেদের অর্থায়নে এই হোটেল চালু করেছে। মেন্যু হিসেবে রাখা হয়েছে বিরিয়ানী, পোলাও, ভাত, মাছ, মাংস, ডিমসহ ১২ পদের খাবার। ঘরোয়া মনমুগ্ধকর পরিবেশে একসাথে ৫০ জন মানুষ এখানে খেতে পারছেন। পেশাদার বাবুর্চিদের তৈরী করা এসব রান্না মনোরম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে খেতে পেরে খুশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র এসব মানুষ। সপ্তাহে দু’দিন নির্বাচিত সুবিধাভোগীরা এসব খাবার এক টাকা মূল্যে খেতে পারবেন। এজন্য স্বেচ্ছাসেবকরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে দরিদ্র মানুষদের খুঁজে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন এক টাকা মূল্যের টোকেন। আর এসব টোকেন নিয়ে খেতে আসছেন দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা।
হেমেরকুটি গ্রামের দিনমজুর ছকিয়ত এসেছেন তার স্ত্রী আমিনা ও দুই সন্তানকে নিয়ে। তিনি আবেগ নিয়ে বললেন, ‘বাবা এদোন হোটেলোত বউ- ছওয়া পওয়াক নিয়া কোনদিন ঢুকপের পাং নাই। আজ এমারগুলার দৌলতে মাংস- বিরিয়ানি খাইলং।’
ছকিয়তের ৫র্থ শ্রেণিতে পড়া মেয়ে মৌরী জানায়, ‘বাবা-মাকে নিয়ে একসাথে এমন খাবার খেতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এরা খুব যত্ন করে খাওয়ায়।’
রেস্টুরেন্টে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া স্থানীয় হ্নদয় ইসলাম জানান, ‘আমি এখানে বিনা পযসায় ওয়েটারের কাজ করছি। এলাকার দরিদ্র মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে পেরে খুব গর্ব অনুভব করছি।
স্বেচ্ছাসেবকদের প্রধান আকরুম হোসেন জানান, ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা নিজেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরিদ্র, এতিম ও অসহায়দের খুঁজে বের করে তাদের টোকেন দেয়। পরে নির্বাচিত সুবিধাভোগীরা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত রেস্টুরেন্টে এসে এক টাকা ও টোকেন দিয়ে পছন্দমতো খাবার খেতে পারে।’
এ ব্যাপারে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকতৃা সালমান খান ইয়াছিন জানান, ‘বর্তমানে সপ্তাহে দু’দিন এই রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৫শতাধিক মানুষ খেতে পারছেন। এই রেস্টুরেন্ট একটি মডেল মাত্র। বৃত্তবানরা এগিয়ে এলে প্রতিদিন এই হোটেল চালু করার পরিকল্পনা আছে। এতে করে দেশের দরিদ্র এলাকার মানুষ ক্ষুধা থেকে মুক্তি পাবে। পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা জানান, ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ। যেখানে পরিবার নিয়ে একটি ভালো মানের হোটেলে খেতে হাজার-বারো'শ টাকা লাগে, সেখানে মানুষ এক টাকায় তৃপ্তিভরে তার পছন্দের খাবার খেতে পারছে। আমার এলাকার দরিদ্র পরিবারের মানুষেরা এতে ভীষণ খুশি হয়েছে। আমরা চাই অন্যান্য বৃত্তবানরা এখানে সহযোগিতার হাতটি বাড়ালে তারা প্রতিদিন এই সেবাটি পাবেন।’
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড