মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
বিগত বছরগুলোতে ধানের ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় বোরো চাষকে ঘিরে মাঠে মাঠে উৎসব শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরো ধানের ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। গত বছর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে আরও উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে বোরো আবাদের ফলে বোরো আবাদে এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাম্পার ফলনের আশা করছেন নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সরেজমিনে সদর উপজেলার মহিষাশুরা, ভাটপাড়া, আসমান্দীর চর, গণের গাঁও, কলাকান্দা, শিলমান্দী, গদাইরচর, নূরালাপুর, কাঠালিয়া, শিমুলের কান্দি, চৌদ্দপাইকা, পাইকারচর, বালুসাইর, করিমপুর, নজরপুর ও আলোকবালীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিষাণ-কিষাণীরা।
ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে জমি চাষাবাদ ও মইয়ের কাজ। কোথাও কোথাও গভীর নলকূপ,ডোবা ও নদীতে পাম্প স্থাপন করে জমিতে পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে। তবে চলতি বছরে বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকায় সেচ পাম্পের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেক কৃষকরা।
কাক ডাকা ভোরে শরীরে হালকা শীতের পোশাক, মাথায় গরম কাপড় পড়ে বীজতলা থেকে ধানের চারাগাছ তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন শ্রমিকেরা। কেউ জমিতে হাল চাষ করছেন, কেউ জমির আইলে কোদাল দিয়ে কোপাচ্ছেন। কেউ আবার জৈব সার দিতে ব্যস্ত। কেউ আবার সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ বা পাম্পের জন্য ঘর তৈরি করছেন। অনেকে তৈরি জমিতে পানি সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। কেউ আবার বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে তা রোপণের জন্য মাথায় করে জমিতে নিয়ে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বোরো ধান রোপণের আনন্দে মেতে রয়েছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। নরসিংদীর সর্বত্রই বোরো আবাদের উৎসব বিরাজ করছে।
মহিষাশুরা এলাকার বোরো চাষি হেলাল উদ্দিন বলেন, গত বছর বোরো চাষ করে ভালো দাম পেয়েছিলাম। এবারও সেই আশায় সাড়ে সাত বিঘা জমি বোরো ধান রোপণের জন্য প্রস্তুত করেছি। দুই তিন দিনের মধ্যেই ধান রোপণের কাজ শেষ করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
গণেরগাও এলাকার বোরো চাষি জয়নাল বলেন, গত মৌসুমে উফসী ও হাইব্রিড জাতের বোরো রোপণ করেছিলাম। ধানের ফলন ও বাজার মূল্য ভালো থাকায় ভালো মুনাফা হয়েছে। শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি হওয়ায় স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলে এ বছর বোরো ধান রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করছি।
নাগরিয়া কান্দি এলাকার ফিরোজ মিয়া বলেন, কোল্ড ইনজুরির কারণে বীজ তলার অনেক চারা নষ্ট হয়ে গেছে। কোল্ড ইনজুরি থেকে চারা রক্ষার্থে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে বীজতলার চারা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপণ করতে পারব।
করিমপুর এলাকার শুক্কুর আলী বলেন, বর্গা নিয়ে গত বছর ৮ বিঘা জমিতে বোরে ধান রোপণ করে বেশ লাভবান হয়েছিলাম। জমি চাষাবাদ ও সারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবছর মাত্র ৩ বিঘা জমি বোরো রোপণের জন্য প্রস্তুত করছি।
নিজের জমি না থাকায় অন্যের জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি কিন্তু শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী চরের ফসলী জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। এর ফলে জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে দ্রুত কৃষি জমি কমে যাচ্ছে।
তাছাড়া শ্রমিকের মজুরি ও কৃষি সামগ্রীর লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে কৃষিকাজে মানুষ উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে বলেও জানান তিনি।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে আগত বোরো শ্রমিক হেমায়েত উল্লাহ বলেন, করোনা মহামারির কারণে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আমার বড় ছেলেকে হারিয়ে ফেলেছি। তার মৃত্যুতে আমাদের পরিবারে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে তাই পরিবারের সবার মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে ঘন কুয়াশা ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে এই এলাকায় বোরো ধান লাগাতে এসেছি। এখানে আমাদের এলাকার তুলনায় পারিশ্রমিক অনেক বেশি পাওয়া যায়। ধান রোপণ করে একেকজন শ্রমিক দৈনিক ৪ থেকে ৫ শত টাকা মজুরি পাই।এতে কোনো রকম সংসার চলে যায়।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ড. মাহবুবুর রশিদ বলেন, ধানের ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। নরসিংদী জেলায় বিরি ধান ৮৮,৮৯,৯২ ও বঙ্গবন্ধু ১০০ প্রজাতি ধানের আবাদ বেশী হয়। তাছাড়া বোরো হাইব্রিড ও স্থানীয় প্রজাতির বোরোর আবাদ ও হচ্ছে।
বোরো আবাদের জন্য চলতি বছরে ৫৬ হাজার ৬ শত ৫০ হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এখন পর্যন্ত মোট লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৪৫ ভাগ হারে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৪ শত ৯২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। বোরো ধান রোপণের মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদের পাশাপাশি বাম্পার ফলনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড