এস এম মিজানুর রহমান মজনু, ভালুকা (ময়মনসিংহ)
চোখে পড়ে ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার ইজিবাইক-সিএনজি সারি সারি করে দাঁড়িয়ে থাকে মহাসড়কে। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার করছে হাজারো মানুষ। তবে ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় সড়কটি পারাপার হতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছেন অনেকে। যানজট ও সড়ক পারাপারে ঝুঁকি এড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও মানছেন না সাধারণ জনগণ, অটোরিকশা ও সিএনজির চালকেরা।
বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক চারলেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। এ সড়কের ডিভাইডারের উপর দিয়ে ভালুকা থানার মোড়ে আসা-যাওয়া করে মাদরাসার, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী, পোশাক কারখানার শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন মানুষের চলাফেরা। তবে ফুটওভার ব্রিজ না থাকার ফলে ঝুঁকি নিয়েই সড়কের একপাশ থেকে অন্যপাশে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের।
ঢাকা হতে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে ভালুকা খীরু নদী ব্রিজ। এ ব্রিজের পূর্ব পাশে ভালুকা হাইওয়ে থানা ও পশ্চিমে ভালুকা মডেল থানা, ভালুকা বাজার, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পোস্ট অফিস, ভালুকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হালিমুন্নেছা চৌধুরানী মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থাকায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও থানার মোড় মহাসড়ক পারাপার করতে হচ্ছে ভালুকা সদর ইউনিয়ন, রাজৈ ইউনিয়ন, বিরুনিয়া ইউনিয়ন ও ভালুকা পৌরসভার বেশিরভাগ মানুষদের।
সরেজমিনে থানার মোড় এলাকায় ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, থানার মোড় চারলেন সড়কের দুই পাশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজি, যাত্রীবাহী মিনি বাস ও পিকআপসহ বিভিন্ন দ্রুতগামী যানবাহন থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করে। এতে প্রায়ই যানজট ও দুর্ঘটনা শিকারও হচ্ছেন অনেকে মানুষ। তবে বিকল্প ব্যবস্থা ও ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি জেনেও পায়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
গত এক বছরে চারলেন মহাসড়ক থানার মোড় এলাকায় বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ভালুকা সদর ইউনিয়নের খারুয়ালী গ্রামের আব্দুল হামিদ পাঠান, রাজৈ ইউনিয়নের পাইলাব গ্রামের মো. মোক্তার হোসেন, টঙ্গীর মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাজারের এক নারীসহ কয়েক জনের প্রাণহানি এবং হাত, পা ভেঙেছে শাহ মো. তোফাজ্জল হোসেন, কেরামত ফকির, আয়েশা বেগম, আব্দুস সালাম শেখ ও হুমায়ুন পাঠানসহ আরও অনেকেই আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে স্থানীয়রা মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার বলাবলি করেও কোন সুরাহা পাচ্ছে না বলে জানান ওই স্থানীয়রা।
বাজার করতে আসা ভালুকা সদর ইউনিয়নের মিরকা গ্রামের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, থানার মোড় পশ্চিমে ভালুকা বাজার রোড ও পূর্বে পাশে বিরুনিয়া-পনাশাইল রোড এবং মহাসড়কে উঠতে সামনে রাস্তা দাড়িয়ে বেরিকেট করে রাখে অনেক থ্রি-হুইলার ইজিবাইক। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা শিকার হতে হয়। আমি প্রতিদিন আসা-যাওয়া করি, তবে ফুটওভার ব্রিজ না থাকার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সড়ক পারাপার করতে হয়।
ভালুকা বাজার ব্যবসায়ী মো. শহীদুল্লাহ শেখ জানান, থানার মোড়ের সামনে ভালুকা বাজারে যাওয়ার রাস্তাটি প্রায় ১৪-১৫ ফুট গভীর ঢালে উঠতে গেলেও উঠা যায় না। কারণ ঢালের মুখে স্টেশন বানিয়ে রেখেছে অটোরিকশার চালকেরা। তারা নিয়ম না মেনে তাদের নিজেদের মতো করে গাড়ি যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা-নামা করার ফলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
ব্যবসায়ী আরও বলেছেন, থ্রি-হুইলার ইজিবাইক সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুলিশকে ম্যানেজ করে চলেছে মহাসড়কে। এ সড়কের দুই পাশে থানার মোড় এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজি। এতে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে এবং আমি নিজেও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি।
ভালুকা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জ্বালাল উদ্দিন পাঠান জানান, গত ২০২২ সালের ২৫ জুন রাতে আমার ভাগিনা আব্দুল হামিদ পাঠান ভালুকা বাজার হতে খারুয়ালী যাওয়ার উদ্দেশ্যে থানার মোড় মহাসড়ক পার হওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এরকম সড়ক পারাপার করার সময় রোড এক্সিডেন্টে বেশ কয়েকজন মারা গেছে। আর বেশিরভাগ থানার মোড় আশ-পাশে এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজি দাঁড়িয়ে থাকার কারণে প্রতিনিয়তই বেড়েই চলছে দুর্ঘটনা।
ভালুকা উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ গোলাপ জানান, মিরকা গ্রামের শাহ মো. তোফাজ্জল হোসেন ভালুকা বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে থানার মোড় গাড়ি এক্সিডেন্টে হাত-পা ভেঙে এখন বাড়িতে অসহায় জীবনযাপন করছে আমার দলীয় ভাই। এর কিছুদিন পর আমার চাচা একই স্থানে আশকা গ্রামের আব্দুস সালাম শেখ বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে রোড এক্সিডেন্টে পা ভেঙে বাড়িতে পঙ্গুত্ব জীবনযাপন করছেন।
তিনি আরও বলেন, চারলেন সড়কের পশ্চিমে থানা, বাজার, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পোস্ট অফিস, হাসপাতাল, হালিমুন্নেছা চৌধুরানী মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও ভূমি অফিস রয়েছে। এইসব প্রতিষ্ঠান থাকায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও থানার মোড় মহাসড়ক পারাপার করছেন তিন ইউনিয়ন ও পৌরসভার বেশিরভাগ মানুষ। আর থানার মোড় সড়ক পারাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য, পুলিশ প্রশাসন ও মহাসড়কের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ সকলের দৃষ্টিগোচরের জন্য অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে ভালুকা হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক মো. রিয়াদ মাহমুদ দৈনিক অধিকারের কাছে জানান, আমরা থানার মোড় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার ইজিবাইক ধরতেছি। যানজট ও সড়ক পারাপারে ঝুঁকি এড়াতে খীরু নদী ব্রিজের নিচ দিয়ে মানুষের চলাচলের রাস্তা হচ্ছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড