রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ)
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত বিঘা জমির পেঁয়াজচারা মরে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। লাল তীর মনে করে ভারতীয় পেঁয়াজের দানা ক্রয় করে চাষিরা এমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
স্থানীয় খোলাবাজার থেকে এসব পেঁয়াজের দানা ক্রয় করেছিলেন বলে একাধিক চাষি জানান। যদিও কৃষি অফিস বলছে, আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় এমনটি হয়েছে।
পেঁয়াজ কৃষকদের অন্যতম অর্থকরী ফসল। এ জন্য এটি বেশি চাষ করে থাকেন কৃষকরা। এই ফসল মাঠ থেকে সংগ্রহের পর বেশি দামের আশায় চাষিরা মজুদ রেখে সুবিধামতো সময়ে বিক্রি করেন, আবার কেউ কেউ অল্প অল্প করে বাজারে এনে বিক্রি করে দৈনন্দিন চাহিদা মেটায়। তাই পেঁয়াজ চাষের গুরুত্ব চাষিদের কাছে সব সময়ই বেশি।
ক্ষুদ্র চাষিরা বিভিন্ন সমিতি থেকে লোন নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করে থাকে। এবার বুঝে উঠতে না পেরে নিম্নমানের ভারতীয় চারা লাগিয়ে এখন ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া, বিজুলিয়া, নওপাড়া, দামুকদিয়া ও মাধবপুর; ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের ধাওড়া, বকদিয়া, খাসবকদিয়া ও কুশবাড়িয়া গ্রাম; হাকিমপুর ইউনিয়নের হরিহরা, সাধুহাটি ও ররিয়া গ্রাম; নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়নের আশুরহাট, বাগুটিয়া, সাবাসপুর, বুড়ামারা ও বকশীপুর; দুধসর ইউনিয়নের ফলিয়া, নাকোইল, ভাটই; আবাইপুর ইউনিয়নের যুগনী, বাগনী, মীনগ্রাম, ব্যাসপুর, বগুড়া ইউনিয়নের শিতালী, দলিলপুর ও আওদা; দিগনগর ইউনিয়নের সিদ্দি, ইতালি, আগুনিয়াপাড়া, দেবতলা ও হারুনদিয়া; উমেদপুর ইউনিয়নের বারইপাড়া, ব্রাহিমপুর, রয়েড়া ও বিএলকে গ্রামের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ চারা মরে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।
কোনো কোনো জমির পেঁয়াজ চারায় শিকড় গজায়নি। যার ফলে অল্পদিনেই পেঁয়াজ চারা সোজা হতে না পেরে লাল হয়ে মরে যাচ্ছে।
খাসবকদিয়া গ্রামের কৃষক আয়ুব আলী বলেন, ৬০ শতক জমিতে লাল তীর কিং মনে করে প্রতি কেজি ৫ হাজার টাকা দরে ৫ কেজি পেঁয়াজের দানা বপন করি। চারা একটু বড় হলে সেগুলো মাঠে লাগানোর কিছুদিনের মাথায় লাল হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এখন শুনছি এগুলো লাল তীর কিং- এর বীজ নয়, এগুলো ভারতীয় বীজ। চিন্তায় এখন ঘুম হচ্ছে না।
ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের খাস বকদিয়ার আরেক পেঁয়াজ চাষি মুকুল মণ্ডল বলেন, ধাওড়া গ্রামের মো. জিলানীর কাছ থেকে ৩ কেজি পেঁয়াজ দানা ক্রয় করে বীজ বপন করি। পরবর্তীকালে তা দিয়ে ১২০ শতক জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করি। এখন আমার পেঁয়াজ চারা মরে গেছে। আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, এখন আমি কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
মনোহরপুর ইউনিয়নের বিজুলিয়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, সমিতি থেকে লোন করে কয়েক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম, এখন সব পেঁয়াজ চারা মরে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে অনেক টাকা খরচ করে ফেলেছি। ভেবেছিলাম পেঁয়াজ বিক্রি করে লোন পরিশোধ করব; কিন্তু এখন আর তা হলো না। সংসার চালানো এখন কঠিন হয়ে গেল। পেঁয়াজ বীজ বিক্রেতা উপজেলার ধাওড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. জিলানী বলেন, পেঁয়াজের দানা কিনে এনে আমরা বিক্রি করি। এবার কী কারণে এমন হলো তা বলতে পারব না। এমনতো হওয়ার কথা নয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিসউজ্জামান বলেন, আমাদের দেশে ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পেঁয়াজ চাষের জন্য অনুকূল হলেও এবার এই মৌসুমে শীতের কারণে সব সময় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা ছিল। অনেক সময় জিপসাম সারের ঘাটতি, সেচ কম-বেশি হওয়া, অতিরিক্ত শীত ও কিছু কিছু নিম্ন মানের বীজের কারণে এমনটি হতে পারে।
উল্লেখ্য, চাষিদের ভয়ে পেঁয়াজদানা বিক্রেতারা পলাতক রয়েছেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড