শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, স্টাফ রিপোর্টার (কক্সবাজার)
কক্সবাজারে দেশের বৃহৎ বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র টারবাইন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জমির মালিকরা। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অবৈধভাবে দখল করে নির্মাণ কাজ পরিচালনা, হুমকি ও মাটি ভরাট করে লবণ চাষের জমি নষ্ট করার অভিযোগে আদালতে মামলাও দায়ের করে ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছেন আদালত।
যদিও আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি কোম্পানি নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখে।
আজ রবিবার দুপুরে (৮ জানুয়ারি) জমির মালিকদের বাধার মুখে কাজ বন্ধ রেখে চলে যান কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগে ভুক্তভোগীরা পৈত্রিক জমি রক্ষা, নিজেদের নিরাপত্তা এবং সৃষ্ট জটিলতার প্রতিকার চেয়েছেন।
জানা যায়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে দেয়া হচ্ছে বাড়তি মনোযোগ। তারই প্রেক্ষিতে সৌরবিদ্যুতের পর বায়ু শক্তিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে এবার দেশের বৃহৎ বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে কক্সবাজারে।
৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগে। ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি কোম্পানি নির্মাণ করছে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
অনুসন্ধান ও কাগজ-পত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকা কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়া এলাকার বাসিন্দা ছালেহ আহমদের ছেলে মো. আরাফাতুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গত ১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগে বলা হয়- ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেড কোম্পানির অধীনে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের নামে তোতকখালী মৌজার ১.১৩ একর বিরোধীয় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অপচেষ্টা, জমি জবর দখলের অপতৎপরতায় লিপ্ত আছে।
ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে এসব নির্মাণ কাজের বিরুদ্ধে বাধা দিলে কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন মিথ্যা মামলা, হত্যাসহ নানা ধরণের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ।
অবৈধভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল নিয়ে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং সিনিয়র সহকারী জজ আদালত কক্সবাজার সদরে পৃথক দুইটি মামলাও করা হয়েছে ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেড কোম্পানির লোকজনের বিরুদ্ধে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, দায়েরকৃত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজার সদরের সিনিয়র সহকারী জজ আদালত থেকে গত ২৮ নভেম্বর ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আমির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেন। নোটিশে আমির হোসেনকে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি সশরীরে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
অপর দিকে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পৃথক আরেকটি মামলায় বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন দিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কক্সবাজার সদরকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসিকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ওসির পক্ষে এএসআই সরোজ বড়ুয়া স্বাক্ষরিত একটি লিখিত নোটিশ উভয় পক্ষকে দিয়েছেন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার এএসআই সরোজ বড়ুয়া বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিরোধপূর্ণ জায়গায় যাতে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা না হয় তার জন্য আমরা কাজ করছি।
রবিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্পের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ৩০ জন বিদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। ইতোমধ্যে ৮টি উইন্ড টারবাইন দৃশ্যমান হয়েছে। আরেকটি টারবাইন নির্মাণ কাজ রবিবার দুপুরে বন্ধ করে দিয়েছে জমির মালিকরা।
এ সময় প্রকল্পের জন্য অবৈধভাবে জমি দখলে নেওয়ায় অন্তত ১০ জন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে কথা হয়।
তাদেরই একজন আরফাতুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, আমাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল করে ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি কোম্পানি বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের নামে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি তারা বিভিন্নভাবে আমদেরকে হুমকিও দিচ্ছেন। তাই ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেড কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগের পাশাপাশি মামলাও দায়ের করেছি।
আরফাতুল ইসলাম আরও বলেন, আমাদের জমির উপর কাজ করায় নির্মাণাধীন একটি টারবাইন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।
ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেডের কক্সবাজারে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্থানীয় কিছু মানুষ অতিরিক্ত জমি কেনার জন্য আমাদেরকে চাপ দিচ্ছেন, না কেনায় তারা নানা সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, জমির মালিকরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে শুনেছি। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কোন কপি আমরা পায়নি। জমি নিয়ে জটিলতার বিষয়টি কোম্পানির লিগ্যাল অ্যাডভাইজররা দেখছেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ বলেন, জমি বেচা-কেনার বিষয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান এবং জমির মালিকের। তারপরও বিষয়টি নিয়ে কেউ জেলা প্রশাসনের কাছে আসলে আমরা দেখব। তবে প্রকল্পটি কক্সবাজার তথা দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গণি বলেন, আমরা শুধু টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছি। জমি নিয়ে জটিলতার বিষয় নিয়ে ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেডের লোকজনই ভালো জানতে পারবে। এরপরেও আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুস্কুলে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ একর জমির উপর নির্মিত হচ্ছে ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প। এই বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় খুরুশকুল, পিএমখালী ও চৌফলদন্ডি ইউনিয়নে মোট ২২টি উইন্ড টারবাইন ১১০ মিটার লম্বা টাওয়ারের ওপর স্থাপন করা হচ্ছে। এর পাখাগুলো বাতাসের শক্তিতে ঘুরে বায়ুশক্তিকে বিদ্যুতে পরিণত করবে। বাতাসের বিপরীতে এগুলি অনেকটা বিমানের ডানার মতো কাজ করে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান- ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেড চীনা প্রতিষ্ঠান- এসপিআইসি উইলিং পাওয়ার কর্পোরেশনের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড