মো. আকাশ, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নিজের টাকা ও ব্যাংক লোণে নির্মিত এক মুক্তিযোদ্ধার ৩ তলা বাড়ি দখলে নেয়ার জন্য হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে নাসিক ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বডিগার্ড ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। তবে অভিযুক্তরা বলছেন- ভুক্তভোগী মাহবুব এনামুল হক তার মেয়ে জামাইয়ের ভাইদের সম্পত্তি জোরপূর্বক ভোগ করছেন।
বিভিন্ন অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৪ সালে সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ১নং ওয়ার্ডের পাইনাদী নতুন মহল্লা জমি ক্রয় করেন তিন ভাই নূর নবী, নুরুল ইসলাম, নূরে আলম। তাদের বড় ভাইয়ের শ্বশুর অভিযোগকারী মাহবুব এনামুল হককে ভরসা করে দায়িত্ব দেন বাড়ির কাজের জন্য। পরবর্তীকালে ২০০৮ সালে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করে এনামুল ও তার মেয়ের জামাই নুরুল ইসলাম। তারপর থেকে এখন অবধি তিনি বাড়ির ভাড়া ভোগ করে আসছে। অংশীদার হিসেবে ছোট দুই ভাইয়ের সম্পত্তি না দিয়ে জামাই ও শ্বশুর দখল করে খাচ্ছেন বলে জানান ছোট ভাইদের পরিবার।
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব এনামুল হক বলেন, আমার কোনো এক প্রতিপক্ষের পক্ষ নিয়ে কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের বডিগার্ড মাসুদ রানা, রিপন ও আমির ফয়সালসহ ৪-৫ জন সন্ত্রাসী আমার বাড়ি দখল ও আমার বাড়ির ভাড়াটিয়াদের ভাড়া তাদেরকে দিতে বলে। এসময় সন্ত্রাসীরা আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। এতে আমি চরম নিরপত্তাহীনতায় ভুগছি।
একই সময় তারা ঐ বাড়ির ভাড়ার টাকা মুক্তিযোদ্ধাকে না দিয়ে প্রতিমাসে তাদের হাতে দেয়ার জন্য হুমকি দেয় ভবনের ভাড়াটিয়াদের। আমি থানায় অভিযোগ করেছি।
এ বিষয়ে নুরুল ইসলামের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী আয়েশা আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মাহবুব এনামুল আমাদের ভাশুরের শ্বশুর হয়।তিনি দীর্ঘদিন যাবত আমাদের অংশের সম্পত্তি জোরপূর্বক ভোগ করে আসছে। আমার স্বামী ও তার ভাইরা মিলমিশে জমি ক্রয় করে তাদের টাকায় বাড়ি নির্মাণ করেছে। আমার স্বামীসহ ভাইরা দেশের বাহিরে থাকায় বাড়ির করার সময় টাকার প্রয়োজন পড়ায় এনামুল সাহেবকে পাওয়ার দিয়েছিলেন। তবে ব্যাংকের টাকা পরিশোধের জন্য আমার স্বামী প্রতি মাসে ৮০- ১লাখ টাকা তার একাউন্টে পাঠাতেন এবং আমি আর আমার মেজ ভাবি ১০ হাজার করে টাকা দিতাম তাকে।
তিনি আরও বলেন, তিনি আমাদের টাকাগুলো ব্যাংকে না দিয়ে নিজের কাজে ব্যবহার করেছেন। গত নভেম্বর মাসে এনামুল হকের বিরুদ্ধে আমরা থানায় অভিযোগ করেছিলাম। এবং কোর্টে আমাদের মামলা চলমান ছিল। আমরা রায় ও পেয়েছি। পরে কোর্ট ব্যাংককে দায়িত্ব দিয়েছেন আমাদের। ১৪ বছর যাবত তিনি আমাদের জায়গায় দখল করে খেয়ে যাচ্ছে। মূলত তিনি সম্পত্তির কিছুই না আমার স্বামীসহ তিন ভাইয়ের সম্পত্তি এটা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা বাড়ি দখল কেনো করতে যাব। এনামুল হক সাহেব তার মেয়ের জামাইয়ের ভাইদের সম্পত্তি জোরপূর্বক ভোগ করায় তাদের পরিবার কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সেক্ষেত্রে কাউন্সিলরের হয়ে আমরা ভাড়াটিয়াদের বলে আসছি যে আপনারা ব্যাংকের লোকজনকে দিবেন। এনামুল সাহেবকে নয়। এইটুকুই শুধু।
আরেক অভিযুক্ত আমির বলেন, আমরা শুধু ভাড়াটিয়াদের বলতে গিয়েছি যে ভাড়া ব্যাংকের লোকজনকে দিতে। তাদের হুমকি দিতে যাইনি।
নাসিক ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম বলেন, আমাদের ব্যাপার এসব অপপ্রচার চালানোর কারণে মানহানির মামলা করবো।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান মানিক জানান, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ভীতসন্ত্রস্ত ঐ মুক্তিযোদ্ধা গতকাল সোমবার (২ জানুয়ারি) সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব এনামুল হক (মুক্তি নং-০১৩০০০০১৫৪০) সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ১ নং ওয়ার্ডের পাইনাদী নতুন মহল্লা এলাকায় ৩ তলা একটি বাড়ি নির্মাণ করে। ঐ বাড়ির তিন তলায় তিনি বসবাস করেন এবং প্রথম ও দ্বিতীয় তলা ভাড়া দেন। সোমবার দুপুরে নাসিক ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের বডিগার্ড মুল্লুক চাঁনের ছেলে মাসুদ ওরফে মাল্টিপারপাস মাসুদ, আলী বক্সের ছেলে আমির ফয়সাল, হাজী কাশেমের ছেলে রিপনসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জন সন্ত্রাসী ঐ বাড়িতে যায়। সে সময় তারা ঐ বাড়ি অচিরেই তারা দখল করার হুমকি দিয়ে তাদেরকে প্রতিমাসে ভাড়ার টাকা প্রদানের জন্য ভাড়াটিয়াদের নির্দেশ দেন।
ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ (নং-৩৩) দায়ের করেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড